অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী বহু সমস্যার পরিত্রান

প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর গুনের কোনো সীমা পরিসীমা নেই। রাস্তাঘাটে কিংবা বাজারে খুবই সহজলভ্য এটি। রস হিসেবে খাওয়া যায় আবার ত্বকের প্রদাহে প্রতিষেধক হিসেবেও লাগানো যায়। অ্যালোভেরার পুরু পাতার ভেতরে রয়েছে জেল, যা অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ যাতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিন-এ, বি৬ ও বি২ ইত্যাদি, যা স্বাস্থ্যরক্ষার বিভিন্ন কাজে লাগে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর অ্যালোভেরা দেহপ্রতিরোধ উজ্জীবিত করে। অ্যালোভেরা হজমশক্তি বাড়ায়, এতে আছে সক্রিয় এনজাইম, যা চর্বি ও চিনি পরিপাক করে, পুষ্টিকণার শোষণ বাড়ায়।

সৌন্দর্য বর্ধনে ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার হয়ে আসছে সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই। আয়ুর্বেদ বলুন আর ইউনানি – ভেষজ উদ্ভিদের জয়জয়কার সর্বত্র! আমাদের খুব পরিচিত ঘৃতকুমারী এমনই একটি গুণী উদ্ভিদ। ঘৃতকুমারীকে বেশীর ভাগ মানুষ অ্যালোভেরা নামেই চেনেন। ঔষধি এই ভেষজের নানা গুণের কথা পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলের মানুষের জানা। শরীরে নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে আর অসুখ-বিসুখ সারিয়ে তুলতে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী অতুলনীয়। এই উদ্ভিদ খাদ্য-পানীয় হিসেবে যেমন কার্যকর তেমনি তা বাহ্যিকভাবেও ব্যবহারযোগ্য। ঘৃতকুমারীর রস পান করে, সালাদ হিসেবে খেয়ে এবং ত্বক ও চুলে ব্যবহার করে আপনিও দারুণ উপকৃত হতে পারেন। ঘৃতকুমারীর কিছু অনন্য উপকারিতার কথা তুলে ধরা হলো।

হার্ট ও দাঁতের যত্নে

অ্যালোভেরার জুস কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখে। এটি দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে দেয় এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও অ্যালোভেরা জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথা ও ইনফেকশন নিবারণে সহায়তা করে।

ভিটামিন ও খনিজ

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজের এক সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন-এ, সি, ই, ফলিক অ্যাসিড, কোলিন, বি-১, বি-২, বি-৩ (নিয়াসিন) ও ভিটামিন বি-৬ এর দারুণ উৎস এটা। অল্পসংখ্যক উদ্ভিদের মধ্যে ঘৃতকুমারী একটি যাতে ভিটামিন বি-১২ আছে। প্রায় ২০ ধরনের খনিজ আছে ঘৃতকুমারীতে। এর মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, কপার ও ম্যাংগানিজ।

চাপ ও রোগ প্রতিরোধ

ঘৃতকুমারী দারুণ অ্যাডাপ্টোজেন। শরীরের প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে বাহ্যিক নানা চাপ ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালনকারী উপাদানকে অ্যাডাপ্টোজেন বলা হয়ে থাকে। ঘৃতকুমারী দেহের অভ্যন্তরীণ পদ্ধতির সঙ্গে মিশে গিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও সক্রিয় করে তোলে এবং দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে। শারীরিক ও মানসিক চাপ মোকাবিলার পাশাপাশি পরিবেশগত দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেহকে সুরক্ষা দিতে পারে ঘৃতকুমারী।

হজমে সহায়ক

হজমের সমস্যা থেকেই শরীরে অনেক রোগ বাসা বাঁধে। তাই সুস্বাস্থ্যের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে খাবার-দাবার পরিপাক বা হজমের প্রক্রিয়াটি ঠিকঠাক রাখা। পরিপাক যন্ত্রকে পরিষ্কার করে হজম শক্তি বাড়াতে ঘৃতকুমারী অত্যন্ত কার্যকর। ঘৃতকুমারীর রস পান করার দারুণ ব্যাপার হলো এটা কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়ারিয়া দুই ক্ষেত্রেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। পরিপাক ও রেচন যন্ত্রকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মুক্ত রাখে বলে ঘৃতকুমারীর রস পান করলে পেটে ক্রিমি হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না, কিংবা ক্রিমি থাকলেও সেটা দূর হয়।

দূষণ মুক্তি

ঘৃতকুমারীর রস খুবই আঠালো। এমন উদ্ভিদের আঠালো রস পানের একটা দারুণ ব্যাপার হলো খাদ্যনালীর ভেতর দিয়ে দেহের ভেতরে প্রবেশের সময় থেকেই পুরো পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করতে করতে যায়। এই রস দেহের অভ্যন্তরীণ নানা টক্সিন বা দূষিত উপাদান শুষে নিয়ে মলাশয় দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে দেহকে ভেতর থেকে দূষণ মুক্ত করতে ঘৃতকুমারীর তুলনা নেই।

অ্যালক্যালাইন সমৃদ্ধ

সুস্বাস্থ্যের জন্য খাবার-দাবারে অ্যালক্যালাইন সমৃদ্ধ খাদ্য ও অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ৮০/২০ বা ৮০ ভাগ অ্যালক্যালাইন সমৃদ্ধ খাবার ও ২০ ভাগ অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদেরা। ঘৃতকুমারী এমন খাবার যা অ্যালক্যালাইন তৈরি করে। কিন্তু আজকাল নগরজীবনে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে প্রায়শই অ্যাসিডের সমস্যায় ভুগতে হয়। ফলে অতিরিক্ত অ্যাসিডের ভোগান্তি থেকে বাঁচতে মাঝে মধ্যে ঘৃতকুমারী খান।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে

যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত অ্যালোভেরা রস খেলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে আনতে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

ঘৃতকুমারী খাদ্য-পানীয় হিসেবে যেমন কার্যকর তেমনি তা বাহ্যিকভাবেও ব্যবহারযোগ্য।

চুলের যত্নে

চুলের শুষ্ক ভাব এবং ত্বকে চুলকানি দূর করার জন্য অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারবেন। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান চুল পড়া ও খুশকির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। তাই অ্যালোভেরা রসের সঙ্গে আমলকীর রস মিশিয়ে চুলে লাগালে এতে চুলের উজ্জ্বলতাও বেড়ে যাবে।

ত্বকের মহৌষধ

আধুনিক প্রসাধনী সামগ্রীর অন্যতম কাঁচামাল এই অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী। ত্বকের জন্য এটা দারুণ উপকারী। এটা ত্বকের নানা ক্ষত সারিয়ে তুলতে কার্যকরী। রোদে পোড়া, ত্বকে ফুসকুড়ি পড়া ও পোকার কামড়ের মতো বাহ্যিক সমস্যাগুলো সারিয়ে তুলতে পারে সহায়ক এটা। এমন বাহ্যিক ক্ষতে ঘৃতকুমারীর রস মাখলেও ব্যথার উপশম হবে, কেননা বেদনানাশক হিসেবেও এটা অতুলনীয়।

অ্যামাইনো ও ফ্যাটি অ্যাসিড

মানব দেহের নানা প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড। এমন ২২টি অ্যামাইনো অ্যাসিডকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, এর মধ্যে ৮টিকে অত্যাবশ্যক। ঘৃতকুমারীতে শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক এই ৮টি অ্যামাইনো অ্যাসিডই আছে। আর এতে মোট অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে ১৮ থেকে ২০ ধরনের। এ ছাড়া নানা ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডেরও দারুণ উৎস এই ঘৃতকুমারী।

প্রদাহ ও ব্যথা কমায়

শরীরে নানা ধরনের প্রদাহ দূর করতে খুবই কার্যকর ঘৃতকুমারী। এতে বি-সিসটারোল সহ এমন ১২টি উপাদান আছে যা প্রদাহ তৈরি হওয়া ঠেকায় এবং প্রদাহ হয়ে গেলে তা কমিয়ে আনে। ঘৃতকুমারীর এই সব গুণ হাত-পায়ের জোড়ার জড়তা দূর করে এবং গিঁটের ব্যথা কমাতেও সহায়তা করে।

ওজন কমাতে সহায়ক

খাবার-দাবার হজমে সহায়তা এবং শরীরকে দূষণমুক্ত করার মধ্য দিয়ে ঘৃতকুমারী আপনার স্বাস্থ্যের যে প্রাথমিক উন্নতি ঘটায় তার অবধারিত ফল হলো ওজন ঠিকঠাক থাকা। এমনিতে ওজন কমানো নিয়ে অনেক সমস্যায় থাকলেও নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস পান করলে আপনার ওজনের সমস্যা অনেক কমে আসবে। এ ছাড়া শরীর দূষণমুক্ত রাখতে পারার কারণে আপনার কর্মশক্তি বেড়ে যাবে, এ কারণেও আপনার ওজন কমবে।

এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।