কুচিয়া

কুচিয়া থেকে নার্সারী ও চাষ পুকুর রক্ষার কৌশল

যারা নার্সারি খামারী অর্থাৎ রেনু থেকে পোনা উৎপাদন করে থাকেন তাদের জন্য এই লিখাটা খুবই উপকারী হতে পারে বিশেষ করে যারা বিল সংলগ্ন খামার গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়াও যারা বিল সংলগ্ন চাষ পুকুর আছে অথবা বিলকে পুকুর বানিয়েছেন তাদের জন্যও এই লিখাটা উপকার হতে পারে।

কুচিয়া কিভাবে আমাদের ক্ষতি করে থাকে

প্রথমত নার্সারি পুকুরের কথা বলছি। নার্সারি পুকুর প্রস্তুতের সময় আমরা সাধারনত যা করে থাকি তা হলো প্রথমেই নেট দিয়ে চতুর্দিক থেকে ঘিরে গ্যাস টোপ বা রটেনন পাউডার দিয়ে অবাঞ্ছিত মাছ বা জলজ প্রাণী মেরে চুন দিয়ে নতুন পানি বা কিছু নতুন কিছু পুরাতন পানি মিশিয়ে সুমিথিয়ন বা হাঁস পোকা মারার ঔষধ দিয়ে মনের তৃপ্তি নিয়ে আমরা রেনু ছেড়ে থাকি। মনে মনে ভাবি পুকুরটা মন মত প্রস্তুত করলাম এবার রেনু ছেড়ে দিই। পুকুরে রেনু ছাড়লেন আর মন মতো ভালো মানের খাবার খাওয়ার পর আশানুরূপ প্রডাকশন পেলেন না। যেখানে ২ লাখ পোনা উৎপাদনের আশা করলেন সেখানে দেখা গেল উৎপাদন পেলেন মাত্র ৫০ হাজার। আর তখনি শুরু হয়ে যায় হ্যাচারী মালিকদের দোষারোপের পালা। মনে মনে অনেকেই ভাবেন হয়তো হ্যাচারীর মালিক ভালো মানের রেনু দেয় নাই অথবা রেনুর মাপ ভালো দেয় নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। অবশ্য সব হ্যাচারী মালিক ধোঁয়া তুলসীপাতা না। যাক এ বিষয় আলাপ করে লম্বা করছি না।

পোনার প্রডাকশন কম পাওয়ার অন্যতম একটা কারন হতে পারে এই কুচিয়া। রেনু পোনা ছাড়ার দিন থেকেই তার কাজটি সে করতে থাকে। ক্যাট ফিসের রেনু সাধারণত একটু আড়াল পছন্দ করে। সে কারন এরা কোন গর্ত বা কোন ছোট ঘাস পেলেই এরা লুকিয়ে থাকে। আর সেখানেই হয় যত বিপত্তি। গর্তের মধ্যে কুচিয়া মুখটা হা করে বসে থাকে রেনু যায় আর সে পরম আনন্দে খেয়ে সাবাড় করে। আমাদের স্বপ্নকে এক এক করে খেয়ে সাবার করতে থাকে। অবশেষে একজন খামারীর স্বপ্ন ভংগ হয়। মৌসুমের সময় চলে যায়। নিয়তিকে দোষ দিয়ে খামারীরা অবশেষে শান্ত হয়। কারণ পুকুর প্রস্ত্তুতিতে কোন ঘাটতি ছিল না। কিন্তু একটা জিনিস জেনে রাখা ভালো যে বিষ টোপ প্রয়োগে কালে ভদ্রে দুই একটা কুচিয়া মারা পরে। ৯৫% কুচিয়া নিজেকে বাচাতে পারে। কারণ কুচিয়া অবস্থান করে পানির উপর প্রান্তে পাড়ের পাশ্বে। যখন গ্যাস টোপ দেয়া হয় তখনই সে নিজেকে বাচানোর জন্য গর্তের উপরের দিকে চলে যায়। আবার সুবিধা মতো সময়ে সে পানিতে নেমে পরে। এটা শুধু যে নার্সারি পুকুরে ঘটে তা নয় এটা চাষের পুকুরেও ঘটে থাকে।

হ্যাচারী থেকে পোনা কিনে নিয়ে যখন একজন খামারী মাছ বড় করার জন্য চাষের পুকুরে দেন সেখানেও এই কুচিয়া এই বিপত্তি ঘটাতে থাকে। ২ লক্ষ পোনা মজুদ করে বিক্রির সময় অর্ধেক মাছও পাওয়া যায় না এরকম ঘটনা আজকাল হর হামেশাই ঘটছে। আর সব দোষ আসে হ্যাচারীর মালিকদের উপর। অবশ্য সবাই একরকম না। ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই কুচিয়া দুর করার একটা কৌশল অনেকদিন যাবত ব্যবহার করছি।

কুচিয়া দুর করার সহজ উপায়

আগে আমাদের জানতে হবে কুচিয়া পুকুরের কোন অংশে বাস করে? অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি পুকুরের পাড়ের নীচের অংশ যেখানে পানির উচ্চতা মিশে গেছে সেই পানির উপরি অংশের সমান্তরাল জায়গায় পাড়ের ভিতর পানির ২ ইঞ্চি থেকে ১ ফুট গভীরতায় বেশী বাস করে।কুচিয়া মারতে হলে প্রথমেই পুকুরের পানি ১ ফুট থেকে ১.৫ ফুট পানি কমাতে হবে। তাতে পুকুরের পাড়ের কুচিয়ার গর্তগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। সব গর্তই কিন্তু কুচিয়ার না। কাকড়ার গর্তও থাকে। তবে আপনাকে সব গর্তকে টার্গেট করে কাজ করতে হবে। তারপর প্রত্যেক গর্তের মুখটা ভেংগে একটু বড় করে অর্ধেক টা করে এলোমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট( গ্যাস ট্যাবলেট) গর্তে ভরে পানি দিয়ে ভরে দিতে হবে। তারপর গর্তের মুখ ভলো করে কাঁদা দিয়ে লেপে দিয়ে দিতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে ট্যাবলেট যেন গর্তের মধ্যে পানিতে মুক্ত অবস্থায় থাকে। কাদার নীচে যেন চাপা পড়ে না যায়। পুকুরের পাড়ের পাশাপাশি পুকুরের পানিতেও শতাংশ প্রতি ১ ফুট পানির জন্য ২ টি করে ট্যাবলেট দিতে হবে তাতেই দুর হবে ৯০-৯৫% কুচিয়া। মরে যাবে প্রায় সব কুচিয়া।এভাবে আপনি পুকুরকে কুচিয়ামুক্ত করতে পারেন সহজে।
লেখক: এ. কে. এম. নূরুল হক,
স্বত্বাধীকারী-ব্রহ্মপুত্র ফিস সীড কমপ্লেক্স (হ্যাচারি), শম্ভুগঞ্জ, ময়মনসিংহ
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।