লাম্পি রোগ

গরুর লাম্পি রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার

১৯২৯ সালে আফ্রিকার ‘জাম্বিয়া’ প্রথম অফিসিয়ালি শনাক্ত হওয়া এই রোগ ১৯৪৩ সাল থেকে ৪৫ সালের মধ্যে মহাদেশের বিস্তীর্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গরুর গায়ে প্রথমে পক্সের মতো বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো গায়। এই রোগে গরু মরে না। তবে রোগটি হয়ে ফোড়া ফেটে যাওয়ার পর ঘন ঘন ড্রেসিং না করলে এবং পশুর যত্ন না নিলে গরু মারা যায়। গরুর লাম্পি রোগ আসলে গরুর স্কীন রোগ বা চর্ম রোগ।

গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজের কারন হলো এলএসডি ভাইরাস। এলএসডি গরুর জন্য একটা ভয়ংকর ভাইরাস বাহীত চর্মরোগ যা খামারের ক্ষতির কারণ।

লাম্পি রোগের কারণ

মূলত এল এস ডি ভাইরাসের সংক্রমণের কারনে গবাদিপশুতে এই রোগ দেখা দেয় এবং এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। কারন এটি ছোঁয়াচে রোগ। লাম্পি ও গোট পক্স একই ধরনের রোগ।

লাম্পি রোগের সময়

সাধারনত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে অথবা বসন্তের শুরুতে যে সময়ে মশা মাছি অধিক বংশবিস্তার করে ঠিক সেই সময়ে প্রাণঘাতী এই রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।

লাম্পি রোগের লক্ষণ

এলএসডি আক্রান্ত গরু লক্ষণ শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে :
» আক্রান্ত গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবার রুচি কমে যায়।
» জ্বরের সাথে সাথে মুখ দিয়ে এবং নাক দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। সামনের দু’পায়ের মাঝ স্থান পানি জমে যায়।
» শরীরের বিভিন্ন জায়গা চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্ট হয়। ধারাবাহিকভাবে এই ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গা ছড়িয়ে পড়ে।
» ক্ষত মুখের মধ্যে, পায়ে এবং অন্যান্য জায়গা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
» ক্ষত স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে। শরীরে কোথায় ফুলে যায় যা ফেটে টুকরা মাংসের মতো বের হয়ে ক্ষত হয়, পুঁজ কষানি বের হয়।
» পাকস্থলী অথবা মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরু পানি পানে অনীহা প্রকাশ করে এবং খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।

লাম্পি রোগ কিভাবে ছড়ায়

লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে রোগটি অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগ এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান মাধ্যমগুলো হচ্ছে :
» মশা ও মাছি : এই রোগের ভাইরাসের প্রধান বাহক হিসাবে মশা মাছিকে দায়ী করা হয়। অন্যান্য কীট পতঙ্গের মাধ্যমেও ভাইরাসটি আক্রান্ত গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
» লালা : আক্রান্ত গরুর লালা খাবারের মাধ্যমে অথবা খামারে কাজ করা মানুষের কাপড়ের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়াতে পারে।
» দুধ : যেহেতু আক্রান্ত গাভীর দুধে এই ভাইরাস বিদ্যমান থাকে তাই আক্রান্ত গভীর দুধ খেয়ে বাছুর দুধ খেয়ে আক্রান্ত হতে পারে।
» সিরিঞ্জ : আক্রান্ত গরুতে ব্যবহার করা সিরিঞ্জ থেকে এই ভাইরাসবাহিত হতে পারে।
» রক্ষণাবেক্ষণকারী : খামারে কাজ করা মানুষের পোশাকের মাধ্যমে আক্রান্ত গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
» আক্রান্ত গরুর সিমেন : ভাইরাস আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেন এই রোগের অন্যতম বাহন, কারণ আক্রান্ত গরুর সিমেনেও এই ভাইরাস বিদ্যমান থাকে।
» শুধুমাত্র গরু মহিষ আক্রান্ত হয়, মানুষ হয় না।

প্রতিকারে কৃষক সচেতনতা ও করণীয়

যেকোন রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার সব সময় অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
» আক্রান্ত গরুকে নিয়মিত এলএসডি ভ্যাকসিন দেয়া। আমাদের দেশে ইতঃপূর্বে রোগটির প্রাদুর্ভাব কম দেখা গেছে তাই এই রোগের ভ্যাকসিন সহজলভ্য নয়।
» খামারের ভেতরের এবং আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যেন মশা মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
» আক্রান্ত খামারে যাতায়াত বন্ধ করা এবং আক্রান্ত খামার থেকে আনা কোনো সামগ্রী ব্যবহার না করা।
» আক্রান্ত গরুকে শেড থেকে আলাদা স্থানে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখা মশা মাছি কামড়াতে না পারে। কারণ আক্রান্ত গরুকে কামড়ানো মশা মাছি সুষ্ঠু গরুকে কামড়ালে এই রোগের সংক্রমণ হতে পারে।
» আক্রান্ত গভীর দুধ বাছুরকে খেতে না দিয়ে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দেয়া।
» আক্রান্ত গরুর পরিচর্যা শেষে একই পোশাকে সুষ্ঠু গরুর মধ্যে প্রবেশ না করা।
» আক্রান্ত গরুর খাবার বা ব্যবহার্য কোনো জিনিস সুষ্ঠু গরুর কাছে না আনা।
» ক্ষতস্থান টিনচার আয়োডিন মিশ্রণ দিয়ে পরিষ্কার রাখা।

এলএসডি রোগের চিকিৎসা

এলএসডি আক্রান্তের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
গরুর লাম্পি রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। এই রোগে গরু মরে না। তা ছাড়া ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। সারাদেশে এই রোগের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। মহাখালী থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে সারাদেশে।

লেখক: মো: মোস্তাফিজুর রহমান
মোবাইল: ০১৯১৬৮৮৩৪৩৮
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।