মেটে আলুর সাথে শিম চাষ
আলু আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর একটি সবজি। অধিকাংশ রান্নাবান্নায় আলুর ব্যবহার দেখা যায়। আলু একদিকে যেমন সহজে পাওয়া যায় তেমনি শরীরের পুষ্টিতেও আলু রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আলুর মধ্যে আবার নানা জাত আছে। যেমন: গোল আলু, মিষ্টি আলু, চুপরি আলু, তে-পাতা (ভাদুরী) আলু, মেটে আলু, শাক আলু, শিমুল আলু ইত্যাদি।
মেটে আলু তরুলতা জাতীয় ফসল। লতা লতিয়ে কাণ্ডের উপর ভর করে উপরের দিকে উঠে যায়। মেটে আলুর চাষ করে অল্প জমিতে অধিক আয় করা যায়। এটিকে গরিবের অর্থকরী ফসল বলা হয়। এ ফসলটি গ্রাম বাংলার কৃষকেরা বাড়ির আশপাশে, আঙিনায়, গাছে লতা উঠিয়ে দিয়ে চাষ করে থাকে।
মেটে আলুর কোন রোগবালাই নেই এবং কোন পরিচর্যা করতে হয় না। শুধু আগাছা পরিস্কার করে সামান্য সার মাটি ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে পারলেই রোপণের ৮-১০ মাস পরেই ভাল ফলন পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ পদ্ধতি:
মেটে আলু চাষ করার জন্য উঁচু জমির দরকার। মাটি বেলে দো-আঁশ হতে হবে। তিন চার বার ভাল করে চাষ এবং মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে। তারপর ২ ফুট চওড়া জমির পরিমাণ অনুযায়ী লম্বা যতদূর হয় ২ ফুট গভীর করে গর্ত করতে হবে। গর্তের মাটি উপরে তুলে পরিমাণ মত ছাই, গোবর এবং খৈল কোঁদাল দিয়ে মাটির সাথে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে। এই মাপে জমি যতটুকু হয় ততটি গর্ত করে একেই নিয়মে সার-মাটি দিয়ে ফাল্গুন চৈত্র মাসে গর্ত ভরতে হবে ।
বীজ: লতায় জন্মানো আলু, কন্দের উপরিভাগ, পুরাতন লতার গোড়ার অংশ বীজরূপে ব্যবহৃত হয়।
বীজের পরিমাণ: বিঘাপ্রতি আঠারো’শ আলু বা বীজ।
রোপণ কাল: বৈশাখ থেকে আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
রোপণের দূরত্ব : লাইন থেকে লাইন ৩-৪ ফুট এবং চারা বা বীজ ৩-৪ ফুট।
যখন চারা গজাবে তখন প্রত্যেকটি চারার গোড়ায় লম্বা বাঁশ পুঁতে দিতে হবে। বাঁশের মাথায় ঝাটি কঞ্চি বেঁধে দিতে হবে যাতে লতা লতিয়ে ঝাটির উপর অবস্থান নিতে পারে। গজানো চারা বড় হতে থাকলে বাঁশের সাথে লতা জড়িয়ে দিতে হবে। এবার লতা লতিয়ে দিলেই আর কোন ঝামেল নেই।
বর্ষার সময় লাইনের মাঝখানে মাটি কোঁদাল দিয়ে লতার বরাবর উঁচু আইলের মত করে দিতে হবে যাতে সহজেই পানি নিকাশের ভাল ব্যবস্থা করা যায়। কার্তিক মাস থেকে মাঘ-ফাল্গুন মাস পর্যন্ত আলু তোলা হয়।
ফলন: বিঘাপ্রতি ১০০-১২০ মণ পর্যন্ত।
মেটে আলু গাছের ফাঁকে ফাঁকে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ৬-৭ ফুট দূরত্বে শিমের বীজ রোপণ করা যায়। কার্তিক মাসের দিকে আলু গাছ মরণমুখী হয়, তখন শিমের গাছ সতেজ হয়ে বাড়তে থাকে এবং বাঁশ বেয়ে লতিয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। ক্রমে ক্রমে আলু গাছ মরে যায় এবং শিম গাছ লতিয়ে যায়।
এই পদ্ধতিতে শিম চাষ করে অধিক ফলন পাওয়া যায়। আলুর লতার সাথে শিম চাষ করলে, শিম গাছে কোন রোগবালাই হয় না, যার কারণে কোন কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। হিসেবে করে দেখা গেছে প্রতি কেজি আলুর মূল্য পাইকারি ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি করলে বিঘাপ্রতি ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ বাদে লাভ করা যায়।
লেখক: মোঃ নূর আলী, হরিণাকুণ্ডু, ঝিনাইদহ
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।