কেঁচো সার দিলে ফুলকপি ভালো হয়
ফুলকপি প্রজাতির বিচারে দুই রকম। ইউরোপিয়ান এবং এশিয়ান টাইপ। প্রথম টাইপে কম তাপমাত্রায় ফুল হয়। দ্বিতীয় টাইপে বেশি তাপমাত্রায় ফুল তৈরি হয়। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে ফুল পেতে হলে এশীয় টাইপ এবং পরবর্তী সময়ের জন্য ইউরোপিয়ান টাইপ রোপণ করতে হবে।
বীজ বপন ও চারা তৈরি : ঝুরঝুরে মাটি তৈরি করে প্রতি এক বর্গমিটার জায়গায় এক ঝুড়ি পচা গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। কেঁচো সার প্রয়োগ করলে চারার বৃদ্ধি ভালো হয়। রাসায়নিক সার বীজতলায় প্রয়োগ না করলেও চলবে।
মাটির ভেতরে থাকা ছত্রাক বিনাশ করতে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা দরকার। সে ক্ষেত্রে জমি বীজতলা তৈরির ১৫ দিন আগে থেকে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে ভেতরের তাপমাত্রা বের হতে না পারে। সেপ্টেম্বর মাসে বীজতলা মাটি থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উঁচুতে তৈরি করতে হবে। বিঘাপ্রতি ৪০ থেকে ৭০ গ্রাম বীজ দরকার।
বীজ লাইন করে রোপণ করলে চারা সুস্থ ও সবল হয়। একটি চারা থেকে অন্যটির দূরত্ব হওয়া দরকার পাঁচ থেকে সাত সেন্টিমিটার। বীজ ফেলার পাঁচ থেকে সাত সপ্তাহ পর চারা মূল জমিতে রোপণের উপযুক্ত হয়ে যায়। গোড়া পচা রোগ থেকে চারাকে রক্ষা করতে ডায়াথেন এস-৪৫-এর ০.২ শতাংশ দ্রবণ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে।
মূল জমিতে বিঘাপ্রতি দুই টন গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির সময়ে ১৫ কেজি ইউরিয়া, ৬০ কেজি ফসফেট ও ১০ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের আগে গোড়া অনুখাদ্যের দ্রবণে ভিজিয়ে নিলে বৃদ্ধি ভালো হয়।
জমি তৈরি করার সময় ১৫ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার জমিতে ছড়িয়ে না দিয়ে গাছের গোড়ার চারপাশে দিতে হবে।
অনুখাদ্যের অভাব মেটাতে চারা অবস্থায় গাছে ০.৩ শতাংশ বোরন স্প্রে করা যেতে পারে অথবা দেড় থেকে দুই কেজি বোরন মূল জমিতে স্প্রে করা যেতে পারে।
পরিচর্যা : মাটি বেশি শুকনো হয়ে গেলে হালকা সেচ দিতে হবে। ঘাসের উপদ্রব হলে চারা রোপণের আগে তা তুলে ফেলতে হবে। ফুলকপির নানা রকমের শারীরবৃত্তীয় উপসর্গ দেখা দিতে পারে, এর মধ্যে পাতা লম্বা হয়ে যাওয়া, ছোট ফুল, ফুল না আসা, ভ্যাদভেদে রোগ অন্যতম। বাদামি রোগ হয় বোরনের অভাবে।
মলিবডেনামের অভাবে পাতা সরু ও লম্বা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে বোরন দেওয়ার পদ্ধতি আগেই বলা হয়েছে।
ফুলকপিতে বেশ কয়েকটি ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ দেখা যায়। এর মধ্যে ধসা রোগ, ক্লাব রট, ডাউনি মিলডিউ, পাতা পচা রোগ উল্লেখযোগ্য।
ধসা রোগ ঠেকাতে ডায়াযেন এম-৪৫-এর ০.২ শতাংশ দ্রবণে মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে। পাতা পচা রোগ ঠেকাতে ব্যাকটেরিয়ানাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হয়। এক ধরনের মাছির শুককীট রয়েছে যারা শিকড় খেয়ে ফেলে। এতে গাছ শুকিয়ে যায়। এ ধরনের সমস্যা হলে ম্যালাথিয়ন ০.০২ শতাংশ দ্রবণ স্প্রে করতে হবে।
ফসল : চারা রোপণের ৭০ থেকে ৮০ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। ঠিকঠাকমতো চাষ করতে পারলে বিঘাপ্রতি দুই থেকে তিন টন ফুলকপি পাওয়া যায়। শংকর প্রজাতির ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি সাত থেকে আট টন ফুলকপি পাওয়া সম্ভব।
এগ্রোবাংলা ডটকম