এক গাছে অনেক বাঁধাকপি

বাঁধাকপির বিষ্ময় একই গাছে অনেক ফল হয়

বাঁধাকপির চাষ, একই গাছে অনেক ফল ফলানোর পদ্ধতি

আমরা সাধারণত মৌসুমে একটি গাছে একটি বাঁধাকপির ফলনই দেখে আসছি কিন্তু আপনাকে যদি বলা হয় একই মৌসুমে একই গাছে চারটি বাঁধাকপি ফলানো সম্ভব, তবে বিষয়টি আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে। আর এই অসম্ভবই সম্ভব করেছেন এদেশের একজন প্রগতিশীল কৃষক রেজিন কোড়াইয়া। ভদ্রলোক মূলক একজন অর্থনীতিবিদ, কিন্তু এখন কালিগঞ্জে নিজ গ্রামে কৃষিকাজে ব্যস্ত। তিনি তাঁর মাঠে কাজ করতে করতেই বাঁধাকপির অস্বাভাবিক ফলনের এই উদ্ভাবনটি ঘটিয়েছেন। একদিন বাঁধাকপির মাঠ থেকে ফসল সংগ্রহের সময় এই ঘটনাটি ঘটে। কপিটি কাণ্ড থেকে কাটার সময় কপির নিচের দিককার তিনটি পাতা অসতর্কভাবেই কাণ্ডের সাথে থেকে যায়। দু-চার দিন পর মাঠের অন্য পরিপক্ক কপিগুলো কাটতে এলে আগের পাতাযুক্ত কান্ডের দিকে তাঁর দৃষ্টি যায়। খুব খেয়াল করে দেখলেন প্রতিটি পাতার সংযোগস্থলে নতুন কুঁড়ি জন্মেছে। উদ্ভাবনী চেতনা তাকে দারুণভাবে নাড়া দেয়। তিনি ভাবলেন নতুন করে এই কাণ্ডের যদি যত্ন নেয়া যায়, তবে হয়তো এই কুঁড়িগুলো বড় হয়ে বাঁধাকপি হিসাবে ফলবে।

গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে তাতে আবার শুকনা গোবার, খৈল এবং কচুরিপানা (শুকনা) ব্যবহার করলেন। বলে রাখা ভালো, রেজিন কোড়াইয়া তাঁর কৃষি আবাদে সর্বক্ষেত্রেই জৈব সার ব্যবহার করেন, এতে ভালো ফল পাচ্ছেন। তিনি বলেন, কচুরিপানা ব্যবহারের ফলে গাছের গোড়ার মাটিতে সবসময়ই প্রয়োজনীয় রস থাকে।

অন্যদিকে গোবর ও খৈল গাছকে খাদ্যের যোগান দেয়ায় শুকনো কান্ডটি তরতাজা হয়ে বেড়ে ঐ কুঁড়িগুলো থেকেই জন্ম নেয় আরও তিনটি বিশাল আকারের বাঁধাকপি। অথার্ৎ প্রথম ফলনে একটি এবং পরের ফলনে তিনটি মোট চারটি বাঁধাকপি ফলালেন একই মৌসুমে একই গাছে।

যে কৌশলে এ কাজটি করবেনঃ আপনারা জানেন, বেলে দৌআঁশ মাটি, যেখানে পানি দাঁড়ায় না, প্রচুর সূর্যকিরণ পড়ে এমন জায়গা বাঁধা কপি ফলানোর জন্য ভালো। আর একই গাছ থেকে একই মৌসুমে চারটি কপির ফলন পেতে হলে আগাম অথার্ৎ সেপ্টেম্বরেই চারা লাগাতে হবে। প্রথম ফলন আসবে একটি করে নববই দিনে অথার্ৎ ডিসেম্বরে। দ্বিতীয় ফলনে তিনটি কপির জন্য ঐ কান্ডের পরিচর্যা শুরু করতে হবে প্রথম পলন কেটে নেওয়ার পর থেকেই ডিস্বের থেকেই। প্রথম কপিটি কাটার সময় কপির নিচদিকের ৩/৪ টিপাতা কান্ডের সংগে রেখে কাটতে হবে। ঐ পাতাগুলোর সংযোগস্থল থেকেই নতুন কপির জন্ম হবে। দ্বিতীয় ফলনে তিনটি করে বাঁধাকপি আসবে ৫০/৬০ দিনে অথার্ৎ ফেব্রুয়ারী মেষ নাগাদ। তা হলে লক্ষ্য করুন, আপনি ডিসেম্বরে একটি করে যে ফলন পাচ্ছেন তা আগাম হিসাবে বাজারে ভালা দাম পাচ্ছেন এবং জানুয়ারী / ফেব্রুয়ারী ফলন ভরশীত সৌসুমের ফলন হিসাবে বিবেচিত হবে।

চাষ: যেহেতু একই গাছ থেকে দু’বারে চারটি কপির ফলন নিচ্ছেন সেহেতু এর পরিচর্যা ও খাদ্যের যোগান আপনাকে ঠিকমতো দিতে হবে। মাটিকে প্রচলিতভাবে জ্জ বার লাঙ্গল অথবা কোদাল দিয়ে উল্টে-পাল্টে ঝুরঝুরা করে তৈরী করতে হবে। এই সময় খৈল ও গোবর মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের গর্তে আলাদাভাবে আধসের গোবর, এক ছটাক খৈল ও এক মুঠো ছাই মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।

চারা রোপন পদ্ধতি: জমি তৈরি শৈষ হলে একটি গাছে চারটি করে কপি পেতে হলে গাছের একটি সারি থেকে অন্য সারি ২৫”-২৬” এবং চারা থেকে চারা ২৪” দূরত্বে লাগাতে হবে। গাছপ্রতি যদি দুটি করে কপি ফলাতে চান তবে একসারি থেকে অন্য সারি ২২” এবং চারা থেকে চারা ২৪” দুরত্বে লাগাতে হবে। চারা রোপন করার পর তিনদিন পানি দিতে হবে। ১৫ দিন পর পরিমাণ মতো পচানো গোবর ও খৈল একসংগে মিশিয়ে জমিতে ছড়িয়ে দিতে হবে। খৈল ও গোবার মাটিতে মেশানোর জন্য প্রয়োজনে মাটি কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন গাছের গোড়া যেন ভূমি থেকে উঁচু থাকে এবং গাছের গোড়ায় শুকনা কচুরিপানা দিয়ে রাখবেন, এতে কুয়াশার পানি ধরে রেখে গোড়া ঠান্ডা রাখবে। এমনি পরিচর্যা নিলে প্রথমে একটি করে বাঁধাকপি ফলবে। কপি পুষ্ট হলে বিলম্ব না করে কেটে ফেলতে হবে।

কাটার নিয়ম: আগেই বলেছি কান্ডের গোড়ায় ৩/৪ পাতা রেখে কাটতে হবে যেন কোনোক্রমেই কান্ডের ক্ষতি না হয়। এই পাতাগুলোর সংযোগস্থলে নতুন কপি জন্মাবে। তাই এর পরিচর্যা করতে হবে।

পরিচর্যা: কান্ডের গোড়ায় আগের মতো সার প্রয়োগ করে কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করতে হবে এবং কান্ডের গোড়ায় মাটি দিয়ে উচুঁ করে দিতে হবে। জমিতে রস বুঝে পানি সেব দিতে হবে। এমনি পরিচর্যার পর এই কান্ডের পাতার সংযোগ স্থান থেকে আরও অন্তত তিনটি নতুন কপির জন্ম হবে। অথার্ৎ প্রথমে একটি এবং পরের ফলনে তিনটি মোট চারটি বাঁধাকপি একই গাছ থেকে।

অতএব আপনিও এবার নিজ বাগানে এই কৌশলটি প্রয়োগ করে অল্প জমিতে অধিক ফলনের জন্য সচেষ্ট হতে পারেন।
এগ্রোবাংলা ডটকম