পাতা কোঁকড়ানো রোগ তাড়াবে অন্য গাছ
মাঝে মধ্যেই খবর পাচ্ছি, এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু টমেটোর ক্ষেতে পাতা কোঁকড়ানো রোগের আক্রমণ হয়েছে। অনেক কিছু করেও টমেটোচাষিরা কোনো সুফল পাচ্ছেন না। কয়েক দিন আগে মরিচের ক্ষেতেও এ রকম পাতা কোঁকড়ানো রোগের ব্যাপক আক্রমণ যশোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা এলাকায় লক্ষ করা গিয়েছিল। কেন এভাবে গাছের কচি পাতাগুলো কুঁকড়ে যাচ্ছে? চাষিরা বলছেন, গাছে ভাইরাস লেগেছে। তাদের অনুমানই সত্যি। টমেটোগাছে হলদে লিফ কার্ল ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ায় গাছে ওরকম লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। টমেটো বহু রোগে আক্রান্ত হয়। তবে এর মধ্যে টমেটোর হলদে পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগ অন্যতম। সম্পূর্ণভাবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ বা দমন করা কঠিন। এ রোগের প্রকোপে কখনো কখনো ৯০ ভাগ গাছ নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু ভাইরাস মারার মতো কোনো ওষুধ বাজারে নেই, তাই চাষিরা অযথা বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক এমনকি কীটনাশক গাছে স্প্রে করে এ রোগ দমনে বিফল হচ্ছেন। কীটনাশক প্রয়োগে হয়তো এ রোগের বাহক পোকা কমে, কিন্তু তাতে রোগ খুব একটা কমে না। এ রোগের ফলে গাছের মাথার দিকের কচি পাতাগুলো ওপরের দিকে নৌকার মতো হয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। পাতা ছোট হয়ে যাচ্ছে, রঙ হলদে হয়ে যাচ্ছে। গাছ বাড়ছে খুব কম এবং ফলও ছোট হয়ে যাচ্ছে। হতাশ হয়ে অনেক চাষি আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলছেন। এ অবস্খায় করণীয় কী?
প্রকৃতপক্ষে ভাইরাস রোগ নিয়ন্ত্রণে আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করাই প্রথম এবং একমাত্র প্রতিকার। তবে আক্রান্ত গাছের রস চুষে খেয়ে সাদা মাছিরা যখন সুস্খ গাছে বসে, তখন সে গাছেও এ রোগের জীবাণু বিস্তার লাভ করে এবং সে গাছও রোগাক্রান্ত হয়। একবার এ রোগে আক্রান্ত হলে তেমন কিছুই আর করার থাকে না। সঠিক কীটনাশক স্প্রে করে হয়তো বাহক পোকা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগের প্রকোপ কমানো যেতে পারে, কিন্তু যেসব গাছ আগেই সংক্রমিত হয়ে যায় সেগুলোকে আর রক্ষা করা যায় না। এ রোগ যাতে না হয় সে জন্য আগে থেকেই কিছু ব্যবস্খা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমনন্ধ এ রোগ সহনশীল বা প্রতিরোধী জাত চাষ। রোগমুক্ত বীজ ও সুস্খ চারা ব্যবহার। আগাছা পরিষ্কার রাখা, একই জমিতে উপর্যুপরি টমেটো, বেগুন, মরিচ ইত্যাদি সবজি চাষ না করা। চারাগাছে যাতে সাদা মাছির আক্রমণ না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা। টমেটোক্ষেতের আশপাশে তুলা চাষ না করা ইত্যাদি।
তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণা করে এক নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। এ মহারোগ কমানোর জন্য তারা গবেষণা করে দেখেছেন যে ফাঁদ ফসল হিসেবে গাঁদাফুলের গাছ এবং বিতাড়ক ফসল হিসেবে ধনিয়া বেশ কার্যকর। এ দু’টি গাছ ক্ষেতের চার পাশে আইলের মতো সারি করে লাগিয়ে দিলে তা এ রোগ কমানোয় কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন, ফাঁদ ফসল হিসেবে গাঁদাফুলের চেয়ে ধনিয়াগাছ বেশি কার্যকর। এ পদ্ধতিতে টমেটোর ক্ষেতে পাতা কোঁকড়ানো রোগ ৪০ থেকে ৭০ ভাগ কমানো সম্ভব বলে তারা গবেষণা করে পেয়েছেন। তাই টমেটো চাষের সময় জমির চার পাশে বর্ডার ফসল হিসেবে ধনিয়া চাষ করা যেতে পারে। এমনকি ক্ষেতের মধ্যে টমেটোগাছের সারির ফাঁকে ফাঁকে গাঁদাফুলের গাছ লাগিয়ে সেগুলোকেও ফাঁদ ফসল হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে।
লেখক: মৃত্যুঞ্জয় রায়
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।