রপ্তানিযোগ্য মাছের আঁশ থেকে তৈরি হচ্ছে জুতা ব্যাগ ঔষধ

মাছ কাঁটার পর যে আঁশ ফেলে দেওয়া হয় ডাস্টবিনে, তার থেকেই তৈরি হচ্ছে অপরূপ সব হস্তশিল্প। বানানো হচ্ছে গয়না, মনীষী এবং দেবদেবীর মূর্তি। এই সব শৌখিন কাজ স্থান পাচ্ছে মানুষের সাজে পোশাকে, ড্রয়িং রুমেও। ঔষুধ, প্রসাধনসামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় মাছের আঁশ। কোলাজেন নামক একটি পণ্য বিক্রি হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। দোকানে দোকানে পাওয়া যায়। তা–ও তৈরি হয় মাছের আঁশ দিয়ে। ওই আঁশ ব্যবহার হচ্ছে ক্যাপসুলের মোড়ক তৈরিতে।

তা-ই মাছের আঁশের পাশাপাশি কাঁটা, চোখ, কান সবই এখন দামি হয়ে উঠেছে। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই অপ্রচলিত পণ্য হিসাবে শত শত টন মাছের আঁশ (fish scales), হাড্ডি, ফুটকা রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। চিংড়ি মাছের খোলস, মাথা, কাঁকড়ার খোলসও রপ্তানি হচ্ছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এসব মৎস্যজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশীরা খাদ্য, গ্লু, ওষুধ, স্যুপ, কসমেটিকস সামগ্রী প্রস্তুত করছে। ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, ওসব আইটেমের বাইরে দামি জুতা ও বিশেষ ধরনের পোশাকও প্রস্তুত হচ্ছে মাছের আঁশ থেকে। এ কারণে দিন দিন বাড়ছে অপ্রচলিত এসব পণ্যের ব্যবসা। তবে মৎস্যজাত ওই সব পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশই প্রধান দেশ নয়। প্রতিবেশী ভারত, চীন থেকেও রপ্তানি হয় একই ধরনের মৎস্যজাত পণ্য।
বাজার থেকে আঁশ সংগ্রহের পর তা শুকিয়ে বাজারজাতের উপযোগী করা হয়। মাছের আঁশ প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা। আবার কোথাও কোথাও মণপ্রতি চার হাজার টাকায় আঁশ বেঁচাকেনা হয়।

বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলার অন্তত ৩৬০টি বাজার থেকে চিংড়িসহ নানা ধরনের মাছের আঁশ, খোসা, ফুলকা ও হাড্ডি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কাঁকড়ার খোলস। এর প্রায় সবটুকুই রপ্তানি হচ্ছে জার্মানি, ইতালি, স্পেন, যুগোস্লোভিয়ায়, কোরিয়া ও জাপানে।

এখন মাছের আঁশ দিয়ে তৈরি জিনিসের অনলাইনেও প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দুই থেকে পাঁচ কেজি ওজনের মাছ হলে তার আঁশ থেকে তৈরি হয় ভালো গয়না।

মাছের আঁশ নিয়ে কাজ করা তেমনই একজন ব্যবসায়ীর নাম খুলনার মো. জুলফিকার আলম। জুলফিকার আলম জানালেন, দেশজুড়ে একটি বলয় গড়ে তারপর মাছের আঁশ সংগ্রহ করেন তিনি। বিশেষ করে বন্দর এবং জেলা পর্যায় থেকে। তার অন্তত ২০০ লোক এই আঁশ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত। বাজারে যাঁরা মাছ কাটেন এবং আঁশ ছাড়ান, প্রথম কাজটা তাঁরাই করেন।

কিভাবে কাজটি করেন জানতে চাইলে মেক্সিমকো’র স্বত্বাধিকারী জুলফিকার আলম বলেন, ‘আমিই শিখিয়ে দিয়েছি। পানি ও কেমিক্যাল দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে। অন্তত দুই দিন শুকালে তা মচমচে হয়। এরপর সংরক্ষণ করে রাখেন। আমাদের প্রতিনিধিরা সেগুলো নিয়ে আসেন। এরপর আমাদের গুদামে রাখা হয়। আঁশের সঙ্গে ফাঁকে কিছু অন্য জিনিস ঢুকে যায়। যেমন পাখনা, লেজের অংশ, কানের অংশ, গাছের পাতা ইত্যাদি। এগুলো বাছাই করে ফেলে দিতে হয়। পরে প্যাকেট করা হয় একেকটি ২৫ কেজি করে।

মাছের আঁশের বড় রপ্তানি গন্তব্য হচ্ছে জাপান। কিন্তু জাপানে সরাসরি পাঠানো যায় না। জাপানি একটি বড় কোম্পানি চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় দুটি আলাদা কোম্পানি খুলেছে। ওখানে আগে পাঠানো হয়। মূল কোম্পানি পরে নিয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়াতেও এখন কারখানা গড়ে উঠেছে। রপ্তানির জন্য তৈরি করার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে। তাদের সনদ পাওয়ার পরই রপ্তানি করার অনুমতি মেলে।

বছরে ৮০০ থেকে ১ হাজার টন মাছের আঁশ রপ্তানি করা যায় বলে জানান জুলফিকার আলম। তাঁরটিসহ বর্তমানে বাংলাদেশে মোট তিনটি কারখানা রয়েছে। মোট রপ্তানি আনুমানিক দেড় লাখ ডলারের পণ্য। তবে বেশি পরিমাণ রপ্তানি তিনিই করেন। তিনি রপ্তানি করেন বছরে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলারের পণ্য। বাকিটা অন্য দুই কারখানা করে।

জুলফিকার আলম বলেন, ‘একবারেই ফেলনা একটা জিনিস থেকে আমরা রপ্তানি আয় করছি। প্রায় শতভাগ মূল্য সংযোজন এই পণ্যে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমরা নগদ প্রণোদনার আবেদন করেছি। বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশন এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। বলেছে, এই পণ্য প্রণোদনা পাওয়ার যোগ্য। যতটুকু জেনেছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মাছের আঁশকে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এই প্রণোদনা পেলে রপ্তানি বাড়বে কয়েক গুণ।’

এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।