ইউরিয়ার কার্যকারিতা অক্ষুন্ন রাখার যন্ত্র

ইউরিয়ার কার্যকারিতা অক্ষুন্ন রাখার যন্ত্র

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) কৃষি যন্ত্রপাতি ও ফলনোত্তর প্রযুক্তি বিভাগ (এফএমপিএইচটি) সম্প্রতি আবিষ্কার করেছে ব্রি গুটি ইউরিয়া প্রয়োগযন্ত্র। এর সাহায্যে ঘণ্টায় এক বিঘা জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করা সম্ভব, যা প্রচলিত পদ্ধতির কর্মদক্ষতার তুলনায় সাত-আট গুণ বেশি।

কৃষি গবেষণা মতে, ইউরিয়া ধান উৎপাদনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। প্রচলিত ছিটানো পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ইউরিয়া সারের ৬০ ভাগ ইউরিয়া হাইড্রোলাইসিস, অ্যামোনোফিকেশন, নাট্রিফিকেশন, ডি-নাট্রিফিকেশন, ভোলাটিলাইজেশন ও পারকোলেশন প্রক্রিয়ায় গ্যাস হয়ে বাতাসে উড়ে যায়, চুইয়ে মাটির নিচে অথবা পানির সঙ্গে অন্য জমিতে চলে যায়। অন্যদিকে নতুন এ যন্ত্রের সাহায্যে মাটির ৬ থেকে ৮ সেন্টিমিটার নিচে গুটি ইউরিয়া গ্রয়োগ করা হয় বলে অপচয় কমিয়ে কার্যকারিতা ৪০ থেকে ৭০ ভাগে উন্নীত করা সম্ভব। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগযন্ত্র একজন শ্রমিক সহজে পরিচালনা করতে পারেন। যন্ত্রটি তৈরি কৌশল অত্যন্ত সহজ হওয়ায় এটি নির্মাণ, মাঠে চালানো, সমস্যা সমাধান ও রক্ষণাবেক্ষণও সহজ। যন্ত্রটি চালানোর জন্য জমিতে সারিবদ্ধভাবে ধানের চারা রোপণ করতে হয়। গুটি ইউরিয়া এক সারি পরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। এ কারণে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০ সে. মি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ২০ সে. মি. ধরে যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে। যন্ত্রের ওজন মাত্র ১০ কেজি হওয়ায় এটি সহজে চালানো যায়। গুটি প্রয়োগের সময় যন্ত্রের স্কিড এবং মধ্যের চাকার মাধ্যমে জমির প্রাথমিক নিড়ানির কাজও হয়ে যায়।

দুটি স্কিডারের মধ্যে বিদ্যমান চাকাটির সঙ্গে শ্যাফটের মাধ্যমে দুই পাশের দুটি মিটারিং ডিভাইস সংযুক্ত, যা গুটি ইউরিয়া ধারক বঙ্রে মধ্যে এমনভাবে সংযুক্ত যাতে মধ্যের চাকার ঘূর্ণনের সঙ্গে মিটারিং ডিভাইসও একটি ঘূর্ণন সম্পন্ন করবে। প্রতিটি মিটারিং ডিভাইসে ছয়টি করে কাপ সংযুক্ত আছে। মধ্যের চাকা ঘূর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে মিটারিং ডিভাইস ঘুরার সময় গুটি ইউরিয়ার ধারক বঙ্ হতে কাপের মাধ্যমে গুটি সংগ্রহ করে বহির্গমন পথে ফেলে দেয়। বহির্গমন পথটি স্কিডের নিচে সংযুক্ত নালা প্রস্তুতকারী ডিভাইসের পেছনে সংযুক্ত থাকায় বাঙ্ হতে সংগৃহীত গুটি নালার মধ্যে নির্গমন হয় এবং পুনরায় স্কিডের পেছনে সংযুক্ত কভারিং ডিভাইসের মাধ্যমে ঢেকে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, দুটি স্কিডের ওপর গুটি ইউরিয়া ধারক বাক্স দুটি মধ্যের চাকা বরাবর স্থাপন করা আছে। মূল যন্ত্রের সঙ্গে চালানো দণ্ড সংযুক্ত থাকায় চালানোর সময় প্র্রয়োগ করা বল সমভাবে বণ্টন হয়, যা যন্ত্রটি মসৃণভাবে চলতে সহায়তা করে। তবে যন্ত্রটি জমিতে নেওয়ার আগে ঘূর্ণয়মান অংশে মবিল বা গ্রিস দিতে হবে। জমিতে চারা লাগানোর ৮-১০ দিনের মধ্যে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের সময় জমিতে ছিপছিপে পানি (০.৫ সেমি) থাকা বাঞ্ছনীয়। গুটি ইউরিয়া বক্সে দুই থেকে তিন অংশ পরিমাণ গুটি দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। এরপর শ্রমিকের উচ্চতা অনুযায়ী হাতলের উচ্চতা সমন্বয় করে সামনের দিকে ঠেলার মাধ্যমে যন্ত্রটি চালাতে হবে।

যন্ত্রটি উদ্ভাবনে প্রধান গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন এফএমপিএইচটি বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন। সহযোগী ছিলেন ড. প্রকৌশলী মো. সাইদুল ইসলাম, ড. প্রকৌশলী মো. দুররুল হুদা, প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া, প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র নাথ এবং প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম জামী। যন্ত্রটি উদ্ভাবন সম্পর্কে গবেষক আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২৮ লাখ টন ইউরিয়া সার ব্যবহৃত হয়। এর বৃহৎ অংশই ব্যবহৃত হয় ধান উৎপাদনে। ইউরিয়ার কার্যকারিতা বাড়াতে এবং সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এ প্রযুক্তি কৃষকপর্যায়ে দ্রুত সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।

লেখক : প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কারখানা যন্ত্রপাতি ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ, বিআরআরআই
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।