ভার্মি কম্পোস্ট

ভার্মি কম্পোস্ট করবেন যেভাবে

রাসায়নিক সার আর কীটনাশকের যত্রতত্র ব্যবহারে মাটির জীবনবায়ু ওষ্ঠাগত প্রায়। শস্যের বাড়তি ফলন নেই, হাসি নেই কৃষকের মুখে। এই যখন অবস্থা তখন আমাদের চাষাবাদে জৈব সার, কম্পোস্ট সারের বিকল্প নেই। ভার্মি কম্পোস্ট মাটির নিরাপদ স্বাস্থ্যে ভীষণ জরুরি।

প্রথম দিনের কাজ : কাঁচামাল সংগ্রহ করুন। যেমন- সবজির পরিত্যক্ত অংশ, সব ধরনের আগাছা, ফলের খোসা ও বিচি, গো-খাদ্যের অবশিষ্টাংশ, কাঠের গুঁড়া, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, লতাপাতা, ঝরাপাতা, মাছ-হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগলের নাড়িভুঁড়ি-রক্ত, কচুরিপানা ইত্যাদি মোটামুটি তিনটি রিংয়ের গভীরতার সমপরিমাণ বা ১৬০ কেজি (কাঁচা ওজন)। সবগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে পলিব্যাগ বা বস্তায় ভরে মুখ বন্ধ করে শুষ্ক ছায়াযুক্ত স্থানে ১২ দিন রেখে দিতে হবে।

সতর্কতা : নিম, ধুতুরা, তুলসী পাতা, তামাক পাতা, বিষকাটালিসহ শক্ত দ্রব্যাদি বাদ দিতে হবে।
দশম দিনের কাজ : যে স্থানে ভার্মি কম্পোস্টের রিং স্থাপন করা হবে সে স্থান পরিষ্কার ও সমতল করে পিটিয়ে শক্ত করুন। এরপর ওই স্থানটি আধা লিটার কেরোসিন দিয়ে ভিজিয়ে দিন। যেখানে রিং বসাবেন, এর কেন্দ্র থেকে চার ফুট দূর দিয়ে ৮-৯ ইঞ্চি গভীর করে চার ইঞ্চি প্রস্থ একটি নালা তৈরি করুন। নালার ওপরে একটি পলিথিন দিতে হবে, যাতে নালার দুই ধার ঢাকা পড়ে।

সতর্কতা : স্থানটি অবশ্যই উঁচু হতে হবে, যাতে বৃষ্টির পানি না জমে। ছায়াযুক্ত স্থান নির্বাচন করা ভালো।

দ্বাদশ দিনের কাজ : বর্ণিত স্থানে রিংয়ের ব্যাসের চেয়ে বড় একটি পলিথিন শিট বিছান। নালায় পানি ভর্তি করুন। ১২০ কেজি গোবর সংগ্রহ করুন। এবার প্রথম দিনে রাখা বস্তা খুলে আবর্জনা বের করুন এবং এর সঙ্গে গোবর ভালোভাবে মেশান। পলিথিন শিটের ওপর পর্যায়ক্রমে তিনটি রিং স্থাপন করুন এবং রিংয়ের ভেতর গোবর মিশ্রিত দ্রব্য দিন। এরপর পানি ছিটিয়ে পা দিয়ে চেপে চেপে শক্ত করুন। এ অবস্থায় ১৫ দিন রেখে দিন।

সতর্কতা : খুব বেশি পানি ব্যবহার করে মিশ্রণটি কাদা করবেন না। নালায় সার্বক্ষণিক পানি রাখতে হবে।
২৭তম দিনের কাজ : রিংগুলো সরিয়ে মিশ্রণ বের করে আনুন। মিশ্রণের আর্দ্রতা যদি ৫০ শতাংশের বেশি হয় তবে কিছুটা শুকিয়ে নিন। এবার সব মিশ্রণ আবার ভালোভাবে মেশান এবং রিং স্থাপন করে এর ভেতর দিন। এবার ২০০টি কেঁচো মিশ্রণের ওপর ছেড়ে দিন। অপেক্ষা করুন (কমপক্ষে ১৫ মিনিট) যতক্ষণ না কেঁচো আপনা থেকে মিশ্রণের ভেতর চলে যায়। সব কেঁচো ভেতরে চলে যাওয়ার পর রিংয়ের মুখ চট দিয়ে বন্ধ করুন। রিংয়ের ওপর একটি চালা দিন।

সতর্কতা : অতিরিক্ত আর্দ্রতা পরিহার করুন। কখনো কেঁচোদের জোরপূর্বক ভেতরে ঢোকানোর চেষ্টা করবেন না। ৩৫তম দিনের কাজ : চট খুলে ফেলুন এবং একমুঠো মিশ্রণ হাতে নিয়ে চাপ দিন। যদি দলা হয়, বুঝতে হবে আর পানির প্রয়োজন নেই। আর যদি দলা না হয় তবে পরিমাণমতো (দুই লিটার) পানি ছিটিয়ে আবার মুখ বন্ধ করুন। এভাবে সপ্তাহে দুই দিন করে তিন মাস পর্যন্ত করতে হবে।

১০৭তম দিনের কাজ : পানি দেওয়া একেবারে বন্ধ করে দিন।

১১৫তম দিনের কাজ : চটের ঢাকনা খুলে ফেলুন। প্রথম রিং সরান। কিছু মিশ্রণ হাতে নিন। যদি মিশ্রণটি চা-পাতার মতো আলগা আলগা মনে হয়, তবে বুঝতে হবে কম্পোস্ট তৈরি হয়ে গেছে। এরপর মিশ্রণটি ০.৫ সেন্টিমিটার বা এক ইঞ্চির পাঁচ ভাগের এক ভাগ ছিদ্রযুক্ত চালনি দ্বারা ছেঁকে সার ও কেঁচো আলাদা করুন। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় রিং সরিয়ে অনুরূপ ব্যবস্থা নিন। আর যদি পরবর্তী রিংয়ের মিশ্রণ ঝুরঝুরে না হয় তবে কয়েকদিন রেখে ঝুরঝুরে করে নিন। সাধারণত ৯০ দিনের মধ্যেই একটি রিংয়ের কেঁচো আট গুণ হয়ে যায় এবং প্রায় ৮০ কেজি সার তৈরি করে।

সতর্কতা : ভার্মি কম্পোস্ট দেখতে সাধারণত চা-পাতার মতো দানাদার ও ঝুরঝুরে হবে।

ভার্মি কম্পোস্ট কিনতে ক্লিক করুন এগ্রোবাংলা শপের এই লিংকে