মাজরা পোকা

বোরো ধানের বালাই ব্যবস্থাপনা

ধানের ফলন কম হওয়ার অনেকগুলো কারণে মধ্যে রোগবালাই অন্যতম। ভাল জাত, ভাল বীজ, সুষম সার বা গাছের যথাযথ পরিচর্যা করলেই যে বেশি ফলন পাওয়া যাবে তা বলা কঠিন। আবহাওয়া ও অন্যান্য দিক রোগের অনুকূলে হলে গাছের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। বাংলাদেশের আবহাওয়া রোগের বিস্তার ও প্রসার লাভের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ধানে ৩১টি রোগ সনাক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে ২টি ভাইরাসজনিত, ৩টি ব্যাকটেরিয়াজনিত, ২১টি ছত্রাকজনিত এবং ৫টি কৃমিজনিত রোগ। যদিও এর মধ্যে ক্ষতির প্রকৃতি অনুযায়ী মাত্র ১০টিকে মূখ্য রোগ হিসেবে গণ্য করা হয়।

পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা: ধানের মাজরা পোকা:

লক্ষণ:
১. হলুদ, কালো মাথা ও গোলাপী মাজরা পোকার কীড়া ধান ক্ষেতে ক্ষতি করে;
২. কীড়া কাণ্ডের ভেতর থেকে মাঝ পাতা ও শীষের গোড়া কেটে দেয় ও
৩. এর ফলে কুশি অবস্থায় মরা ডিগ ও ফুল আসার পর সাদা শীষ দেখা যায়।

প্রতিকার:
১. আলোর ফাঁদ বা সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করে পুরুষ মথ ধরে মেরে ফেলা;
২. প্রতি বর্গমিটারে গড়ে ২ থেকে ৩টি স্ত্রী মথ বা ডিমের গাদা, অথবা শতকরা ১০টি মরা ডিগ বা ৫টি সাদা শীষ দেখা গেলে বালাইনাশক ব্যবহার করা ও
৩. হেক্টর প্রতি কার্বোফুরান ৫জি (ফুরাটাফ/ফুরাডান) ১০ কেজি, কার্বোসালফান (মার্শাল) ১.১৫ লি., কারটাপ (সুমিটাপ) ১.২০ লি., বাসুডিন ১০জি ১৬.৮ কেজি, ডায়াজিনন ১.৬০ লি., ফেনিট্রোথিয়ন (সুমিথিয়ন) ১.১২ লি., ফেনথয়েট (ক্যাপ) ১.৭০ লি. হিসেবে যেকোনো একটি বালাইনাশক ব্যবহার করা।

ধানের গল মাছি (নলি) পোকা:

লক্ষণ:
১. ধানের ডিগপাতা পেঁয়াজ পাতার মত নলাকার হয়ে যায়;
২. ক্রীড়া কাণ্ডের ভেতর কচি অংশ খেয়ে ফেলে ও
৩. ক্ষতিগ্রস্ত ধান গাছে শীষ হয় না।

প্রতিকার: ১. আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে বয়স্ক পোকা দমন করা;
২. জমিতে শতকরা ৫টি পেঁয়াজ পাতারমত দেখা গেলে বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। যেমন হেক্টরপ্রতি ফুরাডন ৫জি ১০ কেজি, বাসুডিন ১০ জি ১৬.৮ কেজি, ডায়াজিনন ১.৭০ লি., ফেনথয়েট (ক্যাপ) ১.৭০ লি. প্রয়োগ করা।

ধানের পামরী পোকা:

লক্ষণ:
১. পূর্ণ বয়স্ক ও কীড়া উভয়ই ধানের পাতার ক্ষতি করে ও
২. পাতার সবুজ অংশ খেয়ে সাদা হয়ে খড়ের রঙ ধারণ করে।

প্রতিকার: ১. হাত জাল দিয়ে পোকা ধরে মেরে ফেলা;
২. আক্রান্ত ক্ষেতের পাতা উপর থেকে ৩ থেকে ৪ সে.মি. কেটে নষ্ট করা;
৩. জমিতে শতকরা ৩৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অথবা প্রতি গোছায় ৪টি পূর্ণ বয়স্ক পোকা থাকলে বা কুশি প্রতি ৫টি কীড়া থাকলে কীটনাশক ব্যবহার করা ও
৪. হেক্টরপ্রতি ডায়মেথোয়েট (রগর) ১.১২ লি., ডায়াজিনন ১.৭০ লি., ফেনিট্রোথিয়ন (ফলিথিয়ন) ১.১২ লি., ম্যালাথিয়ন ১.১২ লি., ফেনথিয়ন (লেবাসিড) ১.০ লি. হিসেবে ব্যবহার করা।

ধানের বাদামী গাছ ফড়িং পোকা:

লক্ষণ:
১. পূর্ণ বয়স্ক ও নিস্ফ উভয়ই গাছের গোড়ার দিকে থাকে এবং গাছের রস খেয়ে ক্ষতি করে। ফলে পাতা শুকিয়ে খড়ের রঙ ধারণ করে এবং বাজপোড়া বা হোপার বার্ন অবস্থার সৃষ্টি হয়।

প্রতিকার:
১. পোকার আক্রমণ হলে জমির পানি সরিয়ে দেয়া;
২. অতিমাত্রায় ইউরিয়া ব্যবহার পরিহার করা;
৩. আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা ও জমিতে কুশিপ্রতি ৪টি স্ত্রী পোকা বা ১০টি নিম্ফ থাকলে- মিপসিন, সপসিন, কার্বোসালফান (মার্শল), ফেনিট্রোথিয়ন (সুমিথিয়ন), ক্যাপ, একতারা, ইত্যাদির যেকোনো একটি বালাইনাশক গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করা।

ধানের গান্ধী পোকা:

লক্ষণ:
১. পূর্ণ বয়স্ক এবং নিস্ফ উভয় অবস্থায় ক্ষতি করে;
২. ধানে দুধ আসা অবস্থায় ক্ষতি বেশি করে ও
৩. ফলে ধানের গায়ে দাগ ও চিটা হয়।

প্রতিকার:
১. ২০০ থেকে ৩০০ মিটার দূরে দূরে আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা;
২. শামুকের মাংসের সঙ্গে বালাইনাশক মিশিয়ে কাপড়ের পুটলিতে বেঁধে ধানের দুধ আসার সময় বিষ ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা ও আক্রমণ বেশি হলে যেকোনো একটি বালাইনাশক ব্যবহার করা। যেমন ২ মিলি ম্যালাথিয়ন, ক্লোরপাইরিফস (ডার্সবান), ডাইমেথোয়েট (টাফগর), ২ গ্রাম কারবারিল (সেভিন)/লিটার পানি হিসেবে স্প্রে করা।

ধানের শীষ কাটা লেদাপোকা:

লক্ষণ:
১. ধানের শীষ আসার পর এ পোকার কীড়া শীষ কেটে ক্ষতি করে;
২. মেঘলা আবহাওয়ায় এ পোকার আক্রমণ বেশি হয় ও
৩. এ পোকা দিনের বেলায় গাছের গোড়ায় লুকিয়ে থাকে ও রাতের বেলায় আক্রমণ করে।

প্রতিকার:
১. ক্ষেত পরিস্কার/পরিচ্ছন্ন রাখা;
২. ক্ষেতে বেশি করে সেচ দেয়া;
৩. আক্রান্ত ক্ষেত থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফসল সংগ্রহ করা। ক্ষেতে প্রতি বর্গমিটারে গড়ে অন্তত একটি করে কীড়ার উপস্থিতি থাকলে বালাইনাশক ব্যবহার করা ও
৪. আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি সাইপারমেথ্রিন (সিমবুস) অথবা ২ গ্রাম কারবারিল (সেভিন) ব্যবহার করা।

ধানের পাতা মোড়ানো পোকা:

লক্ষণ:
১. কীড়া ধানের পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে ফেলে এবং পাতার সবুজ অংশ খায়।

প্রতিকার:
১. আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা;
২. আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে নষ্ট করা;
৩. শতকরা ১৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত যেকোনো একটি বালাইনাশক ব্যবহার করা। হেক্টরপ্রতি ম্যালাথিয়ন ১.১২লি., সুমিথিয়ন ১.০লি., ডাইমেথোয়েট (টাফগর) ১.১২লি., ডায়াজিনন ১.৭০লি., কারবারিল (সেভিন) ১.৭০ কেজি হারে সপ্রে করা।

রোগ ব্যবস্থাপনা: ধানের বস্নাস্ট রোগ:

লক্ষণ:
১. এ রোগ ধান গাছের তিনটি অংশ আক্রমণ করে। যথা- পাতা, কাণ্ড ও শীষ;
২. প্রথমে পাতায় ছোট ছোট ডিম্বাকৃতির দাগ সৃষ্টি হয় যা পরে দু’প্রান্তে লম্বা হয়ে চোখের মত দেখায়;
৩. দাগের চারদিকের প্রান্ত গাঢ় বাদামী রঙের হয় এবং মধ্য ভাগ সাদা ছাই রঙের দেখায়। অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে পাতা ঢেকে ফেলতে পারে;
৪. এ রোগে কাণ্ডের গিঁট আক্রান্ত হয় এবং কালো দাগ পড়ে। আক্রমণ বেশি হলে কাণ্ড ভেঙে পড়ে;
৫. একইভাবে দুধ অবস্থায় শীষের গোড়ায় পচন দেখা দিতে পারে, শীষ ভেঙে পড়ে ফলে ধান চিটা হয়;
৬. শীষ আসা অবস্থায় আক্রমণ হলে ৮০ ভাগ পর্যন্ত ফলন হ্রাস পেতে পারে।

প্রতিকার:
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত ব্যবহার করা। যথা- বিআর ১৫, ১৬, ২৩, ২৫ ও ব্রিধান ২৮, ৩৩;
২. বীজতলা বা জমি ভেজা রাখা;
৩. আক্রান্ত জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ বন্ধ রাখা;
৪. রোগ দেখা দিলে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যথা এডিফেন ০.২%, হোমাই ০.২%, টপসিন এম ০.২% , হিনোসান হেক্টরপ্রতি ৮০০ মিলি হারে চারা ও থোড় অবস্থায় সপ্রে করা।

ধানের খোলপোড়া রোগ:

লক্ষণ:
১. কুশি গজানোর সময় প্রথমে ছোট গোলাকার বা লম্বাটে ধরনের ধূসর রঙের জলছাপের মত দাগ পড়ে এবং তা আস্তে আস্তে বড় হয়ে উপরের দিকে সমস্ত খোল ও পাতায় ছড়িয়ে পড়ে;
২. দাগগুলোর কেন্দ্রস্থল খয়েরী রঙ এবং পরিধি গাঢ় বাদামী রঙের হয়। এ অবস্থায় খোল দেখতে কিছুটা গোখড়া সাপের চামড়ার দাগের মত দেখায়;
৩. ইউরিয়া সার বেশি দিলে, আবহাওয়া গরম ও স্যাতস্যাতে হলে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়।

প্রতিকার:
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত ব্যবহার করা। যথা- বিআর-১০, ২২, ২৩, এবং ব্রিধান ২৯, ৩২, ৩৯, ৪১;
২. সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা এবং ইউরিয়া ২ থেকে ৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করা;
৩. রোগ দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন রাখার পর আবার সেচ দেওয়া;
৪. পটাশ সার ব্যবহার করা (প্রয়োজনে উপরি প্রয়োগ);
৫. প্রয়োজনে ছত্রাক নাশক ব্যবহার করা। প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি ফলিফুর, ১ মিলি প্রোপিকোনাজল (টিল্ট ২৫০ইসি) বা কনটাফ ৫ ইসি, ১ গ্রাম কার্বেনডাজিম (ব্যাভিস্টিন) হারে সপ্রে করা।

ধানের কাণ্ড পচা রোগ:

লক্ষণ:
১. এ রোগ সাধারণত কুশি গজানোর শেষ অবস্থায় মাঠে দেখা যায়;
২. রোগ জীবাণু মাটিতেই বাস করে। সেচের পানি দ্বারা রোগ জীবাণু কাণ্ডে আক্রমণ করে;
৩. প্রথমে কুশির বহিঃখোলে ছোট আয়তকার কালো কালো দাগ দেখা যায়। পরে এ দাগ ভেতরের খোলে ও কাণ্ডে প্রবেশ করে। কাণ্ড পচিয়ে দেয় বলে গাছ ঢলে পড়ে ফলে ধান চিটা ও অপুষ্ট হয়।

প্রতিকার: ১. রোগ দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে পরে আবার পানি দেয়া;
২. জমিতে ইউরিয়া কম ও বেশি পটাশ সার ব্যবহার করা;
৩. জমির নাড়া ও খড় ধান কাটার পর জমিতে পুড়িয়ে ফেলা;
৪. প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক কুপ্রিাভিট (০.৪%). হোমাই, (০.২%), টপসিন এম, (০.২%) বেনলেট (০.২%) ব্যবহার করা।

ধানের ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া বা পাতা ঝলসানো রোগ:

লক্ষণ:
১. এ রোগ চারায় এবং বয়স্ক গাছে দু’ধরনের লক্ষণ দেখা যায়;
২. চারা অবস্থায় একে নেতিয়ে পড়া বা চারা পচা (ক্রিসেক) রোগ বলে এবং বয়স্ক অবস্থায় একে পাতাপোড়া রোগ বলে;
৩. চারার বাইরের পাতা হলদে হয়ে আস্তে আস্তে শুকিয়ে খড়ের রঙে পরিণত হয়;
৪. বয়স্ক গাছে প্রথমে পাতার কিনারায় এবং আগায় ছোট ছোট জলছাপের মতো দাগ দেখা যায়। এ দাগগুলো আস্তে আস্তে বড় হয়ে পাতার দু’প্রান্তে দিয়ে নিচের বা ভেতরের দিকে অগ্রসর হয় এবং আক্রান্ত অংশ বিবর্ণ হতে থাকে ও ধূসর বাদামী বর্ণে পরিণত হয় যা ঝলসানো বা পাতাপোড়া বলে মনে হয়।

প্রতিকার:
১. ইউরিয়া সার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার না করা ও সুষম সার প্রয়োগ করা;
২. সব ইউরিয়া চারা বা কুশি অবস্থায় না দিয়ে ২/৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করা;
৩. রোগ দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর আবার পানি দেওয়া;
৪. ধান কাটার পর জমিতে নাড়া ও খড় পুড়িয়ে ফেলা;
৫. আক্রান্ত জমিতে ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম পটাশ সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে বিকালে সপ্রে করা। অথবা পটাশ সার বিঘাপ্রতি ৫/৬ কেজি হারে উপরি প্রয়োগ করা;
৬. কুশিকালে ঝড়ের পর পরই ইউরিয়া সার ব্যবহার না করা;
৭. কুপ্রাভিট ৪ গ্রাম বা চ্যাম্পিয়ন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সপ্রে করা। প্রয়োজনে ১% হারে বর্দ্দোমিকচার ব্যবহার করা যেতে পারে।

ধানের ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতার লালচে রেখা রোগ:

লক্ষণ:
১. এ রোগ সাধারণত পত্র ফলকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে;
২. পাতার শিরা বরাবর লম্বালম্বি রেখা দেখা দেয়। রেখাগুলো প্রথমে চিকন ও ছোট হয়। আস্তে আস্তে দাগগুলো বড় হয়ে বাদামী রঙ ধারণ করে;
৩. অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে একটি বড় লম্বা দাগ হয়। দাগগুলো একত্রে মিশে সমস্ত পাতাই আক্রান্ত হয় ও পাতাগুলো হলদে কমলা রঙের দেখায়।

প্রতিকার:
১. ইউরিয়া সার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার না করা ও সুষম সার প্রয়োগ করা;
২. সব ইউরিয়া চারা বা কুশি অবস্থায় না দিয়ে ২/৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করা;
৩. রোগ দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর আবার পানি দেওয়া;
৪. ধান কাটার পর জমিতে নাড়া ও খড় পুড়িয়ে ফেলা;
৫. আক্রান্ত জমিতে ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম পটাশ সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে বিকালে সপ্রে করা। অথবা পটাশ সার বিঘাপ্রতি ৫/৬ কেজি হারে উপরি প্রয়োগ করা;
৬. কুশিকালে ঝড়ের পর পরই ইউরিয়া সার ব্যবহার না করা;
৭. কুপ্রাভিট ৪ গ্রাম বা চ্যাম্পিয়ন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সপ্রে করা। প্রয়োজনে ১% হারে বর্দ্দোমিকচার ব্যবহার করা যেতে পারে।

ধানের ভাইরাসজনিত টুংরো রোগ:

লক্ষণ:
১. চারা অবস্থায় এ রোগের আক্রমণ শুরু হয়;
২. আক্রান্ত পাতার লম্বালম্বি শিরা বরাবর হালকা সবুজ বা হালকা হলুদ রঙের রেখা দেখা যায়;
৩. ক্রমেই তা ছড়িয়ে পড়ে এবং সম্পূর্ণ পাতা হলুদ বা কমলা রঙের হয়;
৪. কচিপাতা মোচড়ানো ও হালকা হলুদ হয়;
৫. জমিতে বিক্ষিপ্তভাবে কমলা-হলুদ বা হলুদ বর্ণের খাটো গাছ দেখা যায়;
৬. ক্ষেতে বাহক পোকা সবুজ পাতা ফড়িং এর উপস্থিতি দেখা যায়;
৭. আক্রান্ত গাছের শিকড় দুর্বল হয় এবং গাছ টান দিলে সহজেই উঠে আসে।

প্রতিকার:
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ধানের জাত ব্যবহার করা যথা:বিআর- ১০, ১১, ১৪, ১৬, ২০, ২২ এবং ব্রিধান- ২৭, ৩৬, ৩৭, ৩৯, ৪১;
২. রোগাক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তা শিকড়সহ তুলে পুড়িয়ে ফেলা;
৩. ক্ষেতের আশেপাশে আড়ালী ঘাস ও অন্যান্য আগাছা পরিস্কার করা;
৪. বীজতলায় বা জমিতে হাতজালের প্রতি একশ’ টানে ৪০ থেকে ৫০টা সবুজ পাতা ফড়িং পাওয়া গেলে অনুমোদিত বালাইনাশক ব্যবহার করা;
৫. ডায়াজিনন ২ মিলি, সুমিথিয়ন-২ মিলি, ডাইমেথোয়েট (রগর) ২ মিলি, ম্যালাথিয়ন-২ মিলি মেটাসিস্টক্স-২ মিলি হারে প্রতি লিটার পানি মিশিয়ে সপ্রে করা।

ধানের কৃমিজনিত উফরা রোগ:

লক্ষণ:
১. কৃমি মাটি, রোগাক্রান্ত নাড়া ও খড়ে থাকে;
২. সেচের পানির সঙ্গে ভেসে এরা এক গাছ থেকে অন্য গাছে আক্রমণ করে;
৩. এ কৃমি ধান গাছের আগার কচি অংশের রস শুষে খায়, ফলে প্রথম পাতার গোড়ায় অর্থাৎ পাতা ও খোলের সংযোগ স্থলে সাদা ছিটেফোটা দাগের মত দেখা যায়;
৪. থোড় হতে ধানের ছড়া বের হতে পারে না বা বের হলেও অর্ধেক বা আংশিক বের হয় এবং মোচড়ানো থাকে;
৫.ধান চিটা ও অপুষ্ট হয়।

প্রতিকার:
১. ফসল কাটার পর আক্রান্ত ক্ষেতের নাড়া পুড়িয়ে দেওয়া;
২. আক্রান্ত ক্ষেতের পানি অন্য ক্ষেতে যেতে না দেওয়া;
৩. ফুরাডান ৩জি বিঘাপ্রতি ৪.৫ কেজি হারে ব্যবহার করা।

পোকার ক্ষতির মাত্রা, পোকার প্রজাতি, পোকার সংখ্যা, এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ, জমি বা তার আশেপাশের অবস্থা, ধানের জাত, ধান গাছের বয়স, উপকারী পরভোজী ও পরজীবী পোকামাকড়ের সংখ্যা ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল। আর রোগের ক্ষতির মাত্রা জীবাণুর উপস্থিতি, ফসলের জাত, অনুকূল আবহাওয়া ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। যেকোনো বালাইনাশক প্রয়োগের আগে সংশিস্নষ্ট পোকা বা রোগের আক্রমণ এবং ধরণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। এ ব্যাপারে যেকোনো প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য বস্নক পর্যায়ে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা উপজেলা কৃষি অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করা যেতে পারে।
লেখক: আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ, সহকারী অধ্যাপক
পস্নান্ট প্যথলজি বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

এগ্রোবাংলা
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।