একটি বাড়ি একটি খামার
শিরোনামের অন্তরালে
কৃষির নিরন্তর সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু আমাদের সুষ্ঠুপরিকল্পনা, কার্যকরি বাস্তবায়ন এবং সার্বিক সমন্বয়হীতায় এখনো কাঙ্ক্ষিত সীমানা রেখা স্পর্শ করতে পারিনি। কিন্তু অপার আশাজাগানিয়ার এ বদ্বীপের সোনাফলা মাটির উজানীশক্তি আমাদের অনুপ্রেরণা শক্তি যোগাবার ক্ষমতা রাখে, প্রমাণও রেখেছে। কিন্তু আজতক হলো না অনেক কিছু। ঐ যে…হলো নালো হলোনা সই …এর মতো। তবে হবার সম্ভাবনা একরত্তিও ফুরিয়ে যায়নি বরং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আরো চমৎকার পরিসরে, উল্লেখযোগ্য গতিতে এগুবে সীমাহীন আগামীর সন্মুখ পানে। দিন বদলের পালায় আমরা বদলাতে পারবো আমাদের পিছিয়ে থাকা কৃষির সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে। দেশে কৃষি পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৫০ লাখ ৮৯ হাজার যা মোট জনসংখ্যার ৫৩.৫৭ শতাংশ। এ পরিবারগুলো নিজ উদ্যোগে তাদের নিজেদের খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করার সাথে সাথে বাড়তি যোগান দেয় অকৃষি খাতে জীবন নির্বাহ করা ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার পরিবারের যা আমাদের মোট জনসংখ্যার ৪৬.৪৩ শতাংশ। মোটকথা এদেশের আপামর মানুষের খাদ্য পুষ্টির নীরব যোগনদাতা কৃষকদের মাথার ঘামে অমিত পেশীয় বলে। সে কারণে বিগত আওয়ামী শাসনামলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একটি বাড়ি একটি খামার ইস্যু ঘোষণা করেছিলেন। যেটি সফলতার আয়েশি বন্দরে পৌঁছার আগেই সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। যথারীতি প্রচলিত ধারায় যা হবার তা হলো অর্থাৎ আগের সরকারের নেয়া প্রতিশ্রুতিশীল কার্যক্রম কর্মসূচিটি আঁতুড়ে বিনষ্ট হয়ে গেল। এবার আবারো আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেল এবং প্রাসঙ্গিকভাবেই অসমাপ্ত গতিময় প্রকল্পটি আবার চালু করবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ অসামান্য প্রতিশ্রুতিশীল প্রকল্পটি আর যেন আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত না হয়। এর আশাজাগানিয়া অমিত সম্ভাবনার ফল্গুধারাকে বাস্তব সফলতায় রূপান্তর করে বাংলার কৃষির সৌরভ ছড়িয়ে দিবে দিকবিদিক। খামার মানে কৃষি সংক্রান্ত সবকিছুর এক পরিসীমার সুষ্ঠু সমন্বয়। দেশের প্রতিটি বাড়ি যখন খামারে রূপান্তরিত হবে তখন বহুমুখী সম্ভাবনার দখিনা দ্বার খুলে যাবে। এখান থেকে একটি বাড়ি একটি খামার এর থিম
কেন এ প্রকল্প ?
বাংলার কৃষি এবং বাংলার কৃষক একই সুতোয় বাঁধা। এটিকে ওয়ানস্টপ বা সিঙ্গেলডোর সার্ভিসও বলা যেতে পারে।। কেননা যে কৃষক ধান ফলায়, সে বাড়ির আঙ্গিনায় শাক সবজির আবাদ করে, সে আবার তার পুকুরে মাছের চাষও করে। তিনিই আবার দুটো ছাগল, একটি গরু দশটি কবুতর পালন করেন। কেননা দৈনন্দিন জীবনে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের মধ্যে এগুলো আবশ্যকীয়ভাবে প্রয়োজন পড়ে। এর বিকল্প নেই। সুতরাং খামার ভিত্তিক পরিকল্পনা কৃষকের চলমান বা আবহমান বাস্তবতার ওপর নির্ভর করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পারলে শিরোনাম বাজিমাৎ। যেন একজন কৃষক-কৃষাণী তার চৌহদি থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছু অনায়াসে পেয়ে যায় এবং বাড়তি অংশ বাজারে বিকিয়ে অতিরিক্ত দু’পয়সা আয় করতে পারেন। এদেশে প্রতিটি পরিবার যদি সমৃদ্ধ হয়ে সুখে থাকে তাহলে নিশ্চিত সুখে থাকবে বাংলাদেশ।
বসতবাড়ির মডেল
একটি বাড়ি একটি খামার থিমটিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাটে ৪টি মডেলে বাস্তবায়ন করা যায়। প্রথমটি ভূমিহীন এবং প্রান্তিক কৃষকদের জন্যে, দ্বিতীয়টি ক্ষুদ্র বা ছোট কৃষকদের জন্যে, তৃতীয়টি মাঝিরি কৃষকদের জন্যে এবং চতুর্থটি বড় কৃষকদের জন্যে। এভাবে ক্যাটাগারি করে পরিকল্পনা মডেল তৈরি করলে সুষ্ঠু বাস্তবায়নের সুবিধা হবে এবং সফলতাও বেশি আসবে। মোটকথা ক্যাটাগরিক্যালি কৃষক নিজেদের অবস্থা, পরিসর, সম্পদ, পুঁজি, ক্ষমতা, সুযোগ এবং বাস্তবায়নের কারিশমা দিয়ে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। এক্ষেত্রে উদহারণ দিয়ে বলা যায় প্রান্তিক ক্ষুদ্র কৃষক যেখানে ঘরের চালে লাউ কুমড়ার চাষ করবে সেখানে বড় কৃষক তেপান্তরের কাছে মাঠজুড়ে লাউ কুমড়ার আবাদ করবে। আবার ভূমিহীন প্রান্তিক কৃষক যখন আঙ্গিনায় কলমি পুঁইশাকের আবাদ করবে সেক্ষেত্রে মাঝারি বা বড় কৃষক অবারিত পরিসরে লেটুস, পার্সলি, ক্যাপসিকাম, রামবুটান, স্বদেশী বিদেশী ফসলের মিশ্র চাষ করবে। ছোট কৃষক আপেল-বাউ-থাই কুলের বড় বাগান করবে। প্রতিটি মডেলে শাক সবজি, ফল, ফুল, মশলা, ভেষজ, কাঠ, বাহারী, দানাদার, তেল, ডালসহ সব আবশ্যকীয় ফসলের জীবন্ত ফসলপুরী গড়ে তুলবে। অর্থাৎ প্রতিটি মডেলে যৌক্তিক পরিকল্পনা করে স্বপ্নীল ভুবন সাজাতে হবে, বাজাতে হবে এবং আবশ্যই পরিচর্যা ব্যবস্থাপনা শতভাগ নিশ্চিত করে অনুসরণীয় মডেলে রূপান্তর করতে হবে।
মাঠফসল
মাঠ ফসর আমাদের কৃষিভিত্তিক খাদ্য যোগানের সিংহভাগ অবদান রাখে। সুতরাং তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মাঠ ফসলের প্রতি। জমি, অবস্থান, আবহাওয়া, শস্যবিন্যাস, চাহিদা, বাজার, জলবায়ু প রিবর্তন সর্বোপরি কৃষকদের চাহিদার সাথে সর্বোচ্চ সমন্বয় করে মাঠের কাব্যগাঁথা রচনা করতে হবে এবং ফসলবিন্যাসের মানচিত্র আঁকতে হবে। এতে খরচ যাবে কমে লাভ হবে বেশি। তবে আধুনিক মানসম্মত বীজ, সময় মতো বপন-রোপণ, অজৈব রাসায়নিক সারের সমন্বয়ে সুষম সার প্রয়োগ, সেচ ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই, সংরক্ষণ মোটকথা সমন্বিত কৃষিব্যবস্থাপনা অনুসরণ করে লাভজনক ফসল ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে।
পারিবারিক বাগান
বাড়ির আঙ্গিনার একচিলতে জমি পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় হয়ে ওঠতে পারে পরিবারের সারা বছরের পুষ্টির নিত্য যোগানদার। কৃষক পারে বিষমুক্ত নিত্য যোগানদার। কৃষক পারে বিষমুক্ত পছন্দের শাকসবজি খেয়ে সুস্থ জীবন যাপন করতে। বারমাসী মরিচ, সিংনাথ বেগুন, মাচায় চাউলে লাউ কুমড়া চালকুমড়ার লতানো বাহনি, গাঁদাফুলের বর্ণিলচ্ছটায় বসতবাড়ি আঙ্গিনাকে সাজারে অপরূপ সাজে। ছোট্ট জমিতে ভাগাভাগি করে ফলাতে হবে মৌসুমি শাকসবজি। একটি উদাহরণ দিয়ে নকশাটাকে বিশ্লেসন করা যায়।
১নং প্লটে ফুলকপি,
২নং প্লটে টমেটো,
৩নং প্লটে বাঁধাকপি,
৪নং প্লটে বেগুন,
৫নং প্লটে ওলকপি
৬নং প্লটে শালগম।
যথাযথভাবে উৎপাদন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। তবে রহস্য এবং কৌশল হলো অন্য জায়গায়। প্রতিটি প্লটের দু’পাশে-
১নং প্লটে পেঁয়াজ,
২নং প্লটে রসুন,
৩নং প্লটে ধনিয়া,
৪নং প্লটে লেটুস,
৫নং প্লটে আদা,
৬নং প্লটে মৌরি
এভাবে সাজিয়ে লাগাতে হবে। তাছাড়া বেড়া হিসেবে চারপাশে অড়হর লাগালে শুধু ফসল ফইনই আসবে না এদের ঝাঁঝালো গন্ধের কারণে অপকারি পোকামাকড় রোগ থেকে রক্ষা পাবে বাগানের ফসল। তাহলে শুধু কৌশল আর পরিকল্পনা কারণে রক্ষা পাবে পারিবারিক বাগানের ফসল। খরচ যাবে কমে লাভ হবে বেশি।
ঔষুধি বাগান
জীবন আছে বলে অসুখ আছে। সুখ পেতে হলে অসুখ দূর করতে হবে। আর অসুখ দূর করতে হবে ওষুধ দিয়ে। আমরা এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, ভেষজসহ নানাবিধ কৌশলে রোগ সারাবার চেষ্টা করি। কিন্তু একথা বিনয়ের সাথে স্বীকার করতেই হবে যে আমাদের অফুরন্ত ওষুধি গাছের ভাণ্ডার এখনো ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর আমাদের দৈনন্দিন জীবনের রোগব্যাধির উপশম করতে। আমাদের বসতবাড়ির নিম, তুলসী, বাসক, আকন্দ, হরিতকি, বহেরা, আমলকী কি এখনো আমাদের রোগগাঁথায় দাওয়াই হিসেবে বিপদে বন্ধুর কাজ করেনা? হাজারো ঐতিহ্যে ভরপুর এসব রোগবালাইনাশক অমূল্য সম্পদের নাম আমরা জানিও না, এদের পুরোপুরিভাবে চিনিও না। জীবনের সাময়িক দায় মেটাতে এসব চিরায়ত সম্পদকে কাজে লাগালে উপকার হবে আমাদের। তাই একটি পরিকল্পিত আধুনিক পারিবারিক ওষুধি বাগান প্রতিষ্ঠা করলে পারিবারিক অনেক তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান অনায়াসে করা যাবে।
মাছ
মাছ আমাদের আমিষের এবং অন্যান্য স্বাদের সহজিয়া উৎস। কিন্তু এখন আর আগের মতো প্রয়োজনে, ইচ্ছে অনুসারে মাছ খাওয়া যায়না। কারণ উৎপাদন কম, যোগান কম, দাম বেশি। কিন্তু একটি বাড়ি একটি খামার কর্মসূচির মাধ্যমে মাছের যেগান নিশ্চিত করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে এজমালি বা যৌথমালিকানার পুকুরে পরিকল্পিতভাবে আধুনিক উপায়ে মাছ চাষ করে যৌথভাবে লাভবান হওয়া যায়। যদি কোন কারণে যৌথমালিকানায় এ কাজটি সম্ভব না হয় তাহলে নতুন প্রযু্ক্তি খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি অবলম্বনে এ কাজটি অন্যভাবে সম্পাদন করা যায় আনায়াসে। শুধু কি তাই? ঘরের আশপাশে ডোবা/গর্ত/চৌবাচ্চা/টাঙ্কি পদ্ধতি অবলম্বনে পারিবারিক চাহিদা মেটাবার জন্যে মাছ উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া প্লাবনভূমিতে মাচ চাষ, পতিত জলাধারে মাছ চাষ, প্রতিবাড়ির প্রতিটি পুকুরে পরিকল্পিভাবে মাছ চাষ কর্মসূচির আওতায় এনে মাছে মাছে ভরে দেয়া যাবে এ বাংলার মৎস্য ভাণ্ডার, স্বাদ পাবে মানুষ, সমৃদ্ধ হবে মাছ ভিত্তিক পুষ্টি রেখা।
পশু ও পাখী এদেশে এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে ২/৪টি হাঁস-মুরগি, ছাগল-ভেড়া, গরু-মহিষ পালন করা না হয়। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই কখনো আধুনিক কলাকৌশল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি। এ কারণে আমরা রিটার্নও পাইনা তেমন। এক্ষেত্রে আধুনিক বৈজ্ঞানিক কৌশল অবলম্বন করে পরিকল্পিত উপায়ে লেয়ার, ব্রয়লার, দুধের জন্যে, মাংসের জন্যে ছাগল/ভেড়া/গরু/মহিষ পালন করা যায়। তবে জাত নির্বাচন, আবাসন, খাদ্য, চিকিৎসা, পুষ্টি, রেয়ারিং, কেয়ারিং মার্কেটিং এসব নিখুঁতভাবে হ্যাণ্ডেল করতে হবে খামার বাড়িতে। পরিবারের প্রয়োজন এবং ক্ষমতা অনুসারে ডিম মাংস, দুধ যোগানের জন্যে মুরগি, হাঁস, কবুতর, ছাগল, গরু, ভেড়া পালন করার সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
সরকারি দায় এবং দায়িত্ব
স্মরণ করতে চাই গেল টার্মে আওয়ামী সরকার বাস্তবায়িত একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ভেস্তে গেছে দলীয় সরকারের পরিবর্তনে। এবারও বিষয়টি শুরু হবে ঘটা করে এটা নিশ্চিত। কিন্তু বিনীত অনুরোধ মাননীয় দেশ পরিচালক, মাননীয় মন্ত্রীবর, মাননীয় প্রশাসক কার্যক্রমটি যেন ভালোভাবে শুরু হয়, স্থায়িত্ব পায় এবং টিকে যায় সুদূরের সীমানায়। অনাগত ভবিষ্যতে এটিকে আওয়ামী কার্যক্রম বলে কেউ যেন অবজ্ঞা বা অসম্মান করার সুযোগ না পায়। সে জন্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি প্রকল্পের আওতায় একার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কার্যক্রমটি একজন প্রতিথযশা বিজ্ঞ আগ্রহী কৃষিবিদ এবং তার পছন্দের অনুমোদিত একটি চৌকষ দল দিয়ে পরিচালিত করলে লাভ বেশি হবে অধিক রিটার্ন পাওয়া যাবে।
আর একটি কথা আগামী ৫ বছরে সারা বাংলার শতভাগ পরিবারকে একটি বাড়ি একটি খামার কার্যক্রমের আওতায় আনার কোন পরিকল্পনাই করা উচিৎ হবে না। বরং প্রতি গ্রামে দলমত নির্বিশেষে এমন একটি বাড়ি নির্বাচন করতে হবে যেখানে সব পরিকল্পিত প্রযুক্তি মূল্য পাবে, ভবিষ্যৎ উদহারণের মাইলস্টোন হিসেবে অনুপ্রেরণা যোগাবে। মোটকথা মডেল যখন সফল হবে তখন স্থিতি এমনিতেই মাত্রা পাবে। সফল একটি বাড়ি হাজারো বাড়ি হয়ে সারা বাংলায় আদর্শ বাড়ি হয়ে ছড়িয়ে পড়বে অনায়াসে।
সমন্বয় এবং সহযোগিতা
যদিও আমাদের দেশের কৃষকরা বৃহত্তর কৃষির সবক’টি সেগমেণ্ট একপরিসরে করে থাকেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এসব তথ্য প্রযু্ক্তি পাবার জন্যে বিভিন্ন বিভাগ সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে হয়। এতে সফলতা বাধাগ্রস্ত হয়, গতি হ্রাস পায় । এজন্য কৃষি সমপ্রাসারণ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে মৎস্য, পশুসম্পদ, বন, পুষ্টি, পরিবেশ সহ সকল সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আবশ্যকীয় দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। কার্যকর পরম ফলপ্রসূ না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম সর্বোচ্চ গুরুত্ব আর মূল্য দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। মনে রাখতে হবে এ কার্যক্রমটি যথাযথভাবে করতে পারলে কৃষি ব্যবস্থাপনায় যেমন খরচ কমে যাবে, লাভ বেডিশ হবে সর্বোপরি পরিবেশ সম্মত কৃষি কার্যক্রম দেশ এবং জাতির উন্নয়নের গতিতে নতুন মাত্রা এনে দেবে। এ ব্যাপারে প্রতি গ্রামে, ইউনিয়নে, উপজেলায়, জেলায়, অঞ্চলে এবং জাতীয় এখাএবা (একটি বাড়ি একটি খামার) কমিটি থাকবে। নীতি প্রবিধান অনুসরণ করে কমিটি কার্যক্রমের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন। প্রতিটি কমিটিতে কৃষি বিভাগের নেতৃত্বে মৎস্য, পশুসম্পদ সহ অন্যান্য সহযোগী সংশ্লিষ্ট সংস্কার প্রতিনিধি কর্যকরবাবে সম্পৃক্ত থাকবেন। এদের জবাবদিহিতার জন্যে ৩ বা ৪ টায়ারের মনিটরিং সেল/কমিটি থাকবে যারা নির্দিষ্ট সময়ান্তে তদারকি করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানসহ আনুসাঙ্গিক ব্যবস্থা নেবেন।
খামারভিত্তিক বাজার ব্যবস্থা
কোন উৎপাদনই কাজে আসবে না কৃষক স্বস্তি পাবে না যে পর্যন্ত না কৃষকের উৎপাদিত পণ্য যথাযথভাবে বাজারজাত না হয় এবং কৃষক যথোপযুক্ত মূল্য না পায়। এজন্য কৃষকবান্ধব কৃষক নিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ইতোমধ্যে এনসিডিপি পরিচালিত কৃষকনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এবং সাফল্যজনকভাবে কার্যক্রম চলছে কিছু কিছু এলাকায়। এ মডেল বাজার ব্যবস্থাকে সারা বাংলাদেশ ছড়িয়ে দিতে হবে। খুব করে মনে রাখতে হবে কৃষক যদি তার উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পায় তাহলে সব পরিকল্পনা কার্যক্রম কর্মসূচি ভেস্তে যাবে যেটি আমরা কেউ চাই না। বাংলার কৃষককে, চাইনা ঠকাতে ভোক্তাদের একই সাথে শর্টকাট উপায়ে লাভবান করতে চাইনা মধ্যস্বত্বভোগী দালাল ফড়িয়াদের।
খামার বাড়ির ডিজিটাইজেশন
প্রতিটি কৃষক খামার বাড়িতে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে ২৪ ঘণ্টা সংযোগ থাকবে। যেখান থেকে কৃষক নিমিষে কৃষি তথ্য আদান প্রদান করবেন, বাজরজাতকরনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য কার্যক্রম অনায়াসে চালিয়ে নিতে পারবেন। আন্তঃব্যাক্তি যোগাযোগের মাধ্যমে সামাজিক তথ্য যোগাযোগকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে এ ধারায়। তখনই এক এক একটি কৃষক বাড়ি ডিজিটাল বাংলার অনন্য উদাহরণ হয়ে স্থান পাবে ইতিহাসের স্বর্ণালী পাতায়। পরিকল্পিতভাবে এ কার্যক্রমরে আওতায় ডিজিটাল ক্যামেরা, স্ক্যানার, প্রিন্টার, মোবাইলফোনসহ সব ডিজিটাল সুযোগ সুবিধা থাকরে যেখানে কৃষক বা কৃষকদল মাঠ সমস্যার ফটো তুলে স্কেনিং এর পর ইন্টারনেটে যথাস্থানে পৌঁছিয়ে প্রয়োজনীয় সমাধান পেয়ে যাবেন। নিজে জানবেন পাশের কৃষককে জানাতে পারবেন।
শেষ কথা
তোমার হলো শুরু আমার হলো সারা। না এটা হবে না এটা হওয়া উচিত হবে না। হতে হবে তোমার হলো সারা আমার হলো শুরু এবং এ শুরু যেন চিরস্থায়ী রূপ পায়। লেখাটি শিরোনাম ভিত্তিক সংক্ষেপ সার। বাস্তাবায়নের জন্য একদল চৌকষ অভিজ্ঞ এবং কারিশমেটিক কৃষিবিদ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে হবে যারা অতিদ্রুত সব কিছুর একটি সহজ সরল বিস্তারিত পরিকল্পনা অনুসরণীয়পথ বাতলিয়ে দেন। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিটি কৃষক বাড়ি যেন ডিজিটাল বাংলাদেশের এক একটি ডিজিটাল কৃষি খামার বাড়িতে পরিণিত হয় যেখান থেকে উৎসরিত হবে সফল কৃষির ব্যঞ্জরিত সুমধুর তান। তখন সমৃদ্দ হবে বাংলার কৃষিভান্ডার। নতুনভাবে প্রাণ পাবে চিরায়ত বাংলার কৃষি। আমাদের কৃষির জয়তানে বিশ্ব থমকে যাবে নতুন করে চিনবে কৃষি প্রধান বাংলাদেশকে।
লেখক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, ফার্ম ব্রডকাস্টিং অফিসার
কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেইট, ঢাকা।
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।