মাছে ফরমালিন আছে কি নাই চিনবেন যেভাবে, খেলে কি হয়
দিন দিন ফরমালিনের ব্যাবহার ভয়াবহ ভাবে বেড়ে চলছে। বাজারের ৮৫% মাছেই বিষাক্ত ফরমালিন মেশানো হচ্ছে । বাংলাদেশের যে কোন অঞ্চলের বাজারেই ফরমালিন যুক্ত মাছের রমরমা ব্যবসা। সাধারণত মাছ যাতে তাড়াতাড়ি না পচে যায় তার জন্য আগে বরফ ব্যবহার করা হত। সময়ের পরিক্রমায় আজ তা ঠেকেছে ফরমালিনে।
মাছ মারা যাওয়ার পর দ্রূত পচতে শুরু করে। পচনের এই হার নির্ভর করে মাছের শরীরস্থ অনুজীবের (মূলত ব্যকটেরিয়া) কর্মশীলতার উপর। মৃত মাছের শরীরের পরিবেশ অনুজীবের জন্য যতটা উপযুক্ত হয় ততটা বেশি কর্মশীলতা এরা প্রদর্শণ করে। সাধারণত কম তাপমাত্রায় এসব অনুজীবের কর্মতৎপরতা হ্রাস পায়। তাই বরফ সংযুক্ত করে মৃত মাছ পরিবহণ ও সংরক্ষণ একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। এছাড়াও নানাবিধ রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতিতে এসব অনুজীব মারা যায় বা এর কর্ম তৎপরতা লোপ পায়। তেমনই একটি রাসায়নিক পদার্থ হল ফরমালিন। ফরমালিনের মাধ্যমে অল্প খরচে দীর্ঘ সময়ের জন্য মাছ সংরক্ষণ করা যায় বলে এর ব্যবহার অধিকমাত্রায় পরিলক্ষিত হয়।
ফর্মালিন (রাসায়নিক সংকেত -CHO-) হল ফর্মালডিহাইডের পলিমার। ফর্মালডিহাইড দেখতে সাদা পাউডারের মত। পানিতে সহজেই দ্রবনীয়। শতকরা ৩০-৪০ ভাগ ফর্মালিনের জলীয় দ্রবনকে ফর্মালিন হিসাবে ধরা হয়। ফর্মালিন বস্তুটা মূলত টেক্সটাইল, প্লাষ্টিক, পেপার,রং,কনস্ট্রাকশন ও সর্বোপরি মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
টাটকা মাছ বা ফরমালিন বিহীন মাছ দেখতে যেমন হবে
-ফুলকা উজ্জ্বল লাল বর্ণের হয়
-আঁইশ উজ্জ্বল হয়
-শরীরে আঁশটে গন্ধ পাওয়া যায়
-মাছের দেহ স্বাভাবিক নরম হয়
-চোখ উজ্জ্বল হয়
-ত্বকের আঁশ পিচ্ছিল থাকে
ফরমালিন যুক্ত মাছ দেখতে যেমন হবে
-ফুলকা ধূসর ও ফরমালিনের গন্ধ পাওয়া যায়
-আঁইশ তুলনামূলক ধূসর বর্ণের হয়
-শরীরে আঁশটে গন্ধ কম পাওয়া যায়
-দেহ তুলনামূলক শক্ত হয়
-চোখ ঘোলাটে হয়
-যেসব মাছে ফরমালিন ব্যাবহার করা হয় সেসব মাছে সাধারণত মাছি বসে না
মাছ থেকে ফরমালিন দুর করার উপায়
-রান্নার আগে কাঁচা মাছ ১ ঘণ্টা লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এতে ফরমালিনের পরিমাণ ৯০ শতাংশ কমে যাবে।
-প্রথমে চাল ধোয়া পানিতে ও পরে সাধারণ পানি দিয়ে মাছ ধুলেও ফরমালিনের পরিমাণ অনেকটা কমে যায়।
-মাছ রান্না করার আগে এক পাতিল পানিতে ৫ চামচ ভিনিগার মিশিয়ে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এতে মাছ পুরোপুরি ফরমালিন মুক্ত হয়।
-লবনাক্ত পানিতে ফর্মালিন দেওয়া মাছ ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ফর্মালিনের মাত্রা কমে যায়
-সবচাইতে ভাল পদ্ধতি হচ্ছে ভিনেগার ও পানির মিশ্রণে ১৫ মিনিট মাছ ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ ফর্মালিনই দূর হয়।
ফরমালিন যুক্ত খাবার খেলে কি হয়
-ফরমালিন মানুষের কিডনী ও লিভারকে অকেজো করে
-স্মৃতিশক্তি- বিশেষ করে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা, দিন দিন কমিয়ে দেয়
-পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালীতে ক্যান্সার সৃষ্টি করে
-ফরমালিন যুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে গর্ভবতী মায়েদের সন্তান প্রসবে জটিলতা, জন্মগতত্রুটি নিয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করতে পারে
-মাছে ফরমালিনের মাত্রা বেশী থাকলে সে ক্ষেত্রে খাওয়ার পর মানুষের শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে
-মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়।
-দৈহিক স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এগ্রোবাংলা ডটকম