বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে থাই কই চাষ
প্রাচীন কাল থেকেই কই একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু মাছ হিসাবে সমাদৃত। এক সময় বাংলাদেশের নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর, বাওড় ও প্লাবন ভূমিতে প্রচুর পরিমাণে কই পাওয়া যেত। আবহমান কাল থেকে আমাদের দেশে জীয়র মাছ হিসাবে কই মাছকে অতিথি আপ্যায়নের জন্য পরিবেশণ করা অত্যন্ত আন্তরিকতা ও সম্মানের বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সে সময় এ মাছ যেমন সহজলভ্য ছিল তেমনি এর দামও ছিল ক্রয়সীমার মধ্যে। কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন কারণে অন্যান্য মাছের সঙ্গে কই মাছও তার পূর্বের অবস্থানে নেই। তবে এর সার্বজনীন চাহিদা ও মূল্য সব সময়ই আভিজাত্য বজায় রেখে চলেছে। সেই বিবেচনাতে কই বিশেষতঃ থাই কই-এর বাণিজ্যিক চাষ একটি লাভজনক প্রকল্প হিসাবে বিবেচতি হয়ে থাকে। তাই বাণিজ্যিকভিত্তিতে পরিকল্পিতভাবে থাই কই চাষ করে যে কেউ হতে পারেন একজন সফল খামারী।
থাই কই চাষের সুবিধাঃ
১) চাহিদা সব সময় বেশি বলে এর মূল্য তুলনামূলকভাবে সব সময় বেশি থাকে।
২) বিরূপ পরিবেশেও বেঁচে থাকতে সক্ষম এবং মৃত্যুর হার খুবই কম।
৩) অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়।
৪) ছোট পুকুর বা খাঁচায় চাষ করা সম্ভব।
৫) তুলনামুলকভাবে অল্প সময়ে অর্থাৎ ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই বিক্রয়যোগ্য হয়।
৬) অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং বৎসরে একাধিকবার চাষ করা যায়।
৭) রোগবালাই নেই বললেই চলে।
৮) তুলনামূলক অল্প পঁজিতেই চাষ করা সম্ভব।
৯) ফর্মুলা অনুযায়ী নিজ ঘরের কই-এর পিলেট তৈরী করা সম্ভব।
১০) কই মাছ মূলত কীট-পতঙ্গভূক। একারণে পোকামাকড়, ছোট মাছ, ব্যাঙের পোনা, শামুক, ঝিনুকের মাংস ইত্যাদি সরবরাহ করে এ মাছ চাষ করা যায়।
চাষ পদ্ধতিঃ
থাই কই এবং আমাদের দেশীয় কই- এর মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই বললেই চলে। তবে থাই কই সাধারণগত দেশী কই-এর চেয়ে চ্যাপ্টা এবং এর শরীরের পিছনের দিকে কিছু কালো দাগ (spot) থাকে। এ মাছ দ্রুত বর্ধনশীল। একে পুকুর বা খাচাঁয় (কেজ কালচার) চাষ করা সম্ভব। তবে, পুকুরে চাষ করাই বেশি লাভজনক।
পুকুর নির্বাচন এবং প্রস্তুতিঃ
পুকুর রৌদ্র আলোকিত খোলামেলা জায়গায় হাওয়া উত্তম এবং পাড়ে ঝোপ- জঙ্গল থাকলে তা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। পাড়ে বড় গাছপালা থাকলে সেগুলোর ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে এবং দিনে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা রৌদ্রালোক পড়া নিশ্চিত করতে হবে। থাই কই চাষের জন্য তুলনামূলকভাবে ছোট পুকুর বিশেষভাবে উপযুক্ত। পুকুরের আয়তন ২০-৩০ শতকের মধ্যে হওয়াই ভাল। এতে করে ব্যবস্থাপনার সুবিধা হয়। পুকুরের গভীরতা বেশি না হয়ে ৫-৬ ফুট হওয়া উত্তম। প্রথমে পুকুরটি সেচ করে শুকিয়ে ফেলতে হবে। পুকুরে অতিরিক্ত কাদা থাকলে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে কারণ অতিরিক্ত কাদা পুকুরে গ্যাস সৃষ্টি করে যা পুকুরের শুকানোর পর তলার মাটি রৌদ্রে ফেটে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অতঃপর সেখানে আড়াআড়িভাবে ০২টি হালের চাষ দিতে হবে। তলায় কাদা হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকলে হালকা করে কিছু বালি (দালান-কোঠা নির্মাণের জন্য বালু ব্যবহৃত হয়) ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে। এর ফলে পুকুরের তলায় গ্যাস হবে না, পানি পরিষ্কার এবং পরিবেশ ভাল থাকবে।
চুন এবং সার প্রয়োগঃ
আড়াআড়িভাবে ০২টি হালের চাষ দেয়ার পর প্রতি শতাংশ ১ কেজি হিসাবে পাথুরে চুন (আগের দিন গুলিয়ে রেখে পরের দিন) পুকুরের পাড়সহ সর্বত্র এমনভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে যেন মনে হয় সমগ্র পুকুরটি সাদা কাপড়ে মুড়ে দেয়া হয়েছে। চুন প্রয়োগের ৩-৫ দিন পর প্রতি শতাংশ ৫ কেজি পচা গোবর অথবা ৩ কেজি মুরগির বিষ্ঠা ছিটিয়ে দিতে হবে। জৈব সার প্রয়োগের ২-৩ দিন পর পুকুরে ৪-৫ ফুট পানি প্রবেশ করাতে হবে। পানি প্রবেশ করানোর পর প্রতি শতাংশে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২০০ গ্রাম টিএসপি গুলে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পুকুরে থাই কই-এর পোনা মজুদ করতে হবে। অন্যদিকে পুকুরে যদি পানি থাকে কিংবা কোনো কারণে পুকুর শুকানো সম্ভব না হয় তবে সেক্ষেত্রে পুকুরে যেন রাক্ষুসে মাছ না থাকে, তা প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনমত রোটেনন ব্যবহার করা যেতে পারে। পুকুর জলজ আগাছা এবং রাক্ষুসে মাছ মুক্ত করার পর প্রতি শতাংশে ১ কেজি পাথুরে চুন গুলিয়ে পাড়সহ পানিতে প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের ৩-৫ দিন পর প্রতি শতাংশে ৫ কেজি পঁচা গোবর, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২০০ গ্রাম টিএসপি গুলিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পানি হালকা সবুজ হলে থাই কই-এর পোনা অবমুক্ত করতে হবে।
পুকুরে বেষ্টণী প্রদান এবং পোনা অনুমুক্তঃ
কই এমন একটি জিয়ল মাছ যার অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ আছে। তাই বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে সক্ষম হওয়ায় পানির উপরে এরা দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে। বৃষ্টির সময় এরা কানকুয়া ব্যবহার করে অতি দ্রুত চলতে পারে। সেজন্য যে পুকুরে কই-এর চাষ করা হবে তার পাড় অবশ্যই নাইলনের ঘন জাল দ্বারা ঘিরতে হবে। নতুবা পুকুরে খুব কম পরিমাণ কই পাওয়া যাবে। ছোট ফাঁসযুক্ত জাল দ্বারা পুকুরটি ভালোভাবে ঘেরার পর পুকুরে প্রতি শতাংশে নার্সিংকৃত এক থেকে দেড় ইঞ্চি মাপের ৩০০-৩২৫ টি কই-এর পোনা মজুদ করতে হবে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
থাই কই একটি দ্রুত বর্ধনশীল মাছ। সেজন্য পর্যাপ্ত খাবার প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য ব্যবস্থাপনা দুই ভাবে করা যেতে পারে।
প্রথমতঃ রাফ খাবার ব্যবস্থাপনা এবং
দ্বিতীয়তঃ গুণগত মানসম্পন্ন বার্ণিজ্যিক খাবার ব্যবস্থাপনা।
রাফ খাবার ব্যবস্থাপনাঃ
প্রথমেই বলে নেয়া ভাল যে, রাফ খাবার ব্যবস্থাপনায় দক্ষ না হলে কই-এর বৃদ্ধি অনেক সময় ভাল নাও হতে পারে। এটি মূলতঃ দরিদ্র মৎস্য চাষীদের প্রাথমিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে শামুক বা ঝিনুকের মাংস, ব্যাঙের পোনা, গরু বা মুরগির নাড়িভূড়ি কিংবা ফিসমিল (নিয়মিতভাবে নয়), কুড়া, ভুষি, খৈল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যে কোনো একটি খাবার নিয়মিত ব্যবহার করে অন্যগুলো আংশিক ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। উন্নত রাফ খাবার হিসাবে ফিসমির ২৫%, কুড়া ৩০%, খৈল ২৫% এবং ভুষি ২০% একত্রিত করে বল অথবা পিলেট আকারে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়ায় সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে একমাত্র খৈল বাদে অন্য উপাদানগুলো উলি্লখিত অনুপাতে বেশি পরিমাণে মিশ্রিত করে একটি মিশ্রণ তৈরি করে রাখতে হবে। অতঃপর প্রতিদিন মাছের দৈহিক ওজন অনুযায়ী যে পরিমাণ খাদ্য হবে তার তিনভাগ তৈরিকৃত মিশ্রণ থেকে এবং অন্য একভাগ খৈল পানিতে ৬-১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে তার মধ্যে উক্ত মিশ্রণ মিশিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করে নির্দিষ্ট ৪-৫ টি জায়গায় প্রতিদিন প্রদান করতে হবে। যে সকল জায়গায় খাদ্য দেয়া হবে সে সকল জায়গা বাঁশের খুঁটি পুতে চিহ্নিত করা উচিত। এছাড়া অন্যান্য রাফ খাবার যেমন- শামুক, ঝিনুকের মাংস, মুরগি ও গুরুর ভুড়ি ইত্যাদি পরিমাণমত ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, কোনো ক্রমেই যেন পানি নষ্ট না হয়। তবে কেই যেহেতু কীট ভোজী মাছ সেজন্য পর্যাপ্ত দৈহিক বৃদ্ধির জন্য পানির ৬-৮ ইঞ্চি উপরে রাত্রে একাধিক বৈদু্যতিক বাল্ব জ্বালালে সেখানে প্রচুর কীট-পতঙ্গ আসবে এবং উড়তে উড়তে এক পর্যায়ে পানিতে পড়ে যাবে যা কই-এর তাৎক্ষণিক খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হবে। এচাড়া রাপ খাবার হিসাবে কম দামী মাছ যেমন ২০০ গ্রাম ওজনের সিলভার কাপ, বড় আকৃতির আফ্রিকান মাগুর, ফার্মের মৃত মুরগি কিংবা গরুর মাংসের ছোট ছোট টুকরো (কই খেতে পারে সেরকম টুকরো) করে সরাসরি দেয়া যেতে পারে অথবা সেগুলো রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ পূর্বক প্রতিদিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে হালকা সিদ্ধ করে দিতে হবে কিংবা নিদেনপক্ষে পানিতে দুই এক ঘন্টা ভিজিয়ে তারপর দেয়া উচিত। হালকা সিদ্ধ করে দিলে দৈহিক বৃদ্ধি আশানুরূপ হয়ে থাকে।
গুণগতমান সম্পন্ন বাণিজ্যিক খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
বাণিজ্যিভবে নিয়মিত কই-এর উৎপাদন পেতে হলে গুণগতমান সম্পন্ন পিলেট খাবার প্রদান করা উচিত। এক্ষেত্রে বাজার থেকে কই-এর জন্য তৈরীকৃত পিলেট খাবার (প্রোটিনের পরিমাণ ৩০%৩৫) অথবা যদি তা না পাওয়া যায় তাহলে চিংড়ির জন্য তৈরি খাবার ব্যবহার করা যেতে পারে। উপরোক্ত কোনোটিই না পাওয়া গেলে যদি বাসায় পিলেট খাবার প্রস্তুত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নিম্নের ফর্মূলাটি অনুসরণ করা যেতে পারে।
উপাদানের নাম | শতকরা হার | প্রোটিনের পরিমাণ (প্রায়) | বাজার মূল্য (টাকা-প্রায়) |
ফিসমিল |
২৫% |
১৩.৭৫% |
৬২৫.০০ |
বোন এন্ড মিট মিল |
০৮% |
৩.৫% |
২০০.০০ |
ব্লাড মিল |
০৭% |
৪.৯% |
১৭৫.০০ |
সরিষা খৈল |
২০% |
৬.৬% |
২৮০.০০ |
ধানের কুড়া |
১৭% |
২.১% |
১২০.০০ |
গমের ভুষি |
১০% |
১.৭% |
১২০.০০ |
আটা |
৫% |
.৯% |
৭৫.০০ |
চিটাগুড় |
৫% |
.৮% |
৭৫.০০ |
ঝিনুকের গুঁড়া |
১% |
০০% |
২৫.০০ |
প্রিমিক্স |
১% |
০০% |
১৫০.০০ |
লবণ |
১% |
০০% |
১২.০০ |
এ্যান্টি টক্সিক উপাদান |
|
|
|
সর্বমোট |
১০০% |
৩৪.২৫% |
১৮৫৭.০০ |
সূত্রঃ গলদা চিংড়ি চাষ, মাহমুদুল করিম, আই এফ ডি সি (পরিবর্তীত আকারে)
বোন এন্ড মিট মিল বা ব্লাড মিল না পাওয়া গেলে ফিশমিল দিয়ে পূরণ করা যায়। উপরোক্ত ফর্মুলা অনুযায়ী ৩৩-৩৪% আমিষ সমৃদ্ধ খাবার তৈরি করতে প্রতি কেজির মূল্য আনুমানিক ১৮.৫৫ টাকা হতে পারে। এই মানের খাবার বাজার থেকে কিনতে গেলে তার সম্ভাব্য মূল্য হবে নূ্ন্যপক্ষে ২৭-৩০ টাকা বা আরো বেশি। বাড়িতে খাবার তৈরি করলে খাবারের উপাদানগুলো দেখে শুনে ক্রয় করা উচিত যাতে খাবারের গুণগতমান নিশ্চিত হয়। ১৫ দিন কিংবা সর্বোচ্চ এক মাসের খাবার একসঙ্গে তৈরি করা উচিত। খাবার তৈরির জন্য একটি পিলেট মেশিন জরুরি যা যে কোনো লেদ মেশিনে অর্ডার দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। প্রতি ঘন্টার ২৫ কেজি ক্ষমতা সম্পন্ন্ একটি পিলেট মেশিনের দাম পড়তে পারে সর্বোচ্চ ১৫০০০.০০ টাকা। বাড়িতে পিলেট তৈরি করার ক্ষেত্রে খৈল এবং চিটাগুড় ব্যতীত অন্যান্য সকল উপাদান ভালভাবে মিশ্রিত করতে হবে। অতঃপর পূর্ব থেকে ভিজিয়ে রাখা নির্দিষ্ট পরিমাণ খৈল এবং চিটাগুড়ের সঙ্গে অন্যান্য উপাদানগুলো মিশিয়ে সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে মেখে তা পিলেট মেশিনে দিতে হবে। পিলেট তৈরি হয়ে গেলে রৌদ্রে শুকিয়ে বস্তায় সংরক্ষণপূর্বক প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে হয়।
খাদ্য প্রদানের মাত্রাঃ
বাণিজ্যিকভাবে থাই কই চাষে প্রথম দিকে খাদ্য প্রদানের হার বেশি রাখতে হয় এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তা কমাতে হয়। এক্ষেত্রে প্রথম মাসে আনুমানিক দৈহিক ওজনের ১০%, দ্বিতীয় মাসে ৬%, তৃতীয় মাসে ৪% এবং ৪র্থ মাসে ৩% হারে খাবার দেয়া উচিত। দৈহিক ওজনের উপর ভিত্তি করে প্রতি দিন যে পরিমাণ খাবার হবে তা দু’ভাগ করে সকল চাষী ভাই মাছের দৈহিক ওজনের উপর ভিত্তি করে খাদ্য পরিবেশন করাকে কঠিন বলে মনে করেন তাদের সুবিধার্থে খাদ্য পরিবেশনের আর একটি সহজ পদ্ধতি প্রদত্ত হলো।
এক্ষেত্রে প্রতি ১০০০টি থাই কই-এর জন্য প্রতিদিন যে পরিমাণ খাদ্য প্রদান করতে হবেঃ
১ম- ১৫ দিন – ৪০০ গ্রাম
২য় -১৫ দিন – ৬০০ গ্রাম
৩য় -১৫ দিন- ৮৫০ গ্রাম
৪র্থ- ১৫ দিন- ১০০০ গ্রাম
৫ম -১৫ দিন- ১২০০ গ্রাম
৬ষ্ঠ -১৫ দিন- ১৩০০ গ্রাম
৭ম- ১৫ দিন- ১৩৫০ গ্রাম
৮ম- ১৫ দিন – ১৪০০ গ্রাম
বিঃ দ্রঃ মাছের একটি সম্ভাব্য ওজন বৃদ্ধি উল্লেখিত মাত্রায় খাদ্য বাড়ানো হয়েছে। তবে এটি কমবেশি হতে পারে। এভাবে খাদ্য দিলে প্রতি কেজি মাছ উৎপাদন করতে ২.২৫ কেজি খাদ্য লাগতে পারে।
মজুদ পরবর্তী সার ব্যবস্থাপনাঃ
রাফ খাবার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যেহেতু পুরোপুরি গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয় না সেজন্য পানিতে যাতে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য তেরি হয়ে সে সেলক্ষ্যে প্রতি সপ্তাহে প্রতি শতাংশ ১.৫ কেজি পঁচা গোবর, ১০০ কেজি ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি পানিতে ২৪ ঘন্টা গুলিয়ে রৌদ্রে আলোকিত সকাল ছিটিয়ে দিতে হবে। গুণগত মানসম্পন্ন পিলেট খাবার সরবরাহ কররে স্বতন্ত্রভাবে সার দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কয়েকদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি হলে এবং আকাশ মেঘলা থাকলে সার না দেয়া উত্তম। তাছাড়া পানিতে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাবার থাকলেও সার দেয়ার প্রয়োজন নেই।
অন্যান্য ব্যবস্থাপনাঃ
অতিরিক্ত খাবার এবং সার (বিশেষতঃ রাফ খাবার) ব্যবহারের জন্য কিংবা কোনো কারণে পানি যদি অতিরিক্ত শ্যামলা ও দুর্গন্ধযুক্ত হয় অথবা পানিতে এমোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি গ্যাস সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে প্রতি ১৫ দিন অন্তর গোল্ডেন ব্যাক নামক ঔষধ অথবা না পাওয়া গেলে ২৫০ গ্রাম চুন গুলে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তারপরও হঠাৎ যদি রোগ দেখা যায় তাহলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ নেয়া উচিত।
পরিচর্যা
* কৈ চাষে পানির গুণাগুণ রক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, নিয়মিত পানির (পিএইচ) নির্ণয় করা আবশ্যক।
* ফাইটোপ্লাঙ্কটনের প্রতি কৈ মাছের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। এ কারণে পানিতে ফাইটোপ্লাঙ্কটন ব্লুম থাকা যাবে না। কৈ চাষের পুকুরে চাষকালীন সারের তেমন প্রয়োজন নেই।
* কানকো দিয়ে হেঁটে বৃষ্টির সময় অনেক দূর চলে যায়। এ সমস্যা সমাধানে পুকুরের চারদিকে প্লেট শিট টিন বা নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে দিতে হবে।
* আমাদের দেশে কৈ চাষে ক্ষতরোগ দেখা গেছে এবং কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ সমস্যা হলেও পুকুর প্রস্তুতি যথাযথভাবে সম্পাদন করার পর চাষকালে প্রতি মাসে একবার পানিতে ‘জিওলাইট’ এবং ৪০ দিন অন্তর প্রোবায়োটিকস ‘গোল্ডেন ব্যাক’ প্রয়োগ করা আবশ্যক। তা ছাড়া সমস্যা দেখা দিলে প্রতি শতাংশে প্রতি তিন ফুট পানির জন্য এক কেজি হারে খাবার লবণ প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ধরনের সমস্যায় খাবারের সঙ্গে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
* যেকোনো সমস্যায় মৎস্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা ভালো।
* মানসম্মত খাবার যারা সরবরাহ করতে পারবে তাদের কাছ থেকে রেডি ফিড নেওয়া আবশ্যক। কৈ মাছের জন্য সুপার অ্যাগ্রোফিডস আলাদা ধরনের মানসম্মত খাবার বাজারজাত করছে।
* মানসম্মত পোনা সরবরাহ করা আবশ্যক। অনেকে থাইল্যান্ড থেকে পোনা এনেছিলেন, কিন্তু মৃত্যুর হার বেশি হওয়ায় কেউ কেউ হতাশ হয়েছেন। আমাদের দেশে থাই কৈয়ের পোনা উৎপাদিত হচ্ছে, যা যথেষ্ট মানসম্মত এবং মৃত্যুর হার কম।
মাছ ধরা এবং বিক্রিঃ
উপরোক্ত নিয়মে কই মাছ চাষ করলে প্রতি ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে তা বিক্রয়ের উপযোগী হয়। এ সময় এদের প্রতিটার দৈহিক ওজন সাধারণতঃ ৪০-৮০ গ্রাম বা ৬০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিক্রয়ের জন্য খুব ভোরে কই মাছ ধরা উচিত। সব মাছ একত্রে ধরতে হলে পুকুর শুকিয়ে ফেলা উত্তম। দ্রুত বাজারজাত করতে হবে।
আয়-ব্যায়ঃ
গুণগত মানসম্পন্ন পোনা ছেড়ে উপরোক্ত পদ্ধতিতে থাই কই চাষ করতে পারলে তা থেকে ভাল মুনাফা করা সম্ভব। সে হিসাবে এক শতাংশ পরিমাণ একটি জলাশয়ের আনুমানিক হিসাব হতে পারেঃ
ব্যায়ঃ ২/- টাকা হিসাবে ৩০০টি পোনার দাম ৩০০×২ = ৬০০.০০
পুকুর প্রস্তুতি খরচ = ২০০.০০
পিলেট খাদ্য প্রস্তুত/ক্রয়বাবদ (২৭/=টাকা কেজি হিসাবে) = ৩০×২৭ = ৮১০.০০
(১ কেজি মাচের জন্য ২.২৫ কেজি খাদ্য হিসাবে)
বিবিধ খরচ = ১৮০.০০
মোট = ১৭৯০/- টাকা
আয়ঃ মাছের মৃতু্যহার ১০% হলে জীবিত মোট মাছের সংখ্যা হবে ২৭০টি (৩০০টি মধ্যে), প্রতিটির গড় ওজন ৫০ গ্রাম হিসাবে মোট ওজন হবে ১৩.৫ কেজি প্রতি কেজি মাছের দাম ২০০/- টাকা হিসাবে মোট মূল্য হবে ১৩.৫×২০০ = ২৭০০/- টাকা।
নীট লাভ =
মোট আয়-মোট ব্যয়= ২৭০০-১৭৯০=৯১০/- টাকা। ১ বিঘা বা ৩৩ শতাংশের একটি পুকুর হলে সেখান থেকে ৪ মাসের মধ্যে আনুমানিক মোট ৯১০×৩৩ = ৩০,০৩০/- টাকা মুনাফা করার সম্ভাবনা রয়েছে। নিজে বাড়িতে খাবার তৈরি করতে পারলে লাভের হার আরো বেশি হবার সম্ভাবনা আছে। এভাবে বছরে দু’বার চাষ করতে পারলে মোট নীট মুনাফা হতে পারে ৩০,০৩০×২ = ৬০,০৬০/- টাকা।
টাকার হিসাব সমূহ বর্তমান সময়ের সাথে সম্বনয় করে নিতে হবে
লেখক:এ.কে.এম রোকসানুল ইসলাম, ডেপুটি কোঅর্ডিনেটর
যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, খুলনা।
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।