আরএএস পদ্ধতিতে মাছ চাষে ৩০ গুন লাভ
মৎস চাষের অনেক উপায়ের মধ্যে আরএএস বা RAS (রাস ) একটি আধুনিক মৎস্য চাষ পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হল অল্প জায়গায় অধিক মান সম্মত মাছ উৎপাদন। এই পদ্ধতিতে পুকুরের পরিবর্তে একাধিক বিভিন্ন আকৃতির ট্যাংক ব্যাবহার করে মাছ চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিতে একই পানি পুনরায় ব্যাবহারের জন্য বিভিন্ন রকম ফিল্টার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আরএএস পদ্ধতিতে দেশী শিং, দেশী-বিদেশী মাগুর, পাবদা, টেংরা বা গুলশা, তেলাপিয়া, পাংগাস, চিংড়ি, ভেটকি ইত্যাদি নানা প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। আরএএস (রিসাকুলেটিং এ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম)পদ্ধতিতে পুকুর থেকে ৩০ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
আরএএস পদ্ধতিতে যেসব মেশিনারী লাগে
-কালচার ট্যাংক
-ম্যাকনিক্যাল ফিল্টার
-বায়োলজিক্যাল ফিল্টার
-প্রোটিন স্কিমার
-ইউভি স্টেরিলাইজার
-পানির পাম্প
-অক্সিজেন জেনারেটর সহ আরো অনেক যন্ত্রপাতি ।
যেভাবে কাজ করে আরএএস (RAS)
মাছ পালনের জন্য বসানো প্রতিটি ট্যাঙ্কে পাইপ দিয়ে মেকানিক্যাল ফিল্টার যুক্ত করা থাকে। এ ফিল্টার প্রতিটি ট্যাঙ্কের মাছ ও মৎস্য খাদ্যের বর্জ্য পরিষ্কার করে। পরে এ পরিষ্কার পানি পাম্প দিয়ে বায়োফিল্টারে তোলা হয়। মাছের বৃদ্ধি যেন বাধাগ্রস্থ না হয়, সে জন্য পানি পরিশোধন করা হয়।
সার্বক্ষণিক ফিল্টারিংয়ের ফলে পানি পরিশোধন হয় আর পরিশোধিত পানির ১০ শতাংশ বর্জ্য হিসেবে বের হয়ে যায়। এটি আবার জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মাছের খাবার নষ্ট হয় না। সাধারণত পুকুরে অক্সিজেনের স্বল্পতা থাকে, এখানে সে অসুবিধা নেই।’ ৮০ শতাংশ পানি সম্পূর্ণ শোধন করে পুনর্ব্যবহার করা যায়। মেকানিক্যাল ও বায়োপরিশোধন প্রক্রিয়ায় মাছের বর্জ্য, খাদ্যাবশেষ, দ্রবীভূত এমোনিয়া, কার্বন ডাই-অক্সাইড এসব ক্ষতিকারক গ্যাস ৯০ শতাংশ পর্যন্ত অপসারণ সম্ভব। এসব উপাদান মাছের বৃদ্ধিতে ক্ষতিকারক।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যত আত্তি হয় বলে মাছের দ্রুত বৃদ্ধি হয় এবং মাছের গুণগত মান হয় উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত। নোংরা খাবার নেই বলে মাছের গন্ধ প্রাকৃতিক থাকে এবং দুর্গন্ধ থাকে না।
Recirculation aquaculture systems (RAS) এর সুবিধা
-এই পদ্ধতিতে পুকুরের প্রয়োজন হয়না
-পুকুরের তুলনায় বেশী মাছ চাষ করা সম্ভব
-পুকুরে অক্সিজেনের স্বল্পতা থাকলেও এখানে সে অসুবিধা নেই
-পুকুরে যেখানে প্রতি শতাংশে ৪০০ থেকে ৫০০ মাছ চাষ করা যায়, সেখানে এ পদ্ধতিতে প্রতি কিউবিক মিটারে ১ হাজার ২০০ মাছ চাষ করা যায়
-এই প্রযুক্তিতে মাছের মৃত্যুহার নেই বললেই চলে। লাখে দুয়েকটা মারা যেতে পারে
-এ পদ্ধতিতে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং মাছের গুণগত মান হয় উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত
আরএএস (রিসার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম) পদ্ধতির অসুবিধা
প্রকল্পটি ব্যয়বহুল, পাশাপাশি খুবই লাভজনক। একটি মিনি আরএএস নির্মাণ করতে খরচ লাগে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। তবে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে লাভসহ বিনিয়োগের পুরো টাকাই উঠে আসে। এসব প্ল্যান্ট পঞ্চাশ বছরের বেশি টিকে। তবে এই প্রযুক্তিতে সার্বক্ষণিক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দরকার। আফ্রিকা ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে এই প্রযুক্তি চালু আছে। এই প্ল্যান্ট যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারেন। সারা বছর সমান তালে মাছ উৎপাদন করা যায়। একটি নতুন প্রকল্প শুরুর প্রথম একটি মাস খুবই ঝুঁকি পুর্ন একটি সময়। এই সময় ব্যাক্টেরিয়া তৈরীর জন্য ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ সময় লাগে। এই সময় অভিজ্ঞতা না থাকলে ১ সপ্তাহের মধ্যে মাছ মারা যাবার সম্ভবনা শতভাগ।
এগ্রোবাংলা ডটকম