মুরগির খাদ্য উপকরণ ও খাদ্য তৈরির নিয়মাবলি তালিকাসহ
বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ মিশ্রিত করে পাখির রেশন তৈরি করা হয়। রেশন হচ্ছে ২৪ ঘণ্টায় কোনো পশু বা পাখি দ্বারা গৃহীত খাদ্য। রেশন অবশ্যই পুষ্টি উপাদানে সুষম হতে হবে। যেহেতু মুরগি ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়, তাই ডিমপাড়া মুরগি ও ব্রয়লার মুরগির জন্য পৃথক পৃথক রেশন তৈরি করা হয়। ডিমপাড়া মুরগি বা লেয়ার মুরগির ৩ প্রকার রেশনের নাম নিচে দেওয়া হলো।
১। লেয়ার স্টার্টার বা প্রারম্ভিক রেশন : ০-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত
২। বাড়ন্ত মুরগির রেশন : ৯-১৯ সপ্তাহ পর্যন্ত
৩। ডিমপাড়া বা লেয়ার মুরগির রেশন: ২০-৭২ সপ্তাহ পর্যন্ত
ব্রয়লার মুরগিকে ৩ প্রকার রেশন সরবরাহ করা হয়:
১। ব্রয়লার স্টার্টার বা প্রারম্ভিক রেশন: ০-২ সপ্তাহ পর্যন্ত
২। ব্রয়লার গ্রোয়ার বা বাড়ন্ত বাচ্চার রেশন: ৩-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত
৩। ব্রয়লার ফিনিশার রেশন: ৫-৬ সপ্তাহ পর্যন্ত
খাদ্য উপকরণ
পাখির খাদ্য তৈরিকে প্রধানত দানাশস্য ও এদের উপজাত ব্যবহার করা হয়। রেশন তৈরির জন্য দানাশস্য হিসাবে প্রধানত গম, ভুট্টা ও ভুসি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বসতবাড়িতে পারিবারিক মুরগি পালনে যে কোনো শস্যদানা যেমন, ধান, চাল, খুদ, ডাল, সরিষা ইত্যাদি পাখিকে খেতে দেওয়া হয়। খাদ্য উপকরণের পুষ্টিমান, প্রাপ্যতা ও বাজারদর বিবেচনা করে রেশন তৈরির জন্য নির্বাচন করতে হবে। নিম্নে পুষ্টি উপাদানের বিষয় বিবেচনায় রেখে খাদ্য উপকরণের একটি তালিকা দেওয়া হলো।
পুষ্টি উপাদান | খাদ্য উপকরণ |
---|---|
শর্করা | গম, ভুট্টা, ধান, চাল, চালের কুড়াঁ, গমের ভুসি ইত্যাদি। |
আমিষ | শুঁটকি মাছের গুঁড়া, তিলের খৈল, সরিষার খৈল, সয়াবিন মিল রক্তের গুঁড়া ইত্যাদি। |
স্নেহ | বিভিন্ন উদ্ভিজ তৈল যেমন : পাম তৈল, তিলের তৈল, সয়াবিন তৈল ইত্যাদি। |
খনিজ পদার্থ | খাদ্য লবণ, ঝিনুক খোসা চূর্ণ, হাঁড়ের গুঁড়া ডিমের খোসা, চুনা পাথর ইত্যাদি |
ভিটামিন | শাকসবজি, ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স ইত্যাদি। |
পানি | পরিষ্কার বিশুদ্ধ জীবাণুমুক্ত পানীয় জল। |
মুরগির খাদ্য গ্রহণ
লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ মুরগির জাত, পাখির বয়স, তাপমাত্রা, খাদ্যের মান, বাসস্থান, খাদ্যের আকার ও পরিবেশনের উপর নির্ভর করে।
বয়স | মুরগি (গ্রাম/দিন) | ব্রয়লার (গ্রাম/দিন) |
---|---|---|
প্রথম সপ্তাহ | ১০ | ২৫ |
দ্বিতীয় সপ্তাহ | ২০ | ৬৫ |
তৃতীয় সপ্তাহ | ২৫ | ১০০ |
চতুর্থ সপ্তাহ | ৩০ | ১৩০ |
পঞ্চম সপ্তাহ | ৩৫ | ১৬০ |
ষষ্ঠ সপ্তাহ | ৩৭ | ১৬৫ |
সপ্তম সপ্তাহ | ৪০ | — |
অষ্টম সপ্তাহ | ৪৫ | — |
বাড়ন্ | ৭০ | — |
বয়ষ্ক | ১১৫ | — |
খাদ্য তৈরির নিয়মাবলি
গম বা ভুট্টাকে প্রথমে মিলে ভেঙে নিতে হবে। খৈলকেও ভালোভাবে গুঁড়া করে নিতে হবে। খাদ্য উপকরণ মাপার পাল্লা ব্যবহার করতে হবে। খাদ্য তৈরির জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে। প্রথমে গম বা ভুট্টা মেপে মেঝেতে ঢালতে হবে। তারপর চালের মিহিকুঁড়া ও গমের ভুসি, ভুসির উপর শুঁটকি মাছের গুঁড়া, তার উপর খৈল ও সয়াবিন মিল ঢালতে হবে। এভাবে সবগুলো উপকরণ ঢালার পর খাদ্যের স্তূপটিকে একটি পিরামিডের মতো দেখা যাবে। এবার ঝিনুকের গুঁড়া, হাঁড়ের গুঁড়া ও লবণ ঐ পিরামিডের উপর ছিটিয়ে দিতে হবে। এবার আধা কেজি খাদ্য আলাদা করে নিয়ে তার মধ্যে ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স উত্তমরূপে মিশ্রিত করতে হবে। এরপর মিশ্রিত ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স পিরামিডের উপর সমস্ত খাদ্যে ছিটিয়ে দিতে হবে। সয়াবিন তৈল দেওয়ার প্রয়োজন হলে তা পিরামিডের চারদিকে ঢেলে দিতে হবে। এবার খাদ্যে স্তূপটির ভিতরে বার বার হাত ঢুকিয়ে সবগুলো উপকরণ ভালো ভাবে মিশিয়ে করে নিতে হবে। মিশ্রিত এ খাদ্য বাদামি রঙের দেখাবে।
হাঁস-মুরগির জন্য বর্তমানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক খাদ্য বাজারে পাওয়া যায়। এসব খাদ্য অত্যাধুনিক ফিড মিলে তৈরি করা হয়। পাখির বয়স ও উদ্দেশ্য অনুসারে বাজারে ম্যাশ (পাউডার), ক্র্যাম্বল (দানা) ও পিলেট (বড়ি) আকারের খাদ্য বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
বিভিন্ন বয়সের লেয়ার বা ডিমপাড়া মুরগির খাদ্য তালিকা:
উপাদান | প্রারম্ভিক রেশন (%) | বৃদ্ধি রেশন (%) | লেয়ার রেশন(%) |
---|---|---|---|
গম/ভূট্টা ভাঙা | ৫২.০ | ৪৮.০ | ৫০.০ |
গমের ভূষি | ৮.০ | ৮.০ | ৬.০ |
চালের মিহিকুঁড়া | ১১.০ | ১৫.০ | ১৫.০ |
তিলের খৈল | ১২.০ | ১১.০ | ৮.০ |
শুটকী মাছের গুঁড়া | ১৩.০ | ১২.০ | ১২.০ |
হাঁড়ের গুঁড়া | ১.৫ | ৩.০ | ২.৫ |
ঝিনুক চূর্ণ | ২.০ | ২.৫ | ৬.০ |
লবণ | ০.৫ | ০.৫ | ০.৫ |
সর্বমোট | ১০০ | ১০০ | ১০০ |
বিভিন্ন বয়সের ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তালিকা:
উপাদান | প্রারম্ভিক রেশন (%) | বৃদ্ধি রেশন (%) |
---|---|---|
গম/ভূট্টা ভাঙা | ৫০.০ | ৫২.০ |
চালের মিহিকুঁড়া | ১৫.০ | ১২.০ |
তিলের খৈল | ১২.০ | ১০.০ |
শুটকী মাছের গুঁড়া | ১৪.০ | ১২.০ |
সয়াবিন মিল | ৮ | ৯ |
সয়াবিন তৈল | ০.০ | ২.০ |
হাঁড়ের গুড়ো | ১.৫ | ২.৫ |
খাদ্য লবণ | ০.৫ | ০.৫ |
সর্বমোট | ১০০ | ১০০ |
বিশেষ দ্রষ্টাব্য:
১। ভিটামিন-খনিজ মিশ্রণ : উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশিত মাত্রায় খাদ্যতালিকার সঙ্গে যোগ করতে হবে।
২। জীবাণুমুক্ত বিশুদ্ধ পানি : পর্যাপ্ত পরিমাণ
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।