মাছ চাষে ভাগ্য ফিরিয়েছেন সাহাবুদ্দিন
প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টা করলে অসাধ্য সাধন করা যায়। নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি অন্যদেরও ভাগ্য বদলে দেয়া যায়_ এ সত্যকে প্রমাণ করেছেন মো. সাহাবুদ্দিন। ১৯৮৯ সাল থেকে পরিশ্রম আর অক্লান্ত চেষ্টার মধ্য দিয়ে পোনা ব্যবসার পাশাপাশি মৎস্য চাষ করে তার ভাগ্য পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার মির্জাপাড়া গ্রামে তিনি একজন সফল মৎস্যচাষী হিসেবে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
সাফল্যটি সত্যি সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো। কিন্তু এই সাফল্যের আড়ালে রয়েছে এক দুঃখগাথা। মরহুম আবদুল মজিদের পুত্র সাহাবুদ্দিন শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে প্রাইমারি ডিঙ্গাতে পারেননি। তার সংসারে অভাব-অনাটন লেগেই থাকত। কোন দিন পেট ভরে খেতে পারতেন, কোন দিন পারতেন না। কত বেলা না খেয়ে কাটিয়েছেন তার কোন হিসাব নেই। স্ত্রী সুলতানা খাতুন আর প্রথম সন্তান শাহানাজ খাতুনকে নিয়ে সংসার চালান ছিল দায়। এর মধ্যে তাদের ঘরে আসে দ্বিতীয় সন্তান। নুন আনতে যাদের পানতা ফুরায় তাদের সন্তানদের জন্য মাছ কেনার পয়সা জোগানো খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু কন্যার মুখে মাছ তুলে দিতে বুক ফেটে যায় অথচ সাধ্য নেই কিনে খাওয়ানোর। আপন ছোট ভাইয়ের কাছে বাকিতে মাছ নিতে চাইলে অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন না এ আশংকায় তাকে মাছ দেয়নি ছোট ভাই। ১৮ বছর আগের এ কাহিনী বলতে গিয়ে চোখ ভিজে আসে তার।
অনেক কষ্টে ধার-দেনা করে পাঁচ হাজার টাকা জোগাড় করেন। এ টাকা নিয়ে রৌমারী উপজেলার নবদাসপাড়া গ্রামের শ্রী ভবেশনাথ মাঝিকে সঙ্গে নিয়ে বগুড়া জেলার কাহালু থানা থেকে ১০/১২ কেজি মাছের রেণু পোনা কিনে এনে রৌমারী বাজারে তা বিক্রি করেন। একসময় মৎস্য অফিসসহ বিভিন্ন এনজিওতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। কাজের মধ্য দিয়ে সেই থেকে সাহাবুদ্দিনের নতুন জীবনযাত্রা শুরু হয়। এতে তার সংসারে বাড়তি আয়ের ছোঁয়া লাগে, পরিবর্তন আসে জীবনে। ছেলেমেয়েদের ভর্তি করা হয় স্কুলে।
বর্তমানে তার ৫/৬ বিঘা জমি ক্রয়। ৪টি হাফবিল্ডিং, ১টি মোটরগাড়ি, গাভী সংখ্যা ৪টি, পুকুর ১৬টি, লিজকৃত দুটি নিজস্ব এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায় রয়েছে। আর্থিক সচ্ছলতা আসায় সমাজে তার মর্যাদা বেড়েছে। পরিবারের যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে মূল্যায়ন করা হয় তাকে। সমাজে সবাই তাকে লাখোপতি/কালো মাঝি বলে ডাকে যা শুনতে তার খুবই ভালো লাগে।
তিনি বড় মাছ উৎপাদন করে রৌমারী উপজেলা মৎস্য অফিস কতৃর্ক অনেকবার শ্রেষ্ঠ পুরস্কারও পেয়েছেন। মাছ চাষ করতে প্রতি মাসে ১৬ হাজার টাকা ব্যয় হয় তার। মাসে তিনি আয় করেন ৫০ হাজার টাকা। তার মাছ বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয় না। মাছ ব্যবসায়ীরা জলাশয়ে গিয়ে মাছ ক্রয় করে নিয়ে যায়। তিনি তাদের কাছে প্রতিদিন ৫/৬ মণ মাছ বিক্রি করে থাকেন। রৌমারীর সাহাবুদ্দিন ৫০-৬০ জন শ্রমিকের সঙ্গে রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে মৎস্য চাষ করে আসছেন। ১৯৮৯ সাল থেকে তিনি মৎস্য চাষ করে আসছেন। তার সাফল্য দেখে আশপাশের ৫০ প্রতিবেশীও মৎস্য খামার গড়ে তুলতে শুরু করেছেন। তার এক ভাই মতিয়ার মৎস্য খামার গড়ে তুলেছেন। তার রয়েছে ৩টি খামার। তিনি প্রতিমাসে ৪০/৫০ হাজার টাকা আয় করেন। এক সময় তারও তেমন কিছু ছিল না। মৎস্য খামার গড়ে তিনি ভাগ্য ফিরিয়েছেন। তিনি বলেন, হতদরিদ্র ও বেকার যুবকরা অল্পপুঁজি খাটিয়ে এ ব্যবসা করে ব্যাপক উন্নতি করতে পারেন। মৎস্য খামার করে তিনি যেন প্রতি মাসে ৪০/৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন। খুব সহজেই বেকাররা এ পরিমাণ আয় করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। তিনি আরও বলেন, বেকার যুবকদের মৎস্য খামার করায় উৎসাহ দিতে ব্যাংকগুলো সুদমুক্ত ঋণ দিলে এ অঞ্চলের বেকার যুবকরা দ্রুত স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। তিনি আশা করেন, ব্যাংকগুলো এ ধরনের ঋণ সুবিধা চালু করে বেকারত্ব কমাতে সহযোগিতা করবে।
এগ্রোবাংলা ডটকম