মিষ্টিকুমড়া চাষাবাদ
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বছরের যে কোনো সময় মিষ্টিকুমড়া বোনা যায়, তবে কৃষকরা সাধারণত রবি মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে জানুয়ারি এবং খরিফ মৌসুমে ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে মিষ্টিকুমড়া চাষ করে থাকেন।
জমি তৈরি ও বীজ বপন:
অল্প পরিমাণে মিষ্টিকুমড়া উৎপাদন করতে হলে বাসগৃহের আশপাশে ছায়াহীন স্থানে মাচা করে বীজ বোনা যেতে পারে। ব্যবসাভিত্তিক চাষের ক্ষেত্রে প্রথমে চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে নির্দিষ্ট দূরত্বে মাচা অথবা সারিতে বীজ বুনতে হয়। ঝোপালো জাতের ক্ষেত্রে পাশাপাশি দুটি মাচার মধ্যে ২ মিটার দূরত্ব রাখা যেতে পারে। লতানো জাতে এটি ৩ থেকে ৪ মিটার হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বীজ রোপণ:
বৈশাখী কুমড়ার জন্য ২ দশমিক ৪ থেকে ২ দশমিক ৭ মিটার পরপর এবং অন্যান্য কুমড়ার জন্য ৩ থেকে ৩ দশমিক ৬ মিটার পরপর মাচা তৈরি করা যেতে পারে। মাচা তৈরি করতে (৮০ × ৮০ × ৮০ ঘন সেন্টিমিটার) গর্ত করলে ভালো হয়। একেকটি মাচায় প্রথমে ছয় থেকে সাতটি বীজ বুনতে হয়। পরে চারা অবস্থায় দুটি করে ভালো চারা রাখলেই চলে। হেক্টরপ্রতি ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৯ কেজি বীজের প্রয়োজন। বৈশাখী কুমড়ার লতা ভূমিতে বাইতে দেয়া যেতে পারে। অন্যান্য কুমড়ার জন্য মাচার আবশ্যক হয়।
সার প্রয়োগ:
কুমড়ার জন্য হেক্টরপ্রতি ৫ টন গোবর সার, ৩৫০ থেকে ৪০০ কেজি খৈল, ১২০ থেকে ১৩০ কেজি ইউরিযা, ১৫০ থেকে ১৭৫ কেজি টিএসপি এবং ১২০ থেকে ১৩০ কেজি এমপি দরকার। গোবর সার, ছাই, খৈল ও ট্রিপল সুপার ফসফেট গর্তের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্ত ভর্তি করে ১০ থেকে ১২ দিন পর মাচায় বীজ বপন করতে হয়। চারা ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হওয়ার পর মাচার চতুর্দিক দিয়ে একটি অগভীর নালা কেটে নালার মাটির সঙ্গে ইউরিয়া সার মিশিয়ে নালা ভর্তি করে দিতে হয়। মিউরেট অব পটাশ সার ইউরিয়ার সঙ্গে প্রয়োগ করতে হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা:
শুষ্ক মৌসুমে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করা হলে অধিকাংশ স্থানে সেচের প্রয়োজন হয়। বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাউনির ওপর কা- তুলে দিলে ফলন বেশি ও ফুলের গুণ ভালো হয়; কিন্তু বাউনির খরচ বেড়ে যাওয়াতে এর অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করতে হয়। জমির ফসল হিসেবে লতানো জাতের চাষ করা হলে ফল ধরার সময় ফলের নিচে কিছু খড়কুটো বিছিয়ে দেয়া ভালো যাতে মাটির সংস্পর্শে এসে ফল রোগাক্রান্ত না হয়।
কৃত্রিম পরাগায়নের জন্য ভোরে পুরুষ ফুলের পরাগধানী হাতে নিয়ে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে আস্তে করে ঘষে দিতে হয়। কোনো কোনো সময় ফ্রুট ফ্লাই নামক পোকা ফল ধারণে সমস্যা সৃষ্টি করে। ওষুধ দিয়ে এ পোকা দমন করতে না পারলে ফোটার আগ থেকে ফল অনেকটা বড় না হওয়া পর্যন্ত কাপড় অথবা পলিথিনের পোঁটলা দিয়ে ঢেকে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম পরাগায়নের প্রয়োজন হয়।
গাছ ছাঁটাই:
অনেক সময় গাছের অতিরিক্ত বৃদ্ধির জন্য কুমড়ার ফলন কম হয়। এরূপ অবস্থায় গাছের কিছু লতাপাতা কেটে দেয়া যেতে পারে।
পরাগায়ন সমস্যা:
কখনো কখনো ফুল থেকে কুমড়া বের হওয়ার পর শুকিয়ে যায়, কিংবা ঝরে যায়। মাটিতে টিএসপি সার প্রয়োগ করা এবং প্রত্যুষে ফুল ফোটার পর পুংজাতীয় ফুলের মু- ফল প্রদানকারী পুষ্পের গর্ভকেশরের গায়ে বুলিয়ে দেয়া যেতে পারে।
পোকা দমন:
কুমড়াজাতীয় গাছের বিভিন্ন পোকার মধ্যে লালপোকা, কাটালে পোকা এবং ফলের মাছি উল্লেখযোগ্য। এ পোকা দমনের জন্য সেভিন (১০ শতাংশ), ডাস্টিং কিংবা নেক্সিয়ান (শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ) এবং ডায়াজিননের (শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ) স্প্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ফলের মাছির কিড়া কচি ফলে ছিদ্র করে প্রবেশ করে। এতে আক্রান্ত স্থান পচে যায় কিংবা সে অংশের বৃদ্ধি থেমে যায়। এ পোকা দমনের জন্য মাঝে মধ্যে ডিপ্টারেক্স, নেক্সিয়ন বা ডাইব্রেম ব্যবহার করা যেতে পারে।
রোগ দমন:
কুমড়াজাতীয় গাছের রোগের মধ্যে পাউডারি মিলডিউ, ডাউনি মিলডিড ও অ্যানথ্রোকনোজ প্রধান। দুই সপ্তাহ পরপর ডায়াথেন বা পার্জেট স্প্রে করা যেতে পারে। প্রতিষেধকরূপে ১০০ গ্যালন গরম পানিতে ১ কেজি জাইনের মিশ্রিত করে বীজ শোধন করা উত্তম।
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।