পানিকচুর চাষ পদ্ধতি
কচু একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর সবজি। এদেশে কচু তেমন সমাদৃত নয় বলে অনেকটা অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হয়। অথচ কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ. বি ও সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।
চাষাবাদ পদ্ধতি: বাংলাদেশে নানা প্রকার কচুর মধ্যে পানিকচু, মুখীকচু, পঞ্চমুখীকচু, দুধকচু, ওলকচু, মানকচু প্রভৃতি উল্ল্লেখযোগ্য। নিম্নে পানিকচুর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
উপযোগী জমি ও মাটি: বৃষ্টি বা সেচের পানি সহজেই ধরে রাখা যায় এ ধরনের মাঝারি নিচু থেকে উঁচু দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিযুক্ত জমি পানিকচু চাষের জন্য উপযোগী।
জাত নিবার্চন: বাংলাদেশে অনেক জাতের পানিকচুর চাষ হয়। এর মধ্যে লতিরাজ জাতের পানিকচুর প্রচুর লতি উত্পাদন হয়।
চারা রোপণের সময়: সাধারণত অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত পানিকচুর চারা রোপণ করতে হয়। তবে আগাম ফসলের জন্য আশ্বিন-কার্তিক মাসেও চারা রোপণ করা যায়।
জমি তৈরি: ২/৩ টি চাষ ও মই দিয়ে থকথকে কাদাময় করে পানিকচুর জন্য জমি তৈরি করতে হয়।
সার প্রয়োগ: পানিকচু চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি ১০ টন গোবর, ১৫০ কেজি ইউরিয়া, ১২৫ কেজি টিএসপি. ১৫০ কেজি এমওপি, ৯০ কেজি জিপসাম ও ৮ কেজি দস্তা সার প্রয়োগ করতে হয়। শেষ চাষের সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি, জিপসাম ও দস্তা সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। আর ইউরিয়া ও এমওপি সার সমান দু’কিস্তিতে চারা রোপণের ২০ থেকে ৩০ দিন পর প্রথম কিস্তি এবং ৬০ থেকে ৯০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করে হাত দিয়ে মাটির সাথে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হয়।
চারা রোপণ পদ্ধতি: জমি তৈরি করার পর ৬০ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে প্রতি সারিতে ৪৫ সে.মি. পর পর (৫ থেকে ৬ সে.মি. গভীরে) পানিকচুর চারা রোপণ করতে হয়। এ দূরত্ব অনুসারে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩৭,০০০ (বিঘায় ৫০০০) চারার প্রয়োজন হয়।
পরবর্তী পরিচর্যা: প্রয়োজনমত নিড়ানি দিয়ে পানিকচুর ক্ষেত সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। গোড়ায় চলমান ও অগভীর পানি পানিকচু গাছের দ্রুত বৃদ্ধির সহায়ক। তাই চারা রোপণের পর থেকে ফসল তোলার আগ পর্যন্ত জমিতে ২ থেকে ৫ সে.মি. পানি আটকিয়ে রাখতে হয়। তাছাড়া পানিকচুর সঠিক বাড়-বাড়তির জন্য মাঝে মাঝে জমি থেকে পানি বের করে দিয়ে হাত বা পা দিয়ে জমির মাটি নেড়েচেড়ে দিতে হবে। ২/৩ দিন জমি শুকানোর পর পুনরায় পানি সেচ দিতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন: পোকার মধ্যে মাকড় ও লেদা পোকা এবং রোগের মধ্যে পাতার দাগ পানিকচুর ক্ষতি করে। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার (আইপিএম) মাধ্যমে এসব পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন: পানিকচুর চারা লাগানোর ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে লতি তোলার উপযোগী হয়। ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর লতি তোলা যায়। আর চারা রোপণের ১৪০ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে পানিকচুর কাণ্ড সংগ্রহের উপযোগী হয়। উন্নত পদ্ধতিতে পানিকচু চাষ করলে প্রতি হেক্টর জমি থেকে ২৫ থেকে ৩০ টন কাণ্ড এবং ১০ থেকে ১২ টন লতি পাওয়া যায়।
লেখক: মোঃ আবদুর রহমান
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।