কপি ও মূলার জিন মিলিয়ে মিশ্র চাষ
কপি ও মূলার জিন মিলিয়ে অদ্ভুদ উদ্ভিদ তৈরী হচ্ছে যার উপরে ফলন হচ্ছে কপি নিচে মূলা
কপি ও মূলার জিন মিলিয়ে মিশ্র চাষ
ঘটনাটি ঘটতে পারে এরকম- রাতভর টানা ঘুম দিয়ে ভোরে ঘুম ভাঙতেই আর হাপিত্যেশ করতে হবে না চা-টার জন্য। মুখ- চোখে পানি ছিটিয়ে বাইরে গিয়ে দাড়াবেন একটু সকাল বেলার চনমনে রোদে-ব্যস একটু একটু করে আপনা থেকেই কমে আসবে ক্ষুধা-তৃষ্ণা। ক্ষুধা-অনাহার আর কাবু কাতে পারবে না কাউকেই। এ রকম ভাবনা-নেহায়ত আজগুবি বলে ভাবতে রাজি হচ্ছে না এখন আর বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞান এই শতকের শেষে এসে এমন অনেক বিষয়কেই বাস্তবে পরিণত করে ছেড়েছে, যা শতাব্দীর শুরুতে কল্পকাহিনী বলেই বিবেচিত হত। উন্মোচন করেছে বহু রহস্য,যা ছিল অজ্ঞাত। এই সব সাফল্যের ধারাবাহিকতাতেই শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে বিজ্ঞান এমন এক আশ্চর্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে মানুষের সামনে যাতে অমূল পাল্টে যেতে পারে মানুষের ভবিষ্যৎ জীবন। এই প্রযুক্তির নাম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। বিজ্ঞানের এই বিষয়টি সহজবোধ্য করে সাধারণ মানুষের সামনে যাতে আমূল পাল্টে যেতে পারে মানুষের ভবিষ্যৎ জীবন। এই প্রযুক্তির নাম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।
পৃথিবীতে নতুন প্রাণের জন্ম হচ্ছে নিরন্তর। বড়ই আশ্চর্যের বিষয়, কেমন করে শিশুরা লাভ করে তাদের বাবা মা’র বৈশিষ্ঠ্য, স্তর এমনকি আকৃতি পর্যন্ত । বিজ্ঞান যতদিন নিশ্চুপ ছিল, ততদিন বহু কল্পকাহিনী শতাব্দীর পর শতাব্দীর ধরে মানুষ জন্ম দিয়েছে এর কারণ হিসেবে । এর যথাযর্থ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হাজির করে বংশানু বিদ্যার পথিকৃৎ হয়ে আছেন গির্জার যাজক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল ১৮৬৬ সালে। সেকথা বিজ্ঞান অনুরাগীরা জানেন। আজকের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এরই এক ধারাবাহিক সাফল্য। বিজ্ঞারীরা খুঁজে বের করেছন ‘কেন আমি বাবার মতো’ এই প্রশ্নের সঠিক জবাব। এর কারণ হচ্ছে ‘জিন’। জিনই জীবরে সকল বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী।
এই জিন কে ইচ্ছা মত কেটে ছিঁড়ে, জোড়া দিয়ে প্রাণী বা উদ্ভিদের শরীরে ইচ্ছামতো প্রবেশ করিয়ে বিশিষ্ট ধরনের প্রাণী বা উদ্ভিদ প্রজাতি সৃষ্টি করাকেই বলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।
উন্নত দেশগুলোতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির ব্যবহার এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। প্রাচীনকাল থেকেই উন্নত ফলনশীল জাত সৃষ্টি জন্য শংকরায়ন পদ্ধতি চলে আসছে। কিন্তু কৃত্রিম প্রজননের প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ মেয়াদী । নূন্যতম ১০ বছর সময় লেগে যায় কোনো উন্নত প্রকরণ পেতে। সে ক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ সময়ের অপচয় এড়ানো যায় পুরোপুরি। এই প্রযুক্তিরই প্রাথমিক পর্যায় হচ্ছে টিস্যু কালচার।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে এখন পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য একটি বিশেষ জিন ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে চারার কোষে, যাতে মাটি ও বায়ু থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন গ্রহণ করতে পারে, সে রকম জিন বিভিন্ন আপাত অকেজো উদ্ভিদের জিন থেকে সংগ্রহ করে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে ফসলের চারায়। ফলে কীটনাশক ও ইউরিয়ার ব্যবহার প্রয়োজন হচ্ছে না। এ ছাড়া যে সকল জিন পুষ্টির বাহক, ফলনবর্ধক, সালোক সংশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বিভিন্ন উৎস থেকে তা সংগ্রহ করে অপ্রয়োজনীয় শস্যের চারায় তা ঢুকিয়ে দিতে পাওয়া যাচ্ছে বড় দ্রুত আশাতীত ফল। অনেক আগাছা জাতীয় উদ্ভিদে ভাইরাস ও লবণাক্ততা প্রতিরোধক্ষম জিন রয়েছে। সেগুলো সনাক্ত করে যদি আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ঢুকিয়ে দিতে পারি তাহলে ক্ষরা-লবণাক্ততা-ভাইরাস সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীরা এখন কপি ও মূলার জিন মিলিয়ে এমন উদ্ভদের তৈরি করেছেন যাতে উপরে ফলবে কপি, নিচে থাকবে মূলা। আম থেকে টক আপেল, পেয়ারা থেকে বিচিও দূর করে ফেলার উপায় টি তাঁরা পেয়েছেন এভাবেই। আর এসব করতে গিয়ে এসেছে ভাবনাটি ‘ক্লোরোফিল’-এর জিন যদি পুশ করে দেয়া যায় মানুষের শরীরে ঠিকমত তাহলেই কেল্লাফতে।
ক্লোরোফিল থাকার কারণে গাছই একমাত্র পারে সূর্য থেকে সরাসরি আপন খাদ্য তৈরি করে নিতে। সেই ব্যবস্থাটি যদি মানুষেরও জন্য হয়ে যায়, তাহলে মানুষের চোখে ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী আর গদ্যময় থাকবে না নিশ্চিত।
তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।