হাইড্রোপনিক মাটি ছাড়া পানিতে চাষবাসের আদ্যোপান্ত
ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান (Nutrient) পানিতে যোগ করে সে পানিতে ফসল উৎপাদন করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় হাইড্রোপনিক ফার্মিং। হাইড্রোপনিক (Hydroponic) একটি অত্যাধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। জনবহুল দেশে যেখানে স্বাভাবিক চাষের জমি কম কিংবা নাই সেখানে ঘরের ছাদে বা আঙ্গিনায়, পলি টানেল, নেট হাউজে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি ও ফল উৎপাদন সম্ভব। উন্নত দেশসমূহে বাণিজ্যিকভাবে Hydroponic culture এর মাধ্যমে সবজি ও ফল উৎপাদন করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই সবজি ও ফল উৎপাদন করা সম্ভব এবং উৎপাদিত সবজি ও ফল এ কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বিধায় বিধায় এ সবজি ও ফল নিরাপদ এবং অধিক বাজারমূল্য পাওয়া যায়।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের জন্য স্পঞ্জ (Sponge) ব্লক ব্যবহার করা হয়। সাধারণত স্পঞ্জকে ৩০ সেমি x ৩০ সেমি সাইজে কেটে নিতে হয়। এই স্পঞ্জকে ২.৫ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ২.৫ সেমি প্রস্থ বর্গাকারে, ডট ডট করে কেটে নিতে হয় এবং এর মাঝে ১ সেমি করে কেটে প্রতিটি বর্গাকারে স্পঞ্জ এর মধ্যে ১ টি করে বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের পূর্বে বীজকে ১০% ক্যালসিয়াম অথবা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ বপনের পর স্পঞ্জকে ১টি ছোট ট্রেতে রাখতে হবে। এই ট্রের মধ্যে ৫-৮ সেমি পানি রাখতে হবে যাতে স্পঞ্জটি পানিতে সহজে ভাসতে পারে। চারা গজানোর ২-৩ দিন পর প্রাথমিক অবস্থায় ৫-১০ মিমি খাদ্য উপাদান সম্বলিত দ্রবণ ১ বার এবং চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর থেকে চারা রোপনের পূর্ব পর্যন্ত প্রতিদিন ১০-২০ মিলি দ্রবণ দিতে হবে।
বাংলাদেশের হাইড্রোপনিক ফসল
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে বাংলাদেশে জন্মানো যাবে পাতা জাতীয় সবজির মধ্যে লেটুস, গিমাকলমি, বিলাতি ধনিয়া ও বাঁধাকপি এসব। ফল জাতীয় সবজির মধ্যে টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, শসা, ক্ষিরা, ক্যাপসিকাম, মেলন ও স্কোয়াস। ফলের মধ্যে আছে স্ট্রবেরি এবং ফুলের মধ্যে উৎপাদন করা যাবে অ্যানথরিয়াম, গাঁদা, গোলাপ, জারবেরা, অর্কিড ও চন্দ্রমল্লিকা। ভবিষ্যতে যোগ হতে পারে তালিকায় আরও অনেক নতুন ফসলের নাম। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এ পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ট্রে, প্লাস্টিক বালতি, পানির বোতল ও মাটির পাতিল ব্যবহার করে বাড়ির ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় সবজি উৎপাদন করতে পারবেন। গ্রিন হাউস, প্লাস্টিক হাউস, ফিনাইল হাউসে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়।
সাধারনত ২ উপায়ে হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়
১। সঞ্চালন পদ্ধতি
২। সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি
সঞ্চালন পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদানসমূহ যথাযথ মাত্রায় মিশ্রিত করে একটি ট্যাংকিতে নেয়া হয় এবং পাম্পের পাইপ এর মাধ্যমে ট্রেতে পুষ্টি দ্রবণ (Nutrient Solution) সঞ্চালন করে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন অন্ততঃপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পাম্পের সাহায্যে এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালু রাখা দরকার। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে প্রথম বছর ট্রে, পাম্প এবং পাইপের আনুসাঙ্গিক খরচ একটু বেশী হলেও পরবর্তী বছর থেকে শুধুমাত্র রাসায়নিক খাদ্য উপাদানের খরচ প্রয়োজন। ফলে ২য় বছর থেকে খরচ অনেকাংশে কমে যাবে।
সঞ্চালন পদ্ধতি যেভাবে কাজ করে
এই পদ্ধতিতে গ্যালভানাইজিং লোহার তৈরি ট্রে টি একটি Stand এর উপর স্থাপন করে প্লাস্টিক পাইপের সাহায্যে একটি ট্যাংকের সাথে যুক্ত করা হয়। এই ট্যাংক থেকে পাম্পের সাহায্যে রাসায়নিত দ্রব্য মিশ্রিত জলীয় খাদ্য দ্রবণ ট্রেতে সঞ্চালন করা হয়। গ্যালভানাইজিং লোহার ট্রের উপর কর্ক সীটের মাঝে গাছের প্রয়োজনীয় দূরত্ব অনুসারে যেমন, লেটুস ২০ x ২০ সেমি, টমেটো ৫০ x ৪০ সেমি এবং স্ট্রবেরী ৩০ x ৩০ সেমি দূরত্বে গর্ত করতে হয়। উপযুক্ত বয়সের চারা স্পঞ্জ (Sponge) সহ ঐ গর্তে স্থাপন করতে হয়। চারা রোপনের পর ট্যাংক থেকে ট্রের মধ্যে জলীয় দ্রবণ পাম্পের সাহায্যে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ ঘন্টা সঞ্চালিত করে গাছের অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়। ট্রেতে কমপক্ষে ৬-৮ সেমি পানি সব সময় রাখতে হবে। সাধারণত প্রতি ১২-১৫ দিন অন্তর জলীয় দ্রবণ ট্রেতে যোগ করতে হবে। এই পদ্ধতি সবজি উৎপাদনে pH এবং EC মাত্রা ফসলের চাহিদার মধ্যে রাখতে হয়। সাধারণভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে উৎপাদনের জন্য pH ৫.৮-৬.৫ এর মধ্যে রাখতে হয়। যদি pH এর মাত্রা ৭.০ এর উপরে হয় তবে আয়রন, ম্যাংগানিজ মলিবডেনামসহ অন্যান্য মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এ ক্ষেত্রে হাইড্রোক্লোরাইড এসিড (HCL) অথবা ফসফরিক এসিড (HPO4) বা নাইট্রিক এসিড (HNO3) দিয়ে pH কে কাঙ্খিত মাত্রায় রাখতে হবে। আবার pH যদি ৫.৮ এর বেশি নিচে নেমে যায় তখন NaOH অথবা KOH দিয়ে pH নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। EC এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে জলীয় দ্রবণে খাদ্য উপাদানের উপস্থিতির মাত্রা সাধারণত EC ১.৫-২.৫ ds/m এর মধ্যে রাখতে হবে। EC এর মাত্রা যদি ২.৫ ds/m উপরে চলে যায় সে ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি যোগ করতে হবে। প্রতিদিন সকাল ও বিকালে pH এবং EC সমন্বয় করতে হবে।
সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে একটি ট্রেতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহ পরিমিত মাত্রায় সরবরাহ করে সরাসরি ফসল চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিতে খাদ্য উপাদান সরবরাহের জন্য কোন পাম্প বা পানি সঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে খাদ্য উপাদান মিশ্রিত দ্রবণ ও তার উপর অবস্থিত কর্কশীটের উপরে মাঝে ২-৩ ইঞ্চি পরিমান জায়গা ফাকা রাখতে হবে, এবং কর্কশীটের উপরে ৪-৫ টি ছোট ছোট ছিদ্র রাখতে হবে যাতে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে এবং গাছ তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন কর্কশীটের ফাঁকা জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে পারে। ফসলের প্রকারভেদে সাধারণতঃ ২-৩ বার এই খাদ্য উপাদান ট্রেতে যোগ করতে হয়। আমাদের দেশে সহজেই সাধারন মানুষ এই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্লাস্টিক বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল, ইত্যাদি ব্যবহার করে বাড়ির ছাদ, বারান্দা, এবং খোলা জায়গায় সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করতে পারে। এতে খরচ অনেক কম হবে।
সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি যেভাবে কাজ করে
এই পদ্ধতিতে ট্রে, প্লাস্টিকের বালতি, অব্যবহৃত বোতল ইত্যাদি ব্যবহার করে সবজি, ফল, ফুল উৎপাদন করা যেতে পারে। চারা রোপনের পূর্বে বোতল জলীয় দ্রবণ দ্বারা এমনভাবে পূর্ণ করতে হবে যাতে কর্কসীট ও জলীয় দ্রবণের মাঝে ৫-৮ সেমি জায়গা ফাঁকা থাকে। তবে বালতি বা বোতলে চারা লাগালে সে ক্ষেত্রে বায়ু চলাচলের জন্য ৩-৪ টি ছিদ্র রাখা দরকার। এই পদ্ধতিতে কোন বৈদ্যুতিক মটর, পাম্প বা পাইপ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। ফলে সহজেই আগ্রহী কৃষকগণ বাড়ির আশেপাশের খোলা জায়গায় যেমন, বারান্দা, বাড়ির ছাদে এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতির সুবিধা
-এ পদ্ধতিতে আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না।
-পদ্ধতিটি মাটিবিহীন চাষ পদ্ধতি হওয়ায় মাটিবাহিত রোগ ও কৃমিজনিত রোগ হয় না।
-কীটপতঙ্গের আক্রমন কম হওয়ার কারণে এই পদ্ধতিতে কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করা যায়।
-এই পদ্ধতিতে ছোট এবং বড় পরিসরে স্বাস্থ্য সম্মত এবং পরিচ্ছন্নভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়।
-এটি হোম-ফারমিং এর জন্য একটি আদর্শ প্রযুক্তি বিধায় অধিক লাভজনক, অর্থকরী ও মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
রাসায়নিক দ্রবের পরিমাণ ও মিশ্রণ প্রক্রিয়া
জলীয় খাদ্য দ্রবণ তৈরিতে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রবের পরিমাণ ও প্রস্তুত প্রণালী পদ্ধতি নিচে বর্ণনা করা হলো-
পানিতে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য সমূহের পরিমাণ (প্রতি ১০০ লিটার পানির জন্য)
ক্রমিক নং | রাসায়নিক উপাদান | পরিমাণ |
১ | পটাশিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেট (KH2PO4) | ২৭.০ |
২ | পটাশিয়াম নাইট্রেট (KNO3) | ৫৮.০ |
৩ | ক্যালসিয়াম নাইট্রেট Ca(NO3)2.4H2O | ১০০.০ |
৪ | ম্যাগনেসিয়াম সালফেট (MgSO4.7H2O) | ৫১.০ |
৫ | ইডিটিএ আয়রন (EDTA Iron) | ৮.০ |
৬ | ম্যাঙ্গানিজ সালফেট (MnSO4.4H2O) | ০.৬১ |
৭ | বরিক এসিড (H3BO3) | ০.১৮ |
৮ | কপার সালফেট (CuSO4.5H2O) | ০.০৪ |
৯ | অ্যামোনিয়াম মলিবটেড (NH4)6MO7O24.4H2O | ০.০৩৮ |
১০ | জিঙ্ক সালফেট (ZnSO4.7H2O) | ০.০৪৪ |
মিশ্রণ প্রক্রিয়ায় জলীয় খাদ্য দ্রবণ তৈরির সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথমে Stock Solution তৈরি করতে হবে। এই Stock তৈরি করার সময় ক্যালসিয়াম নাইট্রেট এবং EDTA Iron কে পরিমাপ করে ১ লিটার পানিতে দ্রবীভূত করে দ্রবণকে Stock Solution “A” নামে নামকরন করতে হবে। অবশিষ্ট রাসায়নিক দ্রব্য গুলোকে পরিমাপ মত এক সাথে ১ লিটার পানিতে দ্রবীভূত করে Stock Solution “B” নামে নামকরণ করতে হবে। ১০০ লিটার জলীয় দ্রবণ তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমে ১০০ লিটার পানি ট্যাঙ্কে নিতে হবে। তারপর Stock Solution “A” থেকে ১ লিটার দ্রবণ ট্যাংক এর পানিতে ঢালতে হবে, এবং একটি অধাতব দণ্ডের সাহায্যে নাড়া চাড়া করে ভালো ভাবে মিশাতে হবে। এরপর Stock Solution “B” থেকে পূর্বের মত ১ লিটার ট্যাঙ্কে নিতে হবে এবং পূর্বের ন্যায় অধাতব দণ্ডের সাহায্যে পানিতে Stock Solution গুলো সমানভাবে মিশাতে হবে।
হাইড্রোপনিক ফার্মিংয়ের ক্ষেত্রে নিউট্রিয়েন্ট দ্রবণ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এখন বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি কোম্পানি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে হাইড্রোপনিক কালচারের জন্য উৎপাদিত নিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ করছে। হাইড্রোপনিক সার তরল আকারে বা পাউডার আকারে থাকে যাকে দ্রবীভূত করে প্রয়োগ করতে হয়। হাইড্রোপনিক বাগানে যদিও গাছ পানিতে জন্মায় তবুও মূল আটকানোর জন্য মাধ্যম প্রয়োজন হয়। মাধ্যম হিসেবে পারলাইট, নারিকেলের ছোবড়া, রকউল এমনকি বালিও ব্যবহার করা যেতে পারে। যাই ব্যবহার করা হোক না কেন তাতে মৃত্তিকা বাহিত রোগের হাত থেকে গাছ রক্ষা পায়।
বিভিন্ন ফসলের চারার বয়স ও PH মান
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন ফসলের চারা রোপণের বয়স ও PH মাত্রা বিভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে তা উল্লেখ করা হলো-
ফসলের নাম | উপযুক্ত চারার বয়স | PH মান |
টমেটো | ৩-৪ সপ্তাহ (২-৩ পাতা অবস্থায়) | ৫.৫-৬.৫ |
লেটুঁস | ২-৩ সপ্তাহ | ৬.০-৬.৫ |
ক্যাপসিকাম /মরিচ | ৪-৫ সপ্তাহ | ৬.০-৬.৫ |
স্ট্রবেরী | ২-৩ সপ্তাহ (স্টোলন কাটিং) | ৫.৫-৬.৫ |
শসা/খিরা | ২-৩ সপ্তাহ | ৫.৮-৬.০ |
বাঁধাকপি/ফুলকপি | ৪-৫ সপ্তাহ | ৬.৫-৭.৫ |
যদি PH এর মাত্রা কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে বেশি হয় তবে হাইড্রোক্লোরিক এসিড বা নাইট্রিক এসিড যোগ করে PH কমাতে হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতির ব্যবস্থাপনা
হাইড্রোপনিক পদ্ধতির সাফল্য নির্ভর করে এর উপযুক্ত এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনার উপর। সাফল্যজনকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনেরজন্য নিম্নের বিষয়গুলির উপর বিশেষভাবে নিজর রাখতে হবে:
-PH এর মাত্রা ৫.৮-৬.৫ এবং EC এর মাত্রা ১.৫-২.৫ ds/m এর মধ্যে রাখতে হবে। উল্লেখিত মাত্রার বাইরে চলে গেলে গাছের শিকড় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মনে রাখতে হবে, আকস্মিকভাবে জলীয় খাদ্য দ্রবনের PH এবং EC পরিবর্তন করা যাবে না।
-গাছের খাদ্য উপাদানের প্রয়োজনীয়তা, স্বল্পতা, কিংবা আধিক্য গাছের স্বাস্থ্য ও পাতার রঙ দেখে বুঝা যায়।খাদ্য উপাদানের লক্ষন দেখে বুঝা এবং প্রয়োজন অনুসারে তা যোগ করে অভাব দূর করতে হবে।এ জন্য প্রতিটি উপাদানের অভাব জনিত লক্ষন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে।
-দ্রবনের আদর্শ তাপমাত্রা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।সাধারণত দ্রবনের তাপমাত্রা ২৫-৩০ ড্রীগ্রি সে: এর মধ্যে হওয়া দরকার। যদি দ্রবনের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তবে শ্বসনের হার বেড়ে যায় ফলে অক্সিজেন এর চাহিদাও দারুনভাবে বাড়ে। ফলে দ্রবণের অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। সাধারণত দুপুরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় কাজেই এ সময় তাপমাত্রা কমানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
-জলীয় খাদ্য দ্রবণে অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হয়। কারণ অক্সিজেন এর অভাবে গাছের শিকড় নষ্ট হয়ে যায় ফলে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
-চাষের স্থানে পর্যাপ্ত আলোর সুব্যবস্থা করতে হবে এবং রোগমুক্ত চারা ব্যবহার করতে হবে। কোন রোগাক্রান্ত গাছ দেখা গেলে সাথে সাথে তা তুলে ফেলতে হবে।
-চাষকৃত ফসলে বিভিন্ন পোকা-মাকড় আক্রমন দেখা দিতে পারে। এদের মধ্যে এফিড, লিফ মাইনার, থ্রিপস এবং মাকড় অন্যতম। প্রতিদিনের তদারকির মাধ্যমে এদের দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা
-দ্রবণ প্রস্তুতি, দ্রবণের অম্লত্ত ও ক্ষারত্ব Electric Conductivity (EC), বিভিন্ন খাদ্যোপাদানের অভাবজনিত লক্ষণসমূহ সনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
-এ পদ্ধতির চাষে কখনও নেটহাউজ বা গ্লাসহাউজের প্রয়োজন হয় বিধায় প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশী হয়। এমনকি নেটহাউজ বা গ্লাসহাউজের ভিতরের তাপমাত্রা বেশী হওয়ার কারণে ফলন কমে যেতে পারে।
-সব ধরণের ফসল এ পদ্ধতিতে চাষ করা যায় না এবং এ পদ্ধতির চাষে কারিগরি জ্ঞান, দক্ষতা, ও অভিজ্ঞতা বিশেষ প্রয়োজন।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন কলাকৌশল
ভালো বীজ ও সাস্থ্যবান চারা হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পদ্ধতিতে উদ্যানতাত্তিক ফসল উৎপাদনের জন্য চারা হাইড্রোপনিক মিডিয়াতে উৎপাদন করতে হবে, মাটিতে নয়। এক্ষেত্রে মূল বিষয়গুলো হল, মানসম্মত বীজ ও জীবাণুমুক্ত উৎপাদন মিডিয়া ব্যবহার যাতে বীজ ও মাটিবাহিত বিভিন্ন রোগ–বালাই থেকে ফসলকেরক্ষা করা যায়, সঠিক মাত্রায় পানি, তাপমাত্রা, ও আলো সরবরাহ করা। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের জন্য প্রধানত স্পঞ্জ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে চারা গজানোর ৫-৭ দিন পর তা স্পঞ্জ এ প্রতিস্থাপন করতে হবে।
বীজ অঙ্কুরোদগম ও চারা উৎপাদন
যে সকল সবজির বীজ অতি ছোট যেমন লেটুস, ফুলকপি, ইত্যাদি গুলোকে স্পঞ্জে বপনের পূর্বে অঙ্কুরোদগমের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলোর ১টি অনুসরণ করা হয়-
-পেট্রিডিসে রেটিং পেপার দিয়ে তাতে বীজ ভিজিয়ে রাখা।
-ছোট ট্রেতে বালি নিয়ে তাতে বীজ বসানের পর ভিজিয়ে দেয়া।
-নারিকেলের ছোবরা ভালোমত গুঁড়া ও পরিষ্কার করার পর তা ছোট ট্রেতে নিয়ে তাতে বীজ বসানোর পর ভিজিয়ে দেয়া।
অঙ্কুরোদগমের জন্য সেগুলোকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পায়। মাঝে মাঝে প্রয়োজনীয় পানি দিতে হবে। বীজ বপনের পূর্বে ১০% ক্যালসিয়াম অথবা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। প্রথমত বড় স্পঞ্জকে ৩০ সে.মি × ৩০ সে.মি সাইজে কেটে নিতে হয়। এই স্পঞ্জকে ২.৫ সে.মি দৈর্ঘ্য এবং ২.৫ সে.মি প্রস্থ বর্গাকারে, ডট ডট করে কেটে নিতে হয় এবং এর মাঝে ১ সে.মি করে কেটে প্রতিটি বর্গাকারে স্পঞ্জ এর মধ্যে ১ টি করে বীজ বপন অথবা চারা রোপণ করতে হয়। বীজ বপনের পর স্পঞ্জকে নিজ আকারের চাইতে বড় ১ টি ট্রেতে রাখতে হবে। এই ট্রের মধ্যে ৫-৮ সে.মি পানি রাখতে হবে যাতে স্পঞ্জ টি পানিতে সহজে ভাসতে পারে। চারা গজানোর ২-৩ দিন পর প্রাথমিক অবস্থায় ৫-১০ মি.লি খাদ্যপাদানে সম্বলিত দ্রবন ১ বার এবং চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর থেকে চারা রোপণের পূর্ব পর্যন্ত প্রতিদিন ১০-১২ মি.লি দ্রবন যোগ করতে হয়। নির্দিষ্ট বয়সের চারা ফোমের ব্লকসহ আলাদা করে কেটে মুল ট্রেতে স্থানান্তর করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন জনিত পরিস্থিতিতিতে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ বাংলাদেশে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এ পদ্ধতিতে বাড়ির ছাদে, আঙিনায়, বারান্দায়, পলিটানেল ও নেট হাউস কিংবা চাষের অযোগ্য পতিত জমিতে সহজেই চাষাবাদ করা সম্ভব হবে।
✓হাইড্রোপনিক চাষাবাদের সরঞ্জাম কিনতে এখানে ক্লিক করুন।
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।