মসুর ডালের আবাদ

মসুর ডালের আবাদ

বাংলাদেশ পুষ্টি এবং খাদ্য বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ মতে, প্রতিটি মানুষের প্রতিদিন গড়ে ১১২ গ্রাম ডাল শস্য গ্রহণ করা উচিত। এ হিসাবে আমাদের বছরে ৫ মিলিয়ন টন ডাল শস্যের প্রয়োজন। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কর্তৃক প্রণীত সুষম খাদ্য তালিকায় প্রতিটি মানুষের দৈনিক ৫৮ গ্রাম ডাল শস্য থাকা প্রয়োজন। একজন মানুষের জন্য প্রতিদিন গড়পরতা ২ হাজার ৩০০ কিলোক্যালোরি শক্তি প্রয়োজন। সাধারণত দানা ও শর্করা জাতীয় খাদ্য, ডাল শস্য, সবজি, ফল, তেল জাতীয় খাদ্য এবং প্রাণীজ খাদ্য এ শক্তি জোগায়।

মসুর ডালের আবাদ কৌশল:
পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা আছে এমন বেলে দোআঁশ এবং এঁটেল মাটি মসুর চাষের জন্য উপযোগী। মাটির অম্লান (পিএইচ) ৬.৫-৭.৫-এর মধ্যে হলে ভালো হয়। মসুর খরা সহিষ্ণু ফসল এবং বৃষ্টিনির্ভর এলাকায় ভালো জন্মে। জলবায়ুগত বিচারে রবি মৌসুম বাংলাদেশে মসুর চাষ করার উপযোগী। মধ্য অক্টোবর থেকেই এর বপন কাজ শুরু হয় এবং মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়। মসুর বীজ যথাসময়ে বপন না করলে ফলন বেশ কমে যায়।

জাত: উৎফলা (এল-৫) একটি অনুমোদিত জাত।

জমি তৈরি:
মসুরের বীজ আকারে ছোট বলে জমি বেশ ঝুরঝুরে এবং নরম করে তৈরি করতে হয়। আগাম জাতের ধান বা পাট কেটে নেয়ার পর জো এলে জমিতে ৩-৪ বার সোজাসুজি ও আড়াআড়িভাবে চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হয়। পলি মাটিতে বর্ষার পানি চলে যাওয়ার পর বিনা সেচেও মসুরের চাষ করা যায়। মসুর গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না বলে জমি তৈরির সময়ই নালা কেটে পানি সেচের ব্যবস্থা রাখতে হয়।

সার প্রয়োগ:
নদীর অববাহিকা অঞ্চলের পলি মাটি স্বভাবতই উর্বর বলে এরূপ জমিতে মসুর চাষ করতে জৈব সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য অঞ্চলের বেলে দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ মাটিতে জৈব সার প্রয়োগ করে মাটির উর্বরতা বাড়ানো যায়। এ ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ৫-৭ টন খামারে পচানো সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া হেক্টর প্রতি ৬৬-৮৮ কেজি ইউরিয়া সার এবং ১৮৮-২৫০ কেজি সিঙ্গেল সুপার ফসলেট (ঝঝচ) প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। শেষ চাষের সময় এসব সার জমিতে ছিঁটিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। মাটিতে সামান্য পরিমাণ কোবাল্ট ও মলিবডেনাম নামক গৌণ খাদ্যোপাদানের উপস্থিতিতে মিথোজীবী, ব্যাকটেরিয়াগুলোর বংশ বৃদ্ধি ঘটে, যার ফলে মাটিতে নাইট্রোজেন বন্ধন বেশি হয়। সুতরাং হালকা মাটিতে ওই সারের সঙ্গে হেক্টর প্রতি ২ কেজি সোডিয়াম মলিবডেট এবং এক কেজি কোবাল্ট নাইট্রেট মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

বীজ বপন:
মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর মসুর বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ছিঁটিয়ে বা সারিতে উভয় পদ্ধতিতে বীজ বপন করা গেলেও মসুরের ফলনে তেমন কোনো পার্থক্য না থাকায় সাধারণত শেষ চাষের সময় বীজ ছিঁটিয়ে বপন করা হয়। তবে সারিতে বপন করতে চাইলে ৩০ সে. মি. দূরত্বে সারি করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ৩০-৩৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। জমিতে নাইট্রোজেন গুঁটি উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া কম থাকলে বপনের আগে উপযুক্ত ইনোকুলাম প্রয়োগ করলে ফলন বৃদ্ধি পায়। তবে জমিতে এর আগে মসুর চাষ করা হয়ে থাকলে প্রাথমিক ইউরিয়া এবং জীবাণু সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না।

আন্তঃপরিচর্যা:
বীজ বোনার ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে নিড়ানি দিয়ে আগাছা দমন করতে হয়। গাছ ঘন থাকলে পাতলা করা যেতে পারে। সাধারণত বাংলাদেশে মসুর ফসলে সেচ প্রয়োগ করা হয় না। তবে মাটিতে রসের অবস্থা বুঝে সেচ দেয়া উত্তম। মরিচা পড়া এবং নেতিয়ে পড়া রোগ দুটি মসুরের বেশ ক্ষতি করে থাকে। ভিটাভ্যাক্স ৪০০ (১:৪০০ হারে) দ্বারা বীজ শোধন করে বপন করে গোড়া পচারোগ দমন করা যায়। দেরি না করে সময় মতো বীজ বপন করলে মরিচা পড়া রোগ দমন করা সম্ভব।

সাথী ফসল:
গম, আখ, ভুট্টা এবং সরিষার সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে মসুরের চাষ করা যায়। এছাড়া এ দেশে সরিষার সঙ্গেও মিশ্র ফসল হিসেবে মসুর চাষের প্রচলন রয়েছে।

ফসল সংগ্রহ, মাড়াই, ঝাড়াই ও সংরক্ষণ:
সাধারণত বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যেই মসুর ডালে পরিপক্বতা আসে এবং মাঠের ৮০ ভাগ ফল পরিপক্বতা লাভ করলে ফসল সংগ্রহ করা যায়। জাত অনুসারে হেক্টর প্রতি ১.৫-২.০ টন দানা পাওয়া যায়। বীজ সংগ্রহ করার পর ভালো করে রৌদ্রে শুকিয়ে মাটির পাত্রে, টিনে, ড্রামে এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে বাতাস বা কীটপতঙ্গ ঢুকতে না পারে। পোকার আক্রমণ হয়েছে কিনা দেখার জন্য বর্ষাকালে মাঝে মাঝে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

লেখক: কৃষিবিদ সরকার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।