ঔষধি গাছ আকন্দ

বাতের ব্যাথার মহৌষধ ঔষধি গাছ আকন্দ

বাংলা নাম আকন্দ । এর আদি জন্ম হিমালয় অঞ্চলের পাঞ্জাব, নেপাল, আসাম, বিহার। হিমালয় অঞ্চলে আকন্দ সমতল থেকে তিন হাজার ফুটঁ উচঁতে জন্মায়। বর্তমানে আরব দেশেও এটি ব্যবহৃত হয়। আকন্দের আরও অনেক নাম আছে। আকন্দের সংস্কৃত নাম-অর্ক, মান্দার। হিন্দি-মাদার। গুজরাট এ চেনা হয় একাডো নামে, তেলেগু ভাষায়-বাদাবদাম, ইংরেজরা চেনেন মাদার (Muder), গিগানটিক (Gigantic), স্বলোরুট (Swaloroot) নামে। আরবী নাম-খর্ক।

আকন্দ দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি শাদা আকন্দ অন্যটি বড় আকন্দ বা লাল আকন্দ। শাদা আকন্দের বৈজ্ঞানিক নাম- Calotropis procera R.Br. এবং বড় বা লাল আকন্দের বৈজ্ঞানিক নাম- Calotropis gigantea R.Br. আকন্দের পরিবার- Asclepiadaceae.

আকন্দ এর পরিচিতি

আকন্দ সাধারণত ৭ থেকে ৮ ফুট উচ্চতার ঝোপালো উদ্ভিদ। অসংখ্য শাখা প্রশাখা এপাশ ওপাশ হেলে থাকে। ভারী পাতার এই গাছটির কান্ড,ফুল ও ফল ভারী। শাদা বা লাল আকন্দর নামে ভিন্নতা থাকলেও আকন্দ বলতে শাদা আকন্দই বেশি ব্যবহৃত হয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে লাল আকন্দ ব্যবহার করা হয়। ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাল আকন্দ উল্লেখ করা হয়ে থাকে। আকন্দের মুল,পাতা,আঠা সব কিছুই চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

আকন্দের কান্ড, পাতা ও ফুলে মোমের প্রলেপ দেখা যায়। আকন্দ এক নাগাড়ে ৭ থেকে ৮ বছর বেঁচে থাকে।

কান্ড

বড় আকৃতির আকন্দের কান্ড কিছুটা কাষ্টল, নরম ও ভারী। সব সময় উপরের দিকে বাড়ে,তবে পাতা ও ফুল ও ফলের ভারে কিছুটা ন্যুয়ে পড়ে। কান্ড শাদা প্রলেপ দেয়া। চিকচিকে। আকর্ষণীয়। কান্ড এতটাই নরম যে সহজে ভেঙ্গে যায় না বরং মচকে যায়। কান্ডের পাতার কোল থকে শাখা প্রশাখা বের হয়। কান্ড বা শাখা প্রশাখা ভাঙ্গে দুধের মত শাদা কষ বের হয় যে গুলোকে আকন্দের আঠা বলে। আকন্দের ফুল বা পাতা যা-ই ছিঁড়ানো হোক না কেনো আঠা বের হবেই।

পাতা

সবুজ রঙের পাতা ভারী। সমান্তরাল শিরবিন্যাস। পাতার উল্টো বা নিচের দিকে মোমের আবরণ বেশি দেখা যায়। পাতা হাতে নিয়ে নাড়লে নরম ও আরাম অনুভুত হয়। পাতা পুরু। অনেকটা বট পাতার মত আকার আকৃতি। লম্বায় পাতা গুলো ১২ থেকে ১৫ সে.মি হয়ে থাকে। চওড়ায় হয় ৬ থেকে ৯ সে.মি। বয়স্ক পাতার কোল থেকে শাখা প্রশাখা বের হয়। শেষ পাতার প্রান্তে কয়েকটি ফুল আলাদা আলাদা ফুল বের হয়। শাদা আকন্দে শাদা রঙের ও লাল আকন্দের লালচে বেগুনি রঙের ফুল হয়।

ফুল

ফুল গুলোর কোনোটিতে চারটি আবার কোনোটিতে পাঁচটি পাপড়ি থাকে। ফুল গুলো ভারী ও ব্যাস আড়াই থেকে ৩ সে.মি.। প্রায় সারা বছরেই ফোটে। ফুল দেখতে নারীদের নাকের ফুলের মত আকর্ষণীয়। ফুলের মধ্যখানে স্ফীত। সেখানেই বীজ থাকে।

ফল

প্রায় সারা বছর ফুল ধরলেও ফেব্রয়ারি মার্চের দিকে বেশি ফুল দেখা যায়। মে থেকে জুন মাসে ফল পাকে। ফল লম্বায় ১০ থেকে ১৫ সে.মি.। ফলের ভেতর কতকগুলো স্তর থাকে। স্তরে একধরণের আশঁ দেখা যায়। আঁেশর ভেতর বীজ থাকে।

বীজ

পাকা ফলের সাজানো আঁশের স্তরে স্তরে বীজ থাকে। বীজ গুলো চিকন। ফল পাকার পর ফেটে যায়্ ফেটে যাওয়া বীজ গুলো বাতাসে উড়ে এখানে সেখানে পড়ে চারা গজায়। বীজগুলো এতটাই হালকা ও চিকন যে এক কেজি পরিমান বীজে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার বীজ থাকে।

বংশ বিস্তার- বীজ ও শাখা প্রশাখা দিয়ে আকন্দের বংশ বিস্তার ঘটে।

আকন্দের ব্যবহার

» হৃৎপিন্ড ও শ্বাসযন্ত্র- শর্দিজনিত কারণে শরীরে রক্ত চলাচল দ্রুতগতির হলে,বুকে চাপ বোধ করলে,বুক ভারী মনে হলে অথবা বুকে বেদনা মনে হলে বা শ্লেস্মা বসে যাওয়ার ফলে শ্বাস কষ্ট হলে ৫ থেকে ১০ টি পাতা ভালো করে পানিতে ধুঁয়ে বেঁটে দিনে তিন বার খেলে কয়েক দিয়েই অসুস্থ্যতা কেটে যায়।

» মেদ হলে- শরীরে মেদ বা অতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে নিয়মিত আকন্দ পাতার সাথে মুল বেঁটে তার রস করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

» প্রস্রাবের সমস্যা হলে, ঘন ঘন প্রস্রাব, হলদে রঙের ও পরিমানে অল্প প্রস্রাব কিন্তু দূগন্ধযুক্ত হলে আকন্দের মুল বেঁটে রস খেলে প্রস্রাবের এসব সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

» বাতের ব্যথা হলে- শরীরের যে জায়গায় বাতের ব্যথা অনুভ’ত হয় সেখানে আকন্দের পাতা গরম করে সেঁক দিলে ব্যথা উপশম হয়।

» ঘুম না হলে- নিয়মিত ঘুম না হলে আকন্দের তুলা দিয়ে বালিশ বানিয়ে মাথায় দিলে ঘুমালে ভালো ঘুম হয়।

» শরীরে পানি জমলে- শরীরের বৃক্কের সমস্যা ছাড়া হঠাৎ বিনা কারণে শরীরের কোনো জায়গায় পানি জমে ফুলে উঠলে(শোথ রোগে) ফুলে উঠা জায়গায় আকন্দের পাতা মুল তুলে হাতে বেঁধে দিলে কয়েক দিনের মধ্যে পানি ফোলা জায়গা স্বভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

» পেট কামড়ানি বা পেট জ্বালায় ও পেটের শুল ব্যথায়-পেট কামড়ানি বা পেট জ্বালায় ও পেটের শুল ব্যথায় আকন্দের পাতার ভেতর দিকে ভালো করে সরিষার তেল মাখিয়ে পাতাটি গরম করে পেটে সেঁক দিলে ভালো হয়ে যায়।

» যকৃৎ রোগে- আকন্দের দুই ফেঁটা আঠা ১ থেকে ২ চা চামুচ পানিতে নিয়ে খেলে যকৃৎ রোগ ভালো হয়।

» ব্রণ অথবা চুলকানিতে- মুখে পিঠে ব্রণ হলে অথবা শরীরের কেনো স্থানে চুলকানোর ফলে ক্ষত হলে আক্রন্ত স্থানে আকন্দের আঠা জ্জ দিন তিন চারবার করে লাগালে ব্রণ ও চুলকানি ভালো হয়ে যায়।

» দাঁতের মাড়ির ক্ষতে- মাটির পাত্রে আকন্দের আঠা দিয়ে তুলা ভিজিয়ে আক্রান্তস্থানে তুলা কয়েকদিন দিনে দু’বার লাগালে মাড়ির ক্ষত ও ব্যথা ভালো হয়ে যায়।

» পুং ও স্ত্রী জননেন্দ্রিয়- ক্ষত, দাদ বা চুলকানি বা ঘা হয়ে পুঁজ বের হলে কয়েকদিন দিনে দু’বার ক্ষত পরিষ্কার করে আকন্দের আঠা লাগালে ভালো হয়ে যায়।

» হজম শক্তি বাড়াতে- হজম শক্তি কমে গেলে আকন্দের মুল শুকায়ে গুড়া করে এক চা-চামচ পরিমানে নিয়ে এক কাপ পানি’র সাথে মিশিয়ে খেলে খুব তাড়াতাড়ি হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।

লেখক: কৃষিবিদ সিদ্দিকুর রহমান
মুঠোফোন-০১৭১২৬২৪৬০৩.

এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।