পেঁয়াজের নানাবিধ পোকামাকড় রোগবালাই ও প্রতিকার
পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি অর্থকরী মসলা ফসল ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্য। প্রতিদিনের রান্নায় আমরা পেঁয়াজ ব্যবহার করে থাকি। এ ছাড়াও পেঁয়াজে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। দেশের চাহিদার তুলনায় এ ফসলের উৎপাদন নিতান্তই কম। উৎপাদন কম হওয়ার জন্য রোগবালাই একটি প্রধান কারণ। পেঁয়াজের যেসব রোগবালাই হয় তারমধ্যে অন্যতম হলো-
✓ পেঁয়াজের লিফ ব্লচ রোগ
✓ পেঁয়াজের ব্ল্যাক স্টক রট রোগ
✓ পেঁয়াজের হোয়াইট রট রোগ
✓ পেঁয়াজের কন্দ ফেটে যাওয়া সমস্যা
✓ পেঁয়াজের বাল্ব পচা রোগ
✓ পেঁয়াজের চারার গোড়া পচা রোগ
✓ পেঁয়াজের শিকড়ে গিট রোগ
✓ পেঁয়াজর কন্দ পচা রোগ
✓ পেঁয়াজের কান্ড পচা রোগ
✓ পেঁয়াজের পার্পল ব্লচ ও স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ
এছাড়াও পেঁয়াজে রয়েছে নানা পোকার আক্রমন। এগুলো পেঁয়াজের সমূহ ক্ষতি সাধন করে। এখন উপরোক্ত রোগ গুলির মধ্য থেকে কিছু রোগের সমাধান ও প্রতিকার সম্পর্কে জানবো।
পার্পল ব্লচ বা ব্লাইট (Purple Blotch)
রোগের কারন : অলটারনারিয়া পোরি (Aternaria Porri) ও স্টেমফাইলিয়াম বট্রাওসাম (Stemphylium botryosum) নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার : আক্রান্ত বীজ, বায়ু ও গাছের পরিত্যক্ত অংশের মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। অতিরিক্ত শিশির, আর্দ্র আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত হলে এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। স্পোর বায়ুর মাধ্যমে এক গাছ হতে অন্য গাছে ছড়ায়।
পার্পল ব্লচ বা ব্লাইট রোগের লক্ষণ
» প্রথমে পাতা ও বীজবাহী কান্ডে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি ভেজা বাদামী বা হলুদ রং এর দাগের সৃষ্টি হয়।
» দাগগুলি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে বড় দাগে পরিণত হয়।
» দাগের মধ্যবর্তী অংশ প্রথমে লালচে বাদামী ও পরবর্তীতে কালো বর্ণ ধারণ করে এবং দাগের কিনারা বেগুনী বর্ণ ধারণ করে।
» আক্রান্ত পাতা উপরের দিক হতে ক্রমান্বয়ে মরে যেতে থাকে। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত পাতা ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে হলদে হয়ে মরে যায়।
» বীজবাহী কান্ডের গোড়ায় আক্রান্ত স্থানের দাগ বৃদ্ধি পেয়ে হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে।
» এ রোগের আক্রমণের ফলে বীজ অপুষ্ট হয় এবং ফলন হ্রাস পায়।
» রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করলে সুস্থ বীজ উৎপাদন সম্ভবপর হয় না।
রোগের প্রতিকার
» সুস্থ, নীরোগ বীজ ও চারা ব্যবহার করতে হবে।
» রোগ সহনশীল প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে।
» আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে।
» বীজ পেঁয়াজের ক্ষেত্রে নভেম্বরের ১-১৫ তারিখের মধ্যে কন্দ রোপণ করতে হবে।
» প্রোভেক্স বা রুভরাল ছত্রাকনাশক প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
» জমিতে রোগ দেখা দিলে রুভরাল/ইভারাল ৫০ ডচ প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম ও রিডোমিল গোল্ড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর পর্যায়ক্রমে ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
বট্রাইটিস লিফ ব্লাইট (Botrytis leaf blight)
রোগের কারন : বট্রাইটিস স্কুয়ামোছা (Botrytis squamosa) এবং বট্রাইটিস সিনেরিয়া Botrytis cinerea নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার : আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯৫% বা বেশী হলে। তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেঃ হলে। গাছ খুব ঘন হলে।
বট্রাইটিস লিফ ব্লাইট রোগের লক্ষণ
» পাতায় প্রথমে ছোট ছোট সাদা দাগ দেখা যায়, যেগুলোর চারদিক সবুজ রং দ্বারা ঘেরা থাকে।
» ছত্রাক প্রাথমিকভাবে পাতায় আক্রমণ করে ।
» পরে অনেকগুলো দাগ একত্রিত হয়ে বড় আকার ধারণ করে, যার ফলে পাতায় ডাই ব্যাক এর লক্ষণ দেখা যায়।
» শেষ পর্যায়ে পাতা মারা যায় ও চূড়ান্তভাবে আক্রান্ত পিয়াঁজের মাঠ পুড়িয়ে যাওয়ার মত মনে হয় ।
রোগের প্রতিকার
» রোগাক্রান্ত পেঁয়াজের গাছ ধ্বংস করতে হবে।
» গভীর চাষ দিয়ে মাটি উলট-পালট করতে হবে।
» শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে।
» সুস্থ গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
» ব্যভিষ্টিন বা প্রোভেক্স প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
» রোগের লক্ষণ দেখার সাথে সাথে ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
কান্ড/কন্দ পঁচা (Stem/Basal/Bulb rot)
রোগের কারণ : স্কেরোসিয়াম রফসি (Sclerotium rolfsii) ও ফিউজারিয়াম (Fusariu) নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার : এ রোগের জীবাণু মাটিতে বসবাস করে। অধিক তাপ ও আর্দ্রতাপূর্ণ মাটিতে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। আক্রান্ত ফসলে সেচের পানি দিলেও এ রোগ বৃদ্ধি পায়।
কান্ড/কন্দ পঁচা রোগের লক্ষণ
» স্কেরোসিয়াম রফসি দ্বারা আক্রান্ত গাছ হাত দিয়ে টান দিলে খুব সহজেই মাটি থেকে পেঁয়াজসহ উঠে আসে।
» আক্রান্ত স্থানে পচন ধরে ও সরিষার দানার মত বাদামী বর্ণের গোলাকার স্কেরোসিয়া দেখা যায়।
» ফিউজারিয়াম দ্বারা আক্রান্ত গাছের পাতা হলদে হয়ে যায় ও ঢলে পড়ে। হাত দিয়ে টান দিলে সহজেই মাটি থেকে উঠে আসে না।
» উভয় জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত কান্ডে পচন ধরে এবং আক্রান্ত পিঁয়াজ গুদামজাত করা হলে সংরক্ষিত পিঁয়াজের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে।
রোগের প্রতিকার
» সুস্থ, নীরোগ বীজ ও চারা ব্যবহার করতে হবে।
» বীজ উপকারী ছত্রাক ট্রাইকোডারমা দ্বারা শোধন করে বপন করতে হবে।
» প্রোভেক্স-২০০ বা ব্যভিষ্টিন প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ কন্দ শোধন করে বপন করতে হবে।
» মাটির উপযুক্ত আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে ও পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
» আক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ তুলে ধবংস করে ফেলতে হবে।
» আক্রান্ত জমিতে শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
» জমিতে রোগ দেখা দিলে ব্যভিষ্টিন অথবা প্রোভেক্স প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছের গোড়ায় মাটিতে স্পে করতে হবে।
স্মাট (ঝসঁ:)
রোগের কারণ : ইউরোসিসটিস সেপুলি (Urocys:is cepulae) নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার : রোগটি বীজ বাহিত নয়। মাটি, পানি, বায়ু ও কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ছড়ায়।
স্মাট (ঝসঁ:) রোগের লক্ষণ
» সরাসরি বপনকৃত বীজের ক্ষেত্রে এ রোগ মারাত্মক সমস্যা।
» চারা মাটি থেকে গজানোর সময় কচি চারার পাতার উপর প্রথমে দাগ পড়ে।
» দাগ হালকা কালো রং এর হয় এবং দাগযুক্ত পাতার অংশ পুরু হয়।
» অনেক সময় পাতার একটা বড় অংশ একটা দাগে পরিণত হয়।
» ব্যাপকভাবে আক্রান্ত গাছ আকারে ছোট হয় ও ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে মরে যেতে পারে।
রোগের প্রতিকার
» মাটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
» ফরমালিন দ্বারা মাটি শোধন করে বীজ বপন করতে হবে।
» প্রোভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করে বপন করতে হবে।
» বীজ বপনের সময় সারির মধ্যে প্রোভেক্স-২০০ ছত্রাক নাশক ছিটিয়ে দিয়ে বীজ বপন করতে হবে।
কান্ড ও কন্দ কৃমি (Stem and bulb Nematode)
রোগের কারণ : ডিটাইলেনকাস ডিপসেছি (Ditylenchus dipsaci) নামক কৃমি।
রোগের বিস্তার : মাটি, পানি ও কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ছড়ায়।
কান্ড ও কন্দ কৃমি রোগের লক্ষণ
» কচি চারার বৃদ্ধি ব্যহত হয়, রং ফ্যাকাশে হয় এবং বীজপত্র ফুলে উঠে ।
» পাতায় হালকা হলুদ-বাদামী বর্ণের স্পট দেখতে পাওয়া যায়, পাতা খাটো ও পুরত্ব বিশিষ্ট হয় এবং কান্ড মোটা হয় ।
» আক্রান্ত পেঁয়াজের চামড়া নরম, হালকা ধূসর রং এর হয় ও পিঁয়াজের বাল্বের ওজন কম হয়।
» এর ফলে দ্বিতীয় পর্যায়ে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হয় ফলে নোংড়া ও পঁচা গন্ধ পাওয়া যায়।
রোগের প্রতিকার
» পেঁয়াজ রোপন/বপনের পূর্বে কমপক্ষে ২০-২৫ দিন পূর্বে বিঘা প্রতি ৩০০-৩২৫ কেজি অর্ধপঁচা মূরগীর বিষ্টা প্রয়োগ করতে হবে।
» পিঁয়াজ রোপন/বপনের পূর্বে শেষ চাষের সময় বিঘা প্রতি ৪-৪.৫ কেজি ফুরাডান ৫ জি মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
গুদামজাত রোগ
রোগের কারন : অ্যাসপারজিলাস , আরউইনিয়া ও ফিউজারিয়াম নামক ছত্রাক।
রোগের লক্ষণ
গুদামজাত অবস্থায় পিঁয়াজে পচন দেখা যায়। অ্যাসপারজিলাস-এর আক্রমণে কালো পচা, আরউইনিয়া-এর আক্রমণে নরম পচা এবং ফিউজারিয়াম-এর আক্রমণে শুকনা পঁচা রোগ হয়ে থাকে।
রোগের প্রতিকার
» সুস্থ পেঁয়াজ গুদামজাত করতে হবে।
» সংরক্ষণাগারে বায়ূ চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
» মাঝে মাঝে রোগাক্রান্ত পিঁয়াজ বেছে ফেলে দিতে হবে।
» কিছু দিন পর পর পেঁয়াজ উলট-পালট করে দিতে হবে।
এবার চলুন দেখি পেঁয়াজের কিছু পোকা এবং তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
চোষী পোকা
বিজ্ঞানসম্মত নাম- থ্রিপস ট্যবাকি
সংক্ষিপ্ত বিবরণ- এই পোকা ছোট ও হলদে-সাদা বর্ণের হয়। এই পোকার ডানায় চিরুনির মতো লম্বা রোম থাকায় একে চিরুনি পোকাও বলা হয়। বাচ্ছা ও পূর্ণাঙ্গ পোকাগুলিকে পাতায় দেখা যায়। পাতার নিচে দিকে ডিম পাড়ে।
ক্ষতির লক্ষণ- চোষি পোকা দলবদ্ধ হয়ে পাতা থেকে রস শোষণ করে খায়। আক্রান্ত পাতা রুপালী-সাদা হয় ও পরে বাদামী হয়ে যায়। পাতার ডগা থেকে রোগের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এই পোকার তীব্র আক্রমণ দেখা গেলে চারাগাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। সবশেষে গাছটি নেতিয়ে পড়ে ও শুকিয়ে মারা যায়। এই পোকার আক্রমণের ফলে কন্দের আকার ও আকৃতি তথা উৎপাদন ব্যহত হয়।
আক্রমণের তীব্রতার মাপকাঠি- লাগানোর ১৫ দিন পর প্রতিগাছে ১৩-১৫ টি পোকা দেখা গেলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিয়ন্ত্রণ
» জমি আগাছা মুক্ত করতে হবে। জমিকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে পোকার আক্রমণ অনেকটাই কম হয়।
» উন্নত জাত যেমন- এগ্রিফাউন্ড ডার্ক রেড, বসন্ত ৭৮০, ভিমা রেড ইত্যাদি চাষ করতে হবে।
» বেড়া ফসল হিসাবে ভুট্টার চাষ করুন।
» পোকার আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় নিম জাতীয় ওষুধ অ্যাজাডিরাক্টিন ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে আঠার সাথে স্প্রে করুন।
» পরজীবী বন্ধুপোকা, সেরানিসাস মেন্স এবং পরভোজী বন্ধুপোকা, ছিলোমেন্স সেক্সমাকুলাটা জমিতে ছাড়তে হবে।
» বীজ বপনের ৩০ দিন পর সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ৫ গ্রাম প্রতি লিটার বা বিউভেরিয়া ব্যাসিয়ানা ১০ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
» আক্রমণ তীব্র হলে ইমিডাক্লোপ্রিড ১৭.৮% ১ মিলি/৩ লিটার জলে বা ডাইমিথোয়েট ৩০% ১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে আঠা সহযোগে স্প্রে করুন।
» ফিপ্রোনিল ১ মিলি প্রতি লিটার বা স্পাইনোস্যাড ২.৫ মিলি/১০ লিটার বা অ্যাসিটামিপ্রিড ১ গ্রাম/৪ লিটার জলে বা ডাইফেনথিউরন ১ গ্রাম/২ লিটার জলে ১৫ দিন অন্তর দুবার আঠা সহযোগে স্প্রে করুন।
পেঁয়াজের মাছি
বিজ্ঞানসম্মত নাম- হাইলিমিয়া অ্যান্টিকুয়া
সংক্ষিপ্ত বিবরণ- পূর্ণাঙ্গ মাছি আকারে ৬ মিমি লম্বা, ধূসর রঙের হয় ও কাঁটাযুক্ত ডানা থাকে। ম্যাগট সাদা ও পা বিহীন হয়।
ক্ষতির লক্ষণ- মাছির শূককীট পাতা খেয়ে মাটির নীচে চলে যায় এবং পেঁয়াজের কন্দের চাকতি অংশের ক্ষতি করে। আক্রান্ত গাছ ক্রমশ হলদে-বাদামী বর্ণ ধারন করে ও সবশেষে শুকিয়ে মারা যায়। আক্রান্ত কন্দগুলি সংরক্ষণ কালে পিথিয়াম নামক ছত্রাকের আক্রমণে পচন বৃদ্ধি হয়।
আক্রমণের তীব্রতার মাপকাঠি- লাগানোর ১৫ দিন পর প্রতিগাছে ১ টি পূর্ণাঙ্গ মাছি দেখা গেলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিয়ন্ত্রণ-
» শস্য আবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ একই ফসল একই জমিতে বারবার চাষ করা চলবে না।
» আক্রমণ প্রবণ এলাকায় মাটি তৈরির সময় প্রতি একরে ৩০০ কেজি নিমখোল প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
» পরভোজী বন্ধুপোকার (গ্রাউন্ড বিটল, রোভ বিটল) সংখ্যা জমিতে বাড়াতে হবে।
» চারা লাগানোর আগে জমিতে ভালোভাবে দানাদার কীটনাশক ফোরেট ১০জি ৬০০ গ্রাম/১০ শতকে প্রয়োগ করতে হবে।
পেঁয়াজের ল্যাদা পোকা
বিজ্ঞানসম্মত নাম- স্পোডোপটেরা লিটুরা
সংক্ষিপ্ত বিবরণ- ল্যাদা কালচে সবুজ ও মথ ধূসর বর্ণের হয়। স্ত্রী মথ পাতায় ডিম পাড়ে। ৩-৪ দিনের মধ্যে লার্ভা বের হয়ে পাতা খেতে শুরু করে। ল্যাদা সাধারণত দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে ও রাত্রে আক্রমণ করে।
ক্ষতির লক্ষণ- ল্যাদা প্রথমে গাছের সবুজ অংশ আঁচড়ে খায়। পরে পাতা ফুটো করে খায় ও পাতার মধ্যে আশ্রয় নেয়। তারপর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ও মাটির নিচে প্রবেশ করে। পাতার কাটা অংশ ও মল দেখে আক্রমণ বোঝা যায়।
আক্রমণের তীব্রতার মাপকাঠি- চারা লাগানোর ১৫ দিন পর প্রতি গাছে ১ টি লার্ভা।
নিয়ন্ত্রণ-
» কুমড়োগোত্রীয় ফসলের সাথে শস্য আবর্তন করতে হবে।
» মূল জমি চাষের সময় জমিতে কারবোফিউরান ৫০ গ্রাম এ. আই/ হেঃ প্রয়োগ করুন।
» আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় নিম জাতীয় ওষুধ অ্যাজাডিরাক্টিন ১%ইসি ৩ মিলি বা ১.৫ গ্রাম বিটি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
» ফেরোমোন ফাঁদ প্রতি একরে ৩-৪ টি ব্যবহার করতে হবে।
» পরজীবী বন্ধুপোকা ট্রাইকোগ্রামা প্রেটিওসাম ৪০,০০০ প্রতি একরে ছাড়তে হবে।
» স্টেইনারনিমা ফেল্টি ২০-১২০ কোটি পোকাখাদক কৃমি প্রতি একরে স্প্রে করতে হবে।
» আক্রমণ অধিক হলে নোভালিউরন ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
নালী পোকা
বিজ্ঞানসম্মত নাম- ফাইটোমাইজা জিম্নোসটোমা
ক্ষতির লক্ষণ- ক্ষুদ্র পোকাটি পাতার দুই ত্বকের মাঝে নালী করে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতার উপর আকাবাকা রেখার সৃস্টি করে। তাই একে চাষীভাইরা ম্যাপকাটা পোকা বলেও ডাকে।
নিয়ন্ত্রণ-
» প্রাথমিক অবস্থায় গাছের পাতায় আক্রমণ দেখা গেলে পাতা তুলে নষ্ট করতে হবে।
» কার্টাপ ৫০% ১ গ্রাম/লি জলে বা ইথোফেনপ্রক্স ১০% ১মিলি/ লি জলে গুলে স্প্রে করুন।
» নিমজাত কীটনাশক অ্যাজাডিরাক্টিন ১% ইসি ৩ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।