পাট চাষে পোকামাকড়

পাট চাষে পোকামাকড় দমন

পাট চাষে পাট ক্ষেতে বিছা পোকা, উড়চুঙ্গা, চেলে পোকা, ঘোড়া পোকা, মাকড় ইত্যাদির আক্রমণ হয়ে থাকে। নিচে কয়েকটি পোকার নাম, ক্ষতির লক্ষণ ও দমনের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো :

বিছাপোকা

লক্ষণ : কচি ও বয়স্ক সব পাতাই খেয়ে ফেলে। স্ত্রী মথ পাটের পাতার উল্টা পিঠে গাদা করে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর প্রায় ৬-৭ দিন পর্যন্ত বাচ্চাগুলো পাতার উল্টা দিকে দলবদ্ধভাবে থাকে। পরে এরা সব গাছে ছড়িয়ে পড়ে। দল বদ্ধভাবে থাকা অবস্থায় কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে সাদা পাতলা পর্দার মতো করে ফেলে এবং আক্রান্ত পাতাগুলো দূর থেকেই সহজে দৃশ্যমান হয়। আক্রমণ ব্যাপক হলে এরা কচি ডগাও খেয়ে ঢেলে।

দমন পদ্ধতি :
» পাটের পাতায় ডিমের গাদা দেখলে ডিমের গাদাসহ পাতা তুলে ধ্বংস করতে হবে।
» আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে যখন ডিম থেকে বের হওয়া কীড়াগুলো দলবদ্ধভাবে থাকে, তখন পোকাসহ পাতাটি তুলে পায়ে পেষে, গর্তে চাপা দিয়ে অথবা অল্প কেরোসিন মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে মারতে হবে।
» পাট কাটার পর শুকনো জমি চাষ করলে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা পুত্তলি গুলো বের হয়ে আসে যা পোকাখাদক পাখি খেয়ে ফেলে।
» বিছা পোকা যাতে আক্রান্ত ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতে ছড়াতে না পারে সেজন্য আক্রান্ত ক্ষেতের চারদিকে প্রতিবন্ধক নালা তৈরি করে অল্প কেরোসিন মিশ্রিত পানি নালায় রাখতে হবে।
» কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী রাসায়নিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।

উড়চুঙ্গা

লক্ষণ: জমিতে গর্ত করে দিনের বেলায় গর্তে বসবাস করে এবং সন্ধ্যা বেলায় গর্ত থেকে বের হয়ে চারা পাটগাছের গোড়া কেটে গর্তে নিয়ে যায়। এতে পাট ক্ষেত মাঝে মাঝে গাছশূন্য হয়ে যায়। অনাবৃষ্টির সময় আক্রমণ বেশি হয় এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের পর আক্রমণ কমে যায়। পূর্ণ বয়স্ক পোকা পাট গাছের শিকড় ও কাণ্ডের গোড়ার অংশ খায়।

দমন পদ্ধতি :
» প্রতিবছর যেসব জমিতে উড়চুঙ্গার আক্রমণ দেখা যায় সেখানে সাধারণ পরিমাণের চেয়ে বেশি করে বীজ বপন করতে হবে।
» আক্রান্ত জমিতে চারা ৮-৯ সে.মি. হওয়ার পর ঘন গাছ বাছাই করে পাতলা করতে হবে।
» সম্ভব হলে নিকটস্থ জলাশয় থেকে আক্রান্ত জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
» কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে জমি চাষের সময় রাসায়নিক ঔষধ প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
» গর্তে কীটনাশক প্রয়োগ করে।
» কীটনাশক ঔষধের বিষটোপ প্রয়োগ করে।

ঘোড়া পোকা

লক্ষণ: ঘোড়া পোকা পাট গাছের কচি ডগা ও পাতা আক্রমণ করে। ফলে কচি ডগা নষ্ট হয়ে যায় এবং শাখা-প্রশাখা বের হয়। ফলে পাটের ফলন ও আঁশের মান কমে যায়।

দমন পদ্ধতি :
» পোকার আক্রমণ দেখা দিলে কেরোসিন ভেজা দড়ি গাছের উপর দিয়ে টেনে দিলে পোকার আক্রমণ কম হয়।
» শালিক বা ময়না পাখি ঘোড়া পোকা খেতে পছন্দ করে। তাই এসব পাখি বসার জন্য পাট ক্ষেতে বাঁশের কঞ্চি এবং গাছের ডাল পুঁতে দিতে হবে।
» কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে রাসায়নিক ঔষধ ছিটাতে হবে।

চেলে পোকা

লক্ষণ: স্ত্রী পোকা চারা গাছের ডগায় ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা গাছের ভিতরে চলে যায় এবং সেখানে বড় হতে থাকে। ফলে গাছের ডগা মরে যায় এবং শাখা প্রশাখা বের হয়। গাছ বড় হলে পাতার গোড়ায় কাণ্ডের উপর ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ফলে ঐ জায়গায় গিটের সৃষ্টি হয়। পাট পচানোর সময় ঐ গিটগুলো পচেনা। আঁশের উপর কালো দাগ থেকে যায়। এতে আঁশের মান ও দাম কমে যায়।

দমন পদ্ধতি :
» বীজ বপনের আগে ও পাট কাটার পরে ক্ষেতের আশে পাশে যে সব আগাছা থাকে সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
» আক্রান্ত পাট গাছ গুলো তুলে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
» গাছের উচ্চতা ৫-৬ সেমি লম্বা হওয়ার পর কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে রাসায়নিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।

মাকড়

পাটক্ষেতে দুই ধরনের মাকড় দেখা যায়। যথা- হলদে ও লাল মাকড়।

লক্ষণ : হলদে মাকড় কচি পাতায় আক্রমণ করে পাতার রস চুষে খায়। এতে কচি পাতাগুলো কুঁকড়ে যায় এবং পাতার রং তামাটে হয়ে যায়। হলদে মাকড় ফুলের কুঁড়িকেও আক্রমণ করে। ফলে কুঁড়ি ফুটতে পারে না। ফুলের পাপড়ির রং হলদে থেকে কালচে রঙের হয়ে যায় ও ঝরে পড়ে। এতে বীজের ফলনও কমে যায়। একটানা খরা বা অনাবৃষ্টির সময় এদের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। লাল মাকড় একটু নিচের পাতা আক্রমণ করে।

দমন পদ্ধতি :
» চুন ও গন্ধক ১:২ অনুপাতে পানির সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত পাট ক্ষেতে ছিটাতে হবে।
» কাঁচা নিমপাতার রস ২:৫ অনুপাতে পানির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
» কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে রাসায়নিক ঔষধ ছিটাতে হবে।

এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।