মসুরের রোগ ও তার প্রতিকার
বাংলাদেশে ডাল ফসলের এলাকা ও উৎপাদনের দিক থেকে মসুরের স্থান তৃতীয়। বিভিন্ন কারণে মসুরের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তার মধ্যে রোগ অন্যতম প্রতিবন্ধক। এর ফলে মসুর চাষের তি ও ফলন কম হয়। মসুরের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশে মসুরের প্রায় ১৫টি রোগ দেখা যায়। তার মধ্যে তিন-চারটি রোগ প্রধান। মসুরের দুটি প্রধান মারাত্মক রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।
রোগের নাম : স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট (Stemphylium blight)
রোগের কারণ : স্টেমফাইলিয়াম বোট্রাইওসাম (Stemphylium botryosum) নামক ছত্রাক
রোগের বিস্তার : জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। রাত্রের তাপমাত্রা আট ডিগ্রি ও দিনের তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হলে। গাছের ভেতরে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯৪% বা বেশি হলে। কুয়াচ্ছন্ন বা মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলে।
রোগের লণ : গাছে ফুল আসার আগ থেকে শুরু করে বয়স্ক গাছে এ রোগ আক্রমণ করে। প্রথমে পাতায় হালকা বাদামি ছোট দাগ দেখা যায় ও পরে দাগগুলো আকারে বড় হয়। পরবর্তীতে পুরো গাছ ঝলসে গেছে বলে মনে হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে পুরো মাঠ ঝলসানো রং ধারণ করে। আক্রমণের শেষপর্যায়ে গাছ বাদামি থেকে কালো রং ধারণ করে ও নুইয়ে পড়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে হয়।
রোগের প্রতিকার : আক্রান্ত জমিতে কয়েক বছরের জন্য শস্য পরিক্রমা অনুসরণ করতে হবে। সুষম সার ব্যবহার ও সময়মতো সেচ প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত জমিতে প্রতি লিটার পানিতে রোভরাল ৫০ ডচ দুই গ্রাম অথবা সিকিউর এক গ্রাম হারে মিশিয়ে সাত দিন পর পর তিনবার স্প্রে করতে হবে।
রোগের নাম : মরিচা রোগ (Rust)
রোগের কারণ : ইউরোমাইসিস ফেবেই (Uromyces fabae) নামক ছত্রাক
রোগের বিস্তার: জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা হলে। কুয়াচ্ছন্ন বা মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া হলে। রাত্রির তাপমাত্রা ২০ থেকে ২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হলে।
রোগের লণ : এ রোগ সাধারণত বয়স্ক গাছে বা ফুল আসার সময় দেখা দেয়। প্রথমে পাতায় মরিচা রংয়ের ছোট ছোট ফুসকুড়ি পড়া দাগ দেখা যায়। পরে দাগগুলো গাঢ় বাদামি বা কাল রং ধারণ করে। কাণ্ড বা ফলেও এমন লক্ষণ দেখা যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে পাতা ঝরে যায় এবং ফল পাকার আগেই গাছগুলো শুকিয়ে যায়।
রোগের প্রতিকার : আগাম অর্থাৎ নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে। ফসল সংগ্রহের পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে। জমিতে অতিরিক্ত ইউরিয়া এবং জৈবসার প্রয়োগ করা যাবে না।
আক্রান্ত জমিতে টিল্ট ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে এক মিলি লিটার হারে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর তিন-চারবার স্প্রে করতে হবে
লেখক : ড. কে এম খালেকুজ্জামান
এগ্রোবাংলা ডটকম