বিলিম্বি চাষ
বিলিম্বি : একটি ফলের নাম
বিলিম্বি ফলের সাথে বা এই নামের সাথে অনেকেই পরিচিত নয়। স্থানভেদে এ নামের ভিন্নতা আছে। যেমন- সিলেটে এটাকে বলা হয় ‘বেলেম্ব’। এর গুণাগুণ ও উপকারিতা বহুমাত্রিক।
বেলেম্বু গাছ দেখতে অনেকটা লেবুর গাছের মত। কামরাঙ্গা পরিবারের এ গাছের পাতা, ফুল ও ফল দেখতে খুবই সুন্দর। গাছে নতুন পাতা গজালে সে পাতাকেও আবার ফুলের মত মনে হয়। গাছ প্রায় একই রকম তবে ফল আকারে লম্বা-২/৩ ইঞ্চি, রঙ সবুজ। দেখতে আঙুরের মত হলেও সুন্দর। এ ফলটি কাঁচা অবস্থায় খুব টক হলেও রান্নার পর বা চাটনি কিংবা আচার তৈরি করার পর টক থাকে না। পুষ্টিমানে আমিষ, শ্বেতসার, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন, কারোটিন, ক্যালোরি সবই আছে। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিকসের ঝুঁকি কমাবার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে এতে। বীজ থেকে এর বিস্তার ঘটে। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত- এ গাছে প্রচুর ফল আসে। নিয়মিত পাতা ও ডালপালা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে সারা বছরই এ গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। শীতকালে বিলিম্বি গাছের পাতা ঝরে পড়ে তবে বসন্তের আগমণে আবার নতুন কুঁড়ি ও পাতা গজাতে থাকে। একটি পূর্ণ গাছে বছরে প্রায় ৩০০ কেজি বিলিম্বির ফলন হয়।
বিলিম্বি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাওয়া যায় তবে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম অঞ্চলে এর ফলন বেশি। ইদানিং সিলেট অঞ্চলেও এর প্রচুর ফলন হয়। বিলিম্বি ছোট মাছ, বড় মাছের মাথা বা মাছের ডিম দিয়ে রান্না করে খেলে স্বাদ অনেকগুণ বেড়ে যায়। ডাল বা মাংশতেও বিলিম্বি ব্যবহার করা যায়। একটি বিলিম্বি গাছ বাড়িতে থাকলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সারা বছরই পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলি করা যায়। অপ্রচলিত এ ফলটি এখন বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বিক্রিও হয় বেশ চড়া দামে। পরিচিতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর চাহিদাও বাড়ছে দিনে দিনে।
বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে তা রোপণ করলেই খুব স্বল্প সময়ে বড় হয়ে থাকে। দো-আঁশ মাটিতে অবশ্য ভাল জন্মে। বছরের যেকোন সময়ে বিলিম্বি চারা রোপণ করা যায় তবে বর্ষাকালেই রোপণ করা উত্তম। চারা রোপণের জন্য ১ × ১ × ১ গর্ত করে কিছু পচা গোবর বা পচন সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে রোপণ করা ভাল।
বাণিজ্যিকভাবে বিলিম্বি চাষ করতে হলে ৫ থেকে ৬ মিটার দূর দূর চারা রোপণ করতে হবে। ফ্রেব্রুয়ারি মার্চ মাসে গাছের চারদিকে রিং করে একবার সার প্রয়োগ করলেই ফলন অনেক বেড়ে যায়। একটি পূর্ণ গাছের চারদিকে আধা মিটার দূর রিং করে ১০ কেজি পচা গোবর তার সঙ্গে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম এমপি ও ইউরিয়া এক সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। ফল খুব সাবধানে সংগ্রহ করতে হয়, কারণ ডালপালা খুবই নরম হয়ে থাকে। এ গাছের রোগবালাই বা পোকা মাকড়ের আক্রমণের সম্ভবনা নেই বললেই চলে।
লেখক: আফতাব চৌধুরী, সিলেট
এগ্রোবাংলা ডটকম