ডালিয়া ফুলের চাষ
ডালিয়া, এ এক সর্বজন প্রিয় ফুল। অপরূপ লাবণ্যে ও বর্ণের প্রাচুর্যে মহিমান্বিত সুন্দর একটি ফুল হলো ডালিয়া। এর বৈজ্ঞানিক নাম Dahlia Variailis। ডালিয়া কম্পোজিটি পরিবারভুক্ত। এ ফুলের আদি বাসস্থান মেক্সিকোর গুয়াতেমালায়। লর্ডবুটি নামের এক ব্যক্তি স্পেন থেকে ডালিয়া ফুল প্রথমে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। সেই ফুল দেখে সুইডেনের উদ্ভিদতত্ত্ববিদ আন্দ্রিয়াস গুস্তাভ ডাল নিজের নামের অনুকরণে ফুলের নাম রাখেন ডালিয়া।
শ্রেণিবিভাগ ও জাত : ডালিয়ার ১১টি শ্রেণীর আওতায় এর প্রচুর জাত রয়েছে। ডালিয়ার উন্নত জাতের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গল, স্টার, অ্যানেমিন ফাওয়ার্ড, কলারেট, পিওনি ফাওয়ার্ড, ফরমাল ডেকোরেটিভ, ইন ফরমাল ডেকোরেটিভ, ডবল শো ফ্যান্সি, পম্পন, রয়্যাল হোয়াইন, ক্যাকটাস, ভ্যারাইটি গার্ল প্রভৃতি।
মাটি ও জলবায়ু : সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ মাটি বা বেলে দোআঁশ প্রকৃতির ঈষৎকার মাটি ডালিয়া চাষের জন্য উত্তম। ছায়াযুক্ত স্থানে গাছ দুর্বল ও লম্বা হয়, ফুল কম ও ছোট হয় এবং রঙের ঔজ্জ্বল্য হ্রাস পায়। ফলে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমিতে ডালিয়ার চাষ করতে হবে। ডালিয়া বৃপ্রেমীরা যারা চাষ করবেন তাদেরকে আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যে দিন বৃষ্টি হবে সে দিন থেকে যত দিন পর্যন্ত মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকবে তত দিন পানি দেয়ার দরকার নেই। আবার গরমের সময়ে মাটি যখন শুকনো হয়ে ওঠে তখন পানির পরিমাণ বাড়িয়ে মাটি আর্দ্র করে তুলতে হবে। কারণ ডালিয়াগাছের জন্য আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি বেশি ভিজে কাদাকাদা হয়ে গেলে তা গাছের পে তেমন উপকারী হবে না, টবের গাছের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা করা উচিত। বৃষ্টির সময়ে গাছের ওপর ছাউনি দিতে পারলে ভালো কিংবা কোনো ছাউনির নিচে রাখলে গাছ নিরাপদে থাকবে। টবের গাছের ক্ষেত্রে প্রতিদিন নিয়ম করে পানি দিয়ে মাটিকে আর্দ্র রাখা উচিত।
বংশ বিস্তার : ডালিয়া বীজ, মূলজ কন্দ, ডাল কলম এবং ত্রেবিশেষে জোড় কলমের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে। মূলজ কন্দ ও ডাল কলম থেকে চারা তৈরির পদ্ধতি হলো ডালিয়াগাছের গোড়ায় জন্মানো মূলজ কন্দ পরবর্তী বছর চারা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ফুল শেষে গাছ নিস্তেজ হয়ে পাতা ও ডাঁটা শুকিয়ে আসলে কন্দ পরিপক্ব ও সংগ্রহ উপযোগী হয়। মাটির নিচ থেকে অত অবস্থায় কন্দ তুলে দু-এক দিন বাতাসে শুকিয়ে আলুর মতো শুষ্ক বালুতে সংরণ করতে হয়। অতঃপর ভাদ্র-আশ্বিন মাসে কন্দগুলোকে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক বালু মিশ্রিত বীজতলা বা টবে রোপণ করে সামান্য পানি সিঞ্চন করলে কয়েক দিনের মধ্যে কন্দের চোখ থেকে নতুন চারা বের হয়। চারা দুই থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা হলে মূলজ কন্দটিকে চারাসহ কেটে টুকরো করে নির্ধারিত জমিতে বা টবে রোপণ করা চলে। অপর দিকে আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসে ডালিয়ার ডাল কলম করা যায়। এ সময়ে মূলজ কন্দে জন্মানো কচি চারা বা ডাল থেকে গিটসহ কেটে বা ভেঙে নিতে হয়। তা ছাড়া পুষ্ট কন্দ বা কাণ্ডের পাশে জন্মানো ১৫-২০ সেন্টিমিটার লম্বা পুষ্ট ডাল ও গিটসহ সংগ্রহ করা চলে।
সার প্রয়োগ : বাংলাদেশের পরিবেশে আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত সময়ে জমিতে কিংবা টবে ডালিয়ার চারা রোপণ করা যায়। ডালিয়ার মাটি গভীরভাবে নরম ও ঝরঝরে করে তৈরি করতে হয়। প্রতি ১০০ বর্গ মিটার জমিতে ২০০ কেজি গোবর, তিন কেজি কাঠের ছাই ও দুই কেজি টিএসপি সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হয়। ভারী মাটিতে গোবরের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া উত্তম। টবে ডালিয়া চাষের জন্য ২ ভাগ দোআঁশ মাটি, ২ ভাগ বালি, ২ ভাগ কাঠের ছাই, ১ ভাগ পাতা পচা সার, ১ ভাগ গোবর, ১ ভাগ খৈল ও ১ ভাগ টি এস পি সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হয়।
চারা রোপণ ও পরিচর্যা : ডালিয়া চাষের জমিতে জাত ভেদে ৬০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে আর প্রতি টবে একটি চারা রোপণ করতে হয়। টবের আকার ২৫ সেন্টিমিটার হলে ভালো হয়। চারা লাগানোর পর থেকে গাছে এমনভাবে সেচ দিতে হয় যাতে কখনো পানির ঘাটতি না পড়ে ও জলাবদ্ধতা দেখা না দেয়। ডালিয়াগাছে সাধারণ রেড স্পাইডার ও রেড মাইভ ধরনের পোকা হয়। এই পোকা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় হলো প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে ক্যালিথিন বা নোবাকন নামে ওষুধের ২০ ফোঁটা এক লিটার পানিতে ভালো করে গুলিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে ঝারির সাহায্যে গাছগুলোকে ভিজিয়ে দেয়া যায়, তাহলেই এ ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে গাছকে রা করা সম্ভব হবে। ।
লেখক: হাসান মাহমুদ রিপন
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।