যেভাবে চিনবেন নকল বা ভেজাল সার
আধুনিক কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক সার একটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ । ফসল উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সারে ভেজাল দ্রব্য মিশিয়ে তৈরি ও বিক্রি করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তাই আসল সার চেনা জরুরি। তবে একটু সতর্ক হলেই আসল ও ভেজাল সারের পার্থক্য বোঝা যায়।
মাঠ পর্যায়ে ভেজাল সার সনাক্তকরণের জন্য খুব সামান্য উপকরর প্রয়োজন । এবং এর জন্য তেমন কোন বাড়তি খরচের প্রয়োজন হয় না । এ সকল উপকরণ স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব । এখানে কয়েকটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে আসল বা ভেজাল সার শনাক্ত করার উপায় সম্পর্কে জানানো হলো:
টিএসপি সার চেনার উপায়
ভেজাল টিএসপি সার সনাক্তের অনেক গুলো পদ্ধতি আছে। যেমন প্রকৃত টিএসপি সারে অমল স্বাদ যুক্ত ঝাঁঝালো গন্ধ থাকবে। কিন্তু ভেজাল টিএসপি সারে অমল স্বাদ যুক্ত ঝাঁঝালো গন্ধ থাকবে না। জিহবা দ্বারা স্বাদ নিলে অম্ল (টক) স্বাদ অনুভূত হবে।
টিএসপি সার পানিতে মিশালে সাথে সাথে গলবে না। আসল টিএসপি সার ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পর পানির সাথে মিশবে। কিন্তু ভেজাল টিএসপি সার পানির সাথে মিশালে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই গলে যাবে বা পানির সাথে মিশে যাবে।
প্রকৃত টিএসপি সার অধিক শক্ত বিধায় দুটো বুড়ো আঙগুলের নখের মাঝে রেখে চাপ দিলে সহজে ভেংগে যাবে না কিন্তু ভেজাল টিএসপি অপেক্ষাকৃত নরম হওয়ায় দুটো বুড়ো আঙগুলের নখের মাঝে রেখে চাপ দিলে সহজে ভেংগে যাবে।
ইউরিয়া সার চেনার উপায়
১ চা চামচ (প্রায় ১ গ্রাম) ইউরিয়া সার ২ চা চামচ পরিমাণ পানির মধ্যে দিলে তাৎক্ষনিকভাবে সচ্ছ দ্রবণ তৈরী করবে । এ দ্রবণে হাত দিলে ঠান্ডা অনুতুত হবে । যদি ইউরিয়া সারে চুন মিশ্রিত থাকে তবে ঝাঝালো গন্ধযুক্ত- অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন করবে । এছাড়া আরও কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করতে হবে। যেমন আসল ইউরিয়া সারের দানাগুলো সমান হয়। তাছাড়া ইউরিয়া সারে কাঁচের গুড়া অথবা লবণ ভেজাল হিসাবে যোগ করা হয়। যদি সন্দেহ হয় তখন চা চামচে অল্প পরিমান ইউরিয়া সার নিয়ে তাপ দিলে এক মিনিটের মধ্যে অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ তৈরি হয়ে সারটি গলে যাবে। যদি ঝাঁঝালো গন্ধ সহ গলে না যায়, তবে বুঝতে হবে সারটি ভেজাল।
ডিএপি সার চেনার উপায়
ভেজাল ডিএপি সার সনাক্তের অনেক গুলো পদ্ধতি আছে। যেমন ১-২ চা চামচ পরিমাণ ডিএপি সার একটি কাগজের উপর খোলা অবস্থায় ১-২ ঘনটা রেখে দিলে যদি সারের নমুনাটি ভিজে না উঠে তবে ধরে নিতে হবে যে নমুনাটি ভেজাল ডিএপি সার। প্রকৃত ডিএপি সারে নাইট্রোজেন বিদ্যমান থাকায় বায়ুমন্ডল থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে কিছুক্ষণের মধ্যে ভিজে উঠে।
আসল ডিএপি সার চেনার জন্য চামচে অল্প পরিমান ডিএপি সার নিয়ে একটু গরম করলে এক মিনিটের মধ্যে অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ হয়ে তা গলে যাবে। যদি না গলে তবে বুঝতে হবে সারটি সম্পূর্ণরুপে ভেজাল। আর যদি আংশিকভাবে গলে যায় তবে বুঝতে হবে সারটি আংশিক পরিমান ভেজাল আছে। এছাড়াও কিছু পরিমান ডিএপি সার হাতের মুঠোয় নিয়ে চুন যোগ করে ডলা দিলে অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ বের হবে। যদি অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ বের না হয় তাহলে বুঝতে হবে সারটি ভেজাল।
আধা চা চামচ মান সম্পন্ন ডিএপি সার ( প্রায় ১ গ্রাম) একটি টেস্ট টিউবে নিয়ে এতে ১ চা চামচ পরিমাণ পানি ধীরে ধীরে ঢাললে এ সারের একটি অংশ গলে যাবে। অবশিষ্ট অদ্রবণীয় অংশ টিউবের নীচে জমা হবে। এখন ১ মিলিলিটার পরিমাণ (৩০-৩৫ ফোঁটা) গাঢ় নাইট্রিক এসিড যোগ করলে অধিকাংশ অদ্রবণীভূত পদার্থ বাদামী রঙ এর অর্ধ সচছ দ্রবণ তৈরী করবে।
এমওপি বা পটাশ সার চেনার উপায়
আধা চা চামচ এমওপি সার আধা গ্লাস পানিতে মিশালে সঠিক এমওপি সার সম্পূর্ণ দ্রবীভূত হয়ে পরিষ্কার দ্রবণ তৈরী করবে। পটাশ বা এমওপি সারের সাথে সাধারনত বালি, কাঁচের গুড়া, মিহি সাদা পাথর, ইটের গুড়া ভেজাল হিসাবে মিশিয়ে দেয়া হয়। তাই গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে এমওপি বা পটাশ সার মিশালে সার গলে যাবে কিন্তু তাতে ইট বা অন্য কিছু ভেজাল হিসাবে মিশানো থাকলে তা পানিতে গলে না গিয়ে গ্লাসের তলায় পড়ে থাকবে। তলানি দেখে সহজেই বুঝা যাবে সারটি আসল নাকি ভেজাল।
জিংক সালফেট সার চেনার উপায়
প্রকৃত জিংক সালফেট হেপ্টাহাইড্রেট দেখতে স্ফটিক আকৃতির এবং ঝুরঝুরে। আর জিংক সালফেট (মনো হাইড্রেট) সার দেখতে দানাদার। একই পরিমাণ জিংক সালফেট হেপ্টা হাইড্রেট সার জিংক সালফেট মনোহাইড্রেট সারের তুলনায় ওজনে অনেক হালকা। জিংক সালফেট সারে ভেজাল হিসাবে পটাশিয়াম সালফেট মেশানো হয়। জিংক সালফেট সার চেনার জন্য এক চিলতে জিংক সালফেট হাতের তালুতে নিয়ে তার সাথে সমপরিমান পটাশিয়াম সালফেট নিয়ে ঘষলে ঠান্ডা মনে হবে এবং দইয়ের মতো গলে যাবে।
আসল জিপসাম সার সনাক্তকরণের পদ্ধতি
একটি কাঁচের বা চিনা মাটির পাত্রে ১ চা চামচ পরিমাণ জিপসাম সারের উপর ১০-১৫ ফোটা পাতলা (১০%) হাইড্রোক্লারিক এসিড আস্তে আস্তে মেশালে যদি বুদ বুদ দেখা দেয় তবে ধরে নেয়া যাবে যে জিপসাম সারের নমুনাটি ভেজাল।
এগ্রোবাংলা ডটকম