সার হিসেবে ডিমের খোসার ব্যবহার
‘ছাদ কৃষি’ শব্দটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত আর আজকাল তো বাড়িতে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই সবুজের সন্ধানে বাগান করে থাকি। বাড়ির বাগানে বিভিন্ন উদ্ভিদের বাহার দেখে চোখ ও মনের প্রশান্তি ঘটে।
কিন্তু সুন্দর একটা বাগান পেতে হলে সঠিক পদ্ধতিতে পরিচর্যা একান্ত আবশ্যক একটি কাজ। কিন্তু সমস্যা হলো এ বিষয়ে আমরা সবাই আগ্রহী হলেও ঠিক কীভাবে কোন সার প্রয়োগ করব তা অনেকেরই অজানা। আজ আমরা ছাঁদ বাগান, মাঠ বাগান বা বানিজ্যিক বাগানের গাছে বা টবের গাছে ডিমের খোসা বা খোসার তৈরি সারের ব্যাবহার সম্পর্কে জানাবো।
গাছের ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস এর চাহিদা পুরন করে ডিমের খোসা। ডিমের খোসার মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম। গাছের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম কার্বনেট পাওয়া যায় এই উপকরণ থেকে। এ ছাড়া ডিমের খোসায় আছে আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফ্লোরিন, ক্রোমিয়াম ও মলিবডেনাম। ক্যালসিয়ামের অভাবে ফুল, কাণ্ড ও শিকড়ের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর অভাবে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিকৃতি, পাতা ও ফলে কালো দাগ দেখা দেয়। পাতার ধার ঘেঁষে হলুদ রঙ দেখা দিয়ে থাকে।
ডিমের খোসা দিয়ে কম্পোষ্ট সার বা জৈব সার তৈরি করবেন যেভাবে
প্রথমেই ডিমের খোসাকে ব্যাবহার উপযোগী করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে ডিমের খোসা সংগ্রহ করতে হবে, সংগ্রহকৃত ডিমের খোসা ভালভাবে শুঁকিয়ে নিতে হবে।
শুকানো ডিমের খোসা গুলকে গুড়ো করে পাউডারে রূপান্তর করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্লেন্ডার, মিক্সচার ব্যাবহার করা যেতে পারে বা জাতুনিতে পিশেও তৈরি করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে খোসা গুলো জেন ভালভাবে মিহি হয়, দানা দানা যেন না থেকে যায়। বড় দানার চেয়ে পাউডার দ্রুত মাটির সাথে মিশতে পারে, ফলে সহজেই তার মিনারেলস গুলো গাছের গ্রহনোপযোগী হয়ে উঠে।দানা দানা থেকে গেলে এগুলো ব্যবহারে বা গাছে প্রয়োগের পর তা মাটির সাথে মিশতে অনেক সময় লাগে, পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তাই এমন পাউডার তৈরি করতে হবে যাতে পিঁপড়ে বা পোকা-মাকড় তাতে আক্রমণ করে সেগুলোকে বহন করে নিয়ে যেতে না পারে।
ডিমের খোসা থেকে তৈরিকৃত ডাস্ট বা সার যেকোনো ধরনের গাছে ব্যাবহার করা যায়।
গাছে বা টবে ডিমের খোসার প্রয়োগের পরিমান
» ৮ ইঞ্চি টবে ১ টেবিল চামচ
» ১০ ইঞ্চি টবে ১ টেবিল চামচ
» ১২ ইঞ্চি টবে ১.৫ টেবিল চামচ
ডিমের খোসার সার ব্যবহার পদ্ধতি
» ডিমের খোসার গুঁড়া পানি দিয়ে পাতলা করে গাছের নীচে ব্যবহার করতে পারি। এই সার টমেটো এবং বেগুনের মতো শাকসব্জিতে পানিজনিত রোগ এবং পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করা- এর মতো রোগের চিকিত্সা করতে কার্যকর। এছাড়া এই কম্পোস্ট গোলাপ গাছে প্রয়োগ করলে ফুল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গাছ বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা যেতে পারে। টবে মাটির মিশ্রণ প্রস্তুত করার সময় ১-৪ ডিমের খোসার চূর্ণ দিয়ে একটি গাছ লাগানো যেতে পারে।
» টবের মাটিতে ডিমের খোসার সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে টবের মাটিকে নিড়ানী দিয়ে বা খুঁচিয়ে আলগা করে দিতে হবে। তারপর পরিমান মত ডিমের খোসার সার টবের চারিদিকে খুঁচানো মাটির উপর ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
» এগ শেল বা ডিমের খোসা সিদ্ধ পানি গাছের দ্রুত বর্ধনশীলতার জন্য পৃথিবীর অন্যতম এক সার। এক লিটার পানিতে ৫ টি ডিমের খোসা সিদ্ধ করুন। এই পানি উষ্ণ আবহাওয়ায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রাখুন। পরের দিন মিশ্রণটি মাটিতে প্রয়োগ করুন অথবা গাছে স্প্রে করতে পারেন। এতে আরও বেশি ফল পাওয়া যায়। যদি ফুলের গাছ হয় তবে এর প্রয়োগে আরও বেশি ফুল পাবেন।
» ডিমের খোসার সার প্রয়োগের ফলে মাটিতে পিঁপড়ে ও পোকা মাকড় আক্রমনের আশংকা থাকে। তাই খোসার সারের সাথে নিম বা খৈলের গুড়ো মিশিয়ে প্রয়োগ করুন যাতে ক্ষতিকর কীট পতঙ্গের আক্রমন থেকে রক্ষা হয়।
» একটি মিক্সারে দুটি ডিম, একটি কলার খোসা এবং তিন চা চামচ চা বর্জ্য মিশ্রিত করুন। এই মিশ্রণটি বেশি ফলনের জন্য উদ্ভিদে প্রয়োগ করতে পারেন। আপনি প্রতি মাসে এটি করতে পারেন। কোনও সার প্রয়োগের আগে মাটিকে আর্দ্র রাখা উচিত। মনে রাখবেন, সান্ধ্যকালীন সময় সার প্রয়োগের জন্য সেরা সময়।
» ডিমের খোসা মিহি গুঁড়ো করে গাছে প্রয়োগ করুন। এতে শামুক, পোকামাকড় এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গ থেকে উদ্ভিদ সুরক্ষিত থাকবে।
চারা গাছ অঙ্কুরোদগমে ডিমের খোসা
ডিম এমনভাবে ভাঙুন যেন পুরো খোসাটি মোটামুটি অক্ষত থাকে। তারপর ভেতরে সারের মাটি দিয়ে এতে সর্বাধিক তিনটি বীজ রাখুন। যখন বীজ অঙ্কুরিত হবে, কেবলমাত্র একটি স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ আপনি নিতে পারেন এবং অন্যগুলি অপসারণ করতে পারেন। জানালার ধারে হালকা ছায়ায় রেখে দিন। এর পর ডিমের খোসা সহ আপনি গাছটি কোনও পাত্রে রোপণ করতে পারেন। ৩ সপ্তাহের মধ্যে ডিমের খোসাগুলি মাটিতে ভালভাবে মিশে যাবে।
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।