জৈবসার

মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় জৈবসার

অতীতে ইচ্ছামতো রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরা শক্তি প্রায় পুরোটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। জমির অম্লতা এমনভাবে বেড়েছে যে জমিতে ফসলই উৎপাদন এক রকম কঠিন হয়ে পড়েছে। জমির সেই হারানো শক্তিকে ফিরিয়ে আনতে হলে জৈব সার ব্যবহার করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আবাদি জমির প্রাণ ফিরিয়ে আনতে জৈব সার উৎপাদন এবং প্রয়োগে সচেষ্ট হতে হবে কৃষকদের পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের মানুষকে। এ সার মাটিকে রাখতে পারে সতেজ, ফিরিয়ে দিতে পারে আগের সেই প্রাণ।

জৈব সার কী
যেসব প্রাণিজ বা উদ্ভিজ পদার্থ পুষ্টি উপাদান ধারণ করে এবং ফসলের ফলন বৃদ্ধির জন্য জমিতে ব্যবহার করা হয় তাকে জৈব সার বলা হয়।
প্রাণিজ সার বলতে গৃহপালিত পশুপাখির মলমূত্র পচিয়ে তৈরিকৃত বস্তুকে বোঝায়। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রাণিজ জৈব সার হচ্ছে গোবর। কিন্তু আমাদের দেশে প্রাপ্ত গোবরের এক বিরাট অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গরুর নিচে বিছানো খড়, গৃহস্থালির উচ্ছিষ্ট দ্রব্যাদি, বাড়ির ঝাট দেয়া আবর্জনা প্রভৃতি গোবর মিশ্রিত করে পচানো সারকে খামারজাত সার বলে।

ফসলের পরিত্যক্ত অংশ (খড়) যতটুকু সম্ভব জমিতে রেখে দিয়ে অথবা জমিতেই আবার ফিরিয়ে দিয়ে পরে চাষের সময় মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দেয়া ভালো। যদিও দেশজুড়ে জ্বালানি হিসেবে এগুলোর মূল্য রয়েছে, তথাপি মাটির উন্নয়নকল্পে যতটুকু সম্ভব তা জমিতে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা উচিত। তাহলে ফসলের পরিত্যক্ত অংশে যে পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে সেগুলো হারিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আবার মাটিতে ফিরে আসবে।

কম্পোস্ট : কম্পোস্ট এক প্রকার জৈব সার। উদ্ভিজ ও প্রাণিজ বস্তুর উচ্ছিষ্ট অংশগুলো পচিয়ে এ সার তৈরি করা হয়। এ কাজে মরা পাতা, খড়, আগাছা, কচুরিপানা, শহুরে আবর্জনা, করাতের গুঁড়া, ধানের তুষ, আখের ছোবড়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

কুইক কম্পোস্ট (দ্রুত জৈব মিশ্র সার)
এটি স্বল্প সময়ে (১৫ দিনে) তৈরি ও ব্যবহার উপযোগী উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন জৈব সার।

তৈরির উপাদান : খৈল, কাঠের গুঁড়া বা চালের কুঁড়া ও অর্ধ পচা (ডিকম্পোজড) গোবর বা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা (১:২:৪)

তৈরির পদ্ধতি
* খৈল ভালোভাবে গুঁড়া করে চালের কুঁড়া-কাঠের গুঁড়া ও অর্ধ পচা গোবরের সঙ্গে ভালোভাবে মেশাতে হবে।
* মিশ্রণে পরিমাণমতো পানি যোগ করে কাই বানাতে হবে যাতে ওই মিশ্রণ দিয়ে কম্পোস্ট বল তৈরি করলে ভেঙে যাবে না, কিন্তু ১ মিটার ওপর থেকে ছেড়ে দিলে ভেঙে যাবে।
* মিশ্রিত পদার্থগুলো স্তূপ করে এমনভাবে রেখে দিতে হবে যাতে ভেতরে জলীয়বাষ্প আটকে পচনক্রিয়া সহজতর হয়। স্তূপটির পরিমাণ ৩০০-৪০০ কেজির মধ্যে হওয়াই ভালো। স্তূপের সব উপাদান একবারে না মিশিয়ে ৩-৪ বারে মেশাতে হবে।
* শীতকালে স্তূপের ওপরে ও চারদিকে চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আর বর্ষাকালে বৃষ্টির জন্য পলিথিন ব্যবহার করতে হবে এবং বৃষ্টি থেমে গেলে পলিথিন সরিয়ে ফেলতে হবে।
* স্তূপ তৈরির ২৪ ঘণ্টার পর থেকে স্তূপের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৬০-৭০ সেন্টিমিটার তাপমাত্রায় পৌঁছায়। তখন স্তূপে আঙুল ঢুকালে অসহনীয় তাপমাত্রা অনুভূত হবে (৬০-৭০ সেন্টিমিটার)। যার ফলে মিশ্রিত পদার্থের গুণাগুণ নষ্ট হতে পারে। তাই স্তূপ ভেঙে ওলট-পালট করে ১ ঘণ্টার জন্য মিশ্রণকে ঠা-া করে নিতে হবে এবং আগের মতো স্তূপ করে রাখতে হবে।
*এভাবে ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর পর স্তূপ ভেঙে ওলট-পালট করতে থাকলে ১৫ দিনের মধ্যে ওই দ্রুত মিশ্র জৈব সার জমিতে প্রয়োগের উপযোগী হবে। সার তৈরি হলে তা ঝুরঝুরে শুকনা এবং কালো বাদাম বর্ণের হবে।

প্রয়োগমাত্রা
* জমির উর্বরতা ও ফসল ভেদে প্রতি শতাংশে প্রায় ৬-১০ কেজি কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহার করতে হয়। ফসলের জমি তৈরির সময় প্রতি শতাংশে ৬ কেজি এবং কুশি পর্যায়ে সেচের আগে ২ কেজি করে উপরি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
* সবজি ফসলের ক্ষেত্রে জমি তৈরির সময় প্রতি শতাংশে ৬ কেজি এবং ৪ কেজি সার রিং বা নালা করে সবজি বেডে প্রয়োগ করতে হয়। সার প্রয়োগের পর সেচ দিতে হয়।

পুষ্টিমান
* কুইক কম্পোস্ট সারে নাইট্রোজন ২.৫৬ ভাগ, ফসফরাস ০.৯৮ ভাগ ও পটাশিয়াম ০.৭৫ ভাগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কিছু গৌণ খাদ্য উপাদান থাকে।

ব্যবহারের উপকারিতা
কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়, অণুজীবের ক্রিয়া বাড়তে থাকে, ফসলের প্রয়োজনীয় সব খাদ্য উপাদান সহজলভ্য হয়। ফলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় এবং গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

লেখক: আবুল কালাম আজাদ
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।