পুকুর ব্যবস্থাপনা

পুকুরের কিছু সাধারণ সমস্যা ও প্রতিকার

পুকুরের মাছ চাষের সময় পুকুর ব্যবস্থাপনায় কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার পুকুরের কিছু সমস্যা মাছের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে। চলুন দেখি পুকুরে কি সমস্যা হতে পারে আর প্রতিকার কি?

মাছ ভেসে ওঠা ও খাবি খাওয়া (পানিতে অক্সিজেনের অভাব)

পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদার উপস্থিতি, জৈব পদার্থের পচন, বেশি সার প্রয়োগ, ঘোলাত্ব, মেঘলা আবহাওয়া ও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে পানিতে অক্সিজেনের অভাব হয় এবং এ সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে মাছ ও চিংড়ি মারা যায়। অক্সিজেনের অভাবে মৃত মাছের মুখ “হা’ করা থাকে।

প্রতিকার ব্যবস্থা: পানিতে সাঁতার কেটে বা পানির উপর বাঁশ পিটিয়ে পুকুরের পানি আন্দোলিত করে অথবা হররা টেনে পুকুরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে হবে। বিপদজনক অবস্থায় পুকুরে পরিষ্কার নতুন পানি সরবরাহ করতে হবে অথবা পাম্প দিয়ে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

পানির উপর সবুজ স্তর

অতিরিক্ত সবুজ শেওলা উৎপাদনের ফলে এ সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে মাছের শ্বাস কষ্ট হয় হয় ও মাছ পানির উপর খাবি খেতে থাকে। শেওলা পচে পরিবেশ নষ্ট হয়। মাছ ও চিংড়ির মৃত্যু হয়।

প্রতিকার ব্যবস্থা: পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে তুলে ফেলা যায়। সার ও খাদ্য দেওয়া সাময়িক বন্ধ রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে কিছু পানি পরিবর্তন করতে হবে। কিছু বড় সিলভার কার্প ছেড়ে জৈবিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

পানির উপর লাল স্তর

লাল শোওলা অথবা অতিরিক্ত আয়রণের জন্য এ সমস্যা দেখা যায়। এর প্রভাবে পানিতে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। মাছ ও চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায়। আবার পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতিও হয়। শতাংশ প্রতি ১২-১৫ গ্রাম কপার সালফেট বা তুঁতে ছোট ছোট পোটলায় বেঁধে পানির উপর থেকে ১০-১৫ সে.মি নিচে বাঁশের খুটিতে বেঁধে রাখলে বাতাসে পানিতে ঢেউয়ের ফলে তুঁতে পানিতে মিশে শেওলা দমন করে।

প্রতিকার ব্যবস্থা: খড়ের বিচালি বা কলাগাছের পাতা পেঁচিয়ে তেরি করে পানির উপর টেনে বা পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে তুলে ফেলা যায়।

ঘোলা পানি

বৃষ্টি ধোয়া পানি পুকুরে প্রবেশ করে পানি ঘোলাটে হয়ে যেতে পারে। পাড়ে ঘাস না থাকলেও এমনটি দেখা যায়। এর ফলে পানিতে সূর্যের আলো ঢুকে না, ফুলকা নষ্ট হয়ে যায় ও প্রাকৃতিক খাদ্য কমে যায়।

প্রতিকার ব্যবস্থা: পুকুরে চুন (১-২ কেজি/শতক), জিপসাম (১-২ কেজি/শতক) বা ফিটকারী (২৪০-২৪৫ গ্রাম/শতক) প্রয়োগ করা যায়।

পুকুরের তলদেশের কাদায় গ্যাস জমা হওয়া

কারণ: পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদার উপস্থিতি এবং বেশি পরিমাণ লতাপাতা ও আবর্জনার পচনের ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে করে পানি বিষাক্ত হয়ে মাছ মারা যায়।

হররা

প্রতিকার ব্যবস্থা: পুকুর শুকনো হলে অতিরিক্ত কাদা তুলে ফেলতে হবে। হররা টেনে তলার গ্যাস দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে।

পানির ক্ষারত্ব

পানিতে ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়াম কম বা বেশী হ্ওয়ার ফলেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফলে মাছ সহজেই অম্লতা এবং বিষাক্ততার দ্বারা আক্রান্ত হয়। মাছ চাষের পুকুরে পানির ক্ষারত্বের উপযুক্ত মাত্রা ৪০-২০০ মিলিগ্রাম/লিটার।

প্রতিকার: পুকুরে ০.৫ কেজি/শতাংশ হারে পোড়াচুন অথবা শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে জিপসাম প্রয়োগ করতেহবে। ক্ষারত্ব কমে গেলে পুকুরে ছাই ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

পিএইচ জনিত সমস্যা

পানিতে পিএইচ কম থাকলে মাছের শরীর থেকে প্রচুর শ্লেষ্মা বেরিয়ে যায় এবং ফুলকা আক্রান্ত হয়। পিএইচ বেশী হলে পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায় এবং মাছের খাদ্য চাহিদা কমে যায়। এ ছাড়া মাছের শরীর খসখসে হয়ে যায়, মাছ ক্রমে দূর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজেই রোগে আক্রান্ত হয়। পুকুরের পানিতে পিএইচ গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৭-৯।

প্রতিকার: পিএইচ কম হলে সাধারনতঃ শতাংশ প্রতি ১-২ কেজি হারে চুন ব্যবহার করতে হবে। ডলোমাইট অথবা জিপসাম প্রয়োগ করে পিএইচ মান বাড়ানো যায়। পিএইচ এর মাত্রা বেড়ে গেলে পুকুরে তেঁতুল বা সাজনা গাছের ডাল ৩-৪ দিন ভিজিয়ে তা তুলে ফেলতে হবে। সরাসরি তেঁতুল পানিতে গুলে প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।