হাইব্রিড ধান চাষ পদ্ধতি
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধানের উৎপাদন হ্রাস ও বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে খাদ্য চাহিদা মেটানো ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য ধান উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা মতে, ২০২০ সালে ৭৬০ মি. মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করতে হবে। আমাদের দেশে খাদ্য চাহিদা বেড়ে ৩৫ মিলিয়ন টন হবে। এশিয়া মহাদেশে ধানের উৎপাদন বাড়াতে আবাদি জমি বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই এ অতিরিক্ত ধানের চাহিদা অবশ্যই প্রতি একক আয়তনের উৎপাদন বাড়িয়ে মিটাতে হবে। হাইব্রিড ধান চাষের মাধ্যমে ১৫-২০% বেশি উৎপাদন সম্ভব। তবে হাইব্রিড ধানের ভালো ফলন পেতে হলে বীজ বাছাই থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ফসলের পরিচর্যা করে যেতে হবে।
জাত নির্বাচন : উফশী জাতের চেয়ে বেশি ফলন দিতে সক্ষম এমন হাইব্রিড জাত নির্বাচন করতে হবে। এখন পর্যন্ত উল্লেখ্য হাইব্রিড ধান বীজ ব্রি হাইব্রিড-১, ২, এল পি-০৫, হীরা-৫, মানিক-২, সুরমা-৪, তেজ, অগ্রণী-৭ ইত্যাদি।
বীজতলা তৈরি : পানিতে ডুবে না, গাছের ছায়া পড়ে না এরূপ জায়গা প্রয়োজন মতো পানি দিয়ে ২-৩টি চাষ ও মই দিয়ে অন্তত ৭-১০ দিন পানি আটকে রাখা দরকার। এরপর চাষ ও মই দিয়ে থকথকে কাদাময় করে জমি তৈরি করতে হবে। প্রতি বর্গমিটারে ২ কেজি গোবর বা পচা আবর্জনা সার প্রয়োগ করতে হবে। ১.২৫ মিটার চওড়া ও জমি অনুযায়ী লম্বা করে বীজতলা তৈরি করতে হবে। বীজ তলার জন্য ০.৫ মিটার নালা রাখতে হবে। ফাঁকা রাখা ০.৫ মিটার জায়গা থেকে ১০ সে.মি. গভীর করে মাটি তুলে দুধারে দিতে হবে।
বীজ বপন ও বীজতলার যত্ন : পুষ্ট ও পরিষ্কার বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ডুবিয়ে রেখে তিনদিন বস্তাবন্দি অবস্থায় জাগ দিয়ে অঙ্কুরিত করে নিতে হবে। এরকম অঙ্কুরিত বীজ প্রতি বর্গমিটারে ৫০ গ্রাম হিসেবে সমানভাবে বপন করতে হবে। হেক্টর প্রতি মাত্র ১৫-২০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। অথচ প্রচলিত পদ্ধতিতে দরকার ৪০-৪৫ কেজি। বীজ বপনের ৩-৪ দিন পর থেকে চারা গজানো পর্যন্ত পানি দিয়ে নালা ভর্তি করে রাখতে হবে। বীজতলা শুকিয়ে গেলে শিকড় বেশি বড় হয়ে যায়। বীজ বোনার ১০ দিন পর প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া, ৪ গ্রাম টিএসপি ও ৭ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। যত্ন সহকারে চারা উঠাতে হবে যাতে চারার শিকড় ছিঁড়ে না যায়।
রোপণের জন্য জমি তৈরি : উর্বর, সুনিষ্কাশিত ও সেচের সুবিধাযুক্ত জমি নির্বাচন করতে হবে। প্রয়োজন মতো পানি দিয়ে মাটির প্রকার ভেদে ৩-৪ চাষ ও মই দিয়ে কাদাময় করে নিতে হবে।
চারা রোপণ : জমিতে ছিপছিপে পানি রাখতে হবে। ৩০-৩৫ দিনের ১-২টি করে সুস্থ-সবল চারা ২০ সেমি (৮”) ঢ ১৫ সেমি (৬”) দূরে রোপণ করতে হবে। বোরো মৌসুমে ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। আগাম বপন অকালপক্ব ছড়া তথা ছোট আকারের ছড়া বের হওয়ার অন্যতম কারণ।
আগাছা দমন : হাইব্রিড ধানের জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনা : চারা রোপণের পর থেকে জমিতে ৫-৭ সে.মি. (২-৩”) পানি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। কাইচ থোড় আসা শুরু করলে পানির পরিমাণ দিগুণ করা উচিত।
পোকামাকড় ও রোগ-বালাই দমন : হাইব্রিড ধানের রোগ পোকা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা দমনের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। মাজরা পোকা, গলমাছি, পামরি পোকা, বাদমি গাছ ফড়িং এবং খোলপোড়া ও খোল পচা রোগ দেখা দিতে পারে। তাহলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফসল কর্তন : প্রচলিত জাতের বোরো হাইব্রিড ধানের দানা পরিপুষ্ট এবং পরিপক্ব হতে বেশি সময় নেয়। যখন ছড়ায় ৯০% ধান পেকে যায় তখনই ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
দেশের কৃষকদের হাইব্রিড ধান চাষাবাদ সম্পর্কে ধারণা খুব সীমিত। হাইব্রিড ধানের চাষাবাদের জন্য সঠিক মাঠ ব্যবস্থাপনা অতি আবশ্যক। এখানে উল্লেখ্য, কৃষক তার উৎপাদিত ধান বীজ হিসেবে পরবর্তী মৌসুমে ব্যবহার করতে পারবেন না। এখানে ফসল উৎপাদনের যে মৌসুম ও উপকরণের মাত্রা ও পরিমাণ যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এলাকাভেদে তা কিছুটা তারতম্য হওয়া স্বাভাবিক।
লেখক: কৃষিবিদ প্রণয় বালা
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।