বাড়িতে আলু সংরক্ষণের পদ্ধতি
দেশে প্রায় প্রতি বছরই আলুর বাম্পার ফলন হয়। কিন্তু হিমাগারের অভাবে আলু সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে; নষ্ট হচ্ছে। আলু প্রতি কেজি ৫ থেকে ৬ টাকা দরে কৃষকরা বিক্রি করছে। দেশে প্রায় এক থেকে দুই কোটি টনের মত আলু উৎপাদন হয়। অথচ দেশে অবস্থিত মোট ৩৩৭টি হিমাগারের মোট ধারণ ক্ষমতা ২২ লাখ টন। অর্থাৎ উৎপাদিত আলুর মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগ আলু সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি বছর শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ আলু নষ্ট হয়।
প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস আলু সংরক্ষণ করতে হয়। হিমাগার ছাড়াও কৃষকরা নিজ বাড়িতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন। হিমাগারের এক বস্তা আলু সংরক্ষণ করতে ২৫ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হয়। কৃষকরা বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করলে খরচ পড়ে প্রতিবস্তা মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকা। এ জন্য কৃষকরা সহজেই বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন। নিচে আলু সংরক্ষণের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো :
আলু সংগ্রহের পর প্রখর সূর্যালোকে আলু রাখা ঠিক নয়। এতে আলুতে ব্যাকহার্ট রোগ হতে পারে। আলু সংগ্রহের পর কাটা, রোগাক্রান্ত, পচা, ক্ষত, থ্যাতলানো ও বেশি ছোট আলু বাদ দিতে হয়। শুধু ভাল আলু গুদামে রাখা উচিত। আলো-ছায়ায় শুকিয়ে গুদামজাত করতে হবে।
একটাও আলু যাতে ভেজা না থাকে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
গুদামজাতকরণ : তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা ও বায়ু চলাচল করে এমন শুষ্কস্থানে আলু সংরক্ষণ করতে হয়। বাঁশের চাটাইয়ের বেড়া এবং ছনের ছাউনি দিয়ে ভূমি থেকে বাঁশের খুঁটি দিয়ে উচুঁ করে ঘর তৈরি করতে হয়। আলুর শ্বাস-প্রশ্বাসের তাপ বের হওয়া এবং বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। মেঝেতে বাঁশের চাটাই কিংবা বালু বিছিয়ে এর ওপর স্তুপাকারে আলু রাখতে হবে। তবে স্তুপ যেন এক মিটার উঁচু এবং ২ মিটারের বেশি প্রশস্ত না হয় এবং যথেষ্ট বায়ু চলাচলের সুবিধা থাকে। ২ থেকে ৩টি তাক করে স্তরে স্তরে স্তুপ করে আলু রাখা যেতে পারে। পাত্রে আলু সংরক্ষণ করা যায়। বাঁশের ঝুড়ি, ডোল বা বাঁশের ও মাটির যে কোনো পাত্রে আলু রাখা যায়। এক্ষেত্রে পাত্রগুলো ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে। আলুর রোগ ও পোকা দ্বারা আক্রমণ রোধ করার জন্য নিম, নিশিন্দা, বিষ কাটালি ইত্যাদির পাতা গুঁড়ো করে আলুর স্তুপে মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে কীটনাশক দেয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, ক্ষেত্রে আলু পরিপক্ব হওয়ার সময় থেকে আলুর সুপ্তাবস্থা শুরু হয়। আলু গুদামে রাখার কিছুদিন আগেও সুপ্তাবস্থা শুরু হতে পারে। মোটামুটিভাবে কোনো মারাত্মক ক্ষতি ছাড়া আলুর সুপ্তাবস্থা শেষ হওয়া থেকে প্রায় এক মাস অথবা অঙ্কুরোদগম পুরোপুরি শুরু হওয়া পর্যন্ত আলু গুদামে রাখা যেতে পারে। অর্থাৎ প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস আলু এভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
পর্যবেক্ষণ : ১৫ দিন পর পর সংরক্ষিত আলু দেখতে হবে। খারাপ গন্ধ হলে বুঝতে হবে দু’একটি আলু পচেছে। পচা আলু সরাতে হবে। ইঁদুরের উপস্থিতির কোনো লক্ষণ দেখলে ইঁদুর মারতে হবে। পোকা-মাকড় ও রোগ-জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত আলু বাছাই করতে হবে। স্তুপের নিচের আলু উপরে এবং উপরের আলু নিচে নেড়ে দিতে হবে।
বীজ হিসেবে রাখা আলুর অঙ্কুর গজানো শুরু হলেই আলাদাভাবে গুদামজাত করতে হবে। যেখানে দিনের আলো পড়ে (কিন্তু সকালে এবং দিনের শেষ ভাগ ছাড়া সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে না) এমন স্থানে তাক বা মেঝের উপর ২ থেকে ৩টি স্তরে আলু গুদামজাত করা যায়। অঙ্কুর গজানো শুরু হলেই বুঝতে হবে বায়ু চলাচলকৃত গুদামে আলু আর বেশি দিন রাখা যাবে না। সুতরাং বীজ আলু পরিত্যক্ত আলুর গুদামে স্থানাস্তর করতে হবে।
লেখক : ফরহাদ আহাম্মেদ, কৃষিবিদ, শিক্ষক ও সাংবাদিক
এগ্রোবাংলা ডটকম
চাষি পর্যায়ে আলু সংরক্ষণ
গত বছর হিমাগারের অভাবে আলু সংরক্ষণ করা যায়নি বলে প্রচুর আলু পচে গেছে। অপর দিকে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ খরচও বেশি। হিমাগারে এক বস্তা আলু রাখতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লাগে। চাষিরা নিজেরাই আলু সংরক্ষণ করলে খরচ হয় মাত্র ১০ থেকে ২০ টাকা। দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয় সে পরিমাণ হিমাগার নেই। প্রতি বছরই আলু পচে যায় এবং অল্প দামে বিক্রি করে। চাষিরা নিজের বাড়িতে সহজেই আলু সংরক্ষণ করতে পারেন। আলু পরিপক্ব হওয়ার পর থেকে উফশী জাত দু-তিন মাস এবং দেশী জাতের সুপ্তাবস্খা চার-ছয় মাস থাকে। ক্ষেতে আলু পূর্ণ বৃদ্ধি হওয়ার ১০ থেকে ১৪ দিন পর অর্থাৎ গাছ মরতে শুরু করলে আলু সংগ্রহ করতে হবে। মাটি ভেজা অবস্খায় কোনোক্রমেই ফসল সংগ্রহ করা উচিত নয়। আলু স্খানান্তর যত্নের সাথে করতে হবে এবং শক্ত মেঝের ওপর ফেলা ঠিক নয়।
সংরক্ষণ পদ্ধতি : আলু সংগ্রহের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাঠ থেকে আলু সরানো উচিত এবং প্রখর সূর্যালোকে ফেলে রাখা উচিত নয়। এতে আলুর ব্ল্যাক হার্ট রোগ হতে পারে। আলু সংগ্রহের পর কাটা, রোগাক্রান্ত, পচা, ক্ষত, থেঁতলানো ও বেশি ছোট আলু বাছাই করতে হবে। শুধু ভালো আলু গুদামে রাখা উচিত। আলু ছায়াযুক্ত স্খানে শুকিয়ে গুদামজাত করতে হবে। একটা আলুও যাতে ভেজা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গুদামজাতকরণ : তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা ও বায়ু চলাচল করে এমন স্খানে আলু সংরক্ষণ করতে হয়। বাঁশের চাটাইয়ের বেড়া এবং ছনের ছাউনি দিয়ে ভূমি থেকে বাঁশের খুঁটি দিয়ে উঁচু করে ঘর তৈরি করতে হয়। টিউবার (আলু) জীবন্ত উদ্ভিদাংশ বলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় তাপ সৃষ্টি করে ও পানি বের করে দেয়। এ তাপ গুদামজাতকালীন সময় বায়ু চলাচলের মাধ্যমে অবশ্যই বের করে দিতে হবে। এ জন্য তাপ বের হওয়া ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্খা করতে হবে। মেঝেতে বাঁশের চাটাই কিংবা বালু বিছিয়ে এর ওপর স্তূপাকারে আলু রাখতে হবে। তবে আলুর স্তূপ যেন তিন ফুট উঁচু ও ছয় ফুটের বেশি প্রশস্ত না হয় এবং যথেষ্ট বায়ু চলাচলের সুবিধা রাখতে হবে। দু-তিনটি তাক করে স্তরে স্তরে স্তূপ করে আলু রাখা যেতে পারে। বাঁশের ঝুড়ি, ডোল বা বাঁশের ও মাটির যেকোনো পাত্রে আলু রাখা যায়। এ ক্ষেত্রে পাত্রগুলো ঠাণ্ডা স্খানে রাখতে হবে। আলু পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত রোধ করার জন্য নিম, নিশিন্দা, বিষকাটালি ইত্যাদি পাতা গুঁড়ো করে আলুর স্তূপে মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে কীটনাশক দেয়া যাবে না।
মনে রাখতে হবে, ক্ষেতে আলু পরিপক্ব হওয়ার সময় থেকেই আলুর সুপ্তাবস্খা শুরু হয়। আলু গুদামে রাখার কিছু দিন আগেও সুপ্তাবস্খা শুরু হতে পারে। মোটামুটিভাবে কোনো মারাত্মক ক্ষতি ছাড়া আলুর সুপ্তাবস্খা শেষ হওয়া থেকে প্রায় এক মাস অথবা অঙ্কুরোদগম পুরোপুরি শুরু হওয়া পর্যন্ত আলু গুদামে রাখা যেতে পারে। অর্থাৎ প্রায় সাত-আট মাস আলু এভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
পর্যবেক্ষণ : ১৫ দিন পর পর গুদামে বা পাত্রে সংরক্ষিত আলু দেখতে হবে। খারাপ গìধ হলে বুঝতে হবে দু-একটি আলু পচেছে। পচা আলু সরাতে হবে। ইঁদুরের কোনো চিহ্ন দেখলে বা টের পেলে ইঁদুর মারার ব্যবস্খা করতে হবে। স্তূপের নিচের আলু ওপরে এবং ওপরের আলু নিচে নেড়ে দিতে হবে। আলু ভিজে গেলে হালকা রোদে শুকিয়ে আবার গুদামজাত করতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন : গুদামে আলু সংরক্ষণ করার পর জাবপোকা ও আলুর টিউবার মথ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। জাবপোকা দমনের জন্য গুদামের আশপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিম, নিশিন্দা, ল্যান্টানা, বিষকাটালির পাতা গুঁড়ো করে আলুতে দিতে হবে। টিউবার মথ দমনের জন্য ক্ষেতে আলু মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। মথ দ্বারা ছিদ্র করা আলু বাছাই করা, খুব শুকনো বালু দিয়ে আলু গুদামে ঢেকে রাখা উচিত। গুদামজাত অবস্খায় সৃষ্ট রোগের অধিকাংশ জীবাণু জমি থেকে আসে এবং গুদামে রোগের অনুকূল পরিবেশে বিস্তার লাভ করে। আলুর গাছ জন্মানোর শুরু থেকেই রোগ দমন ব্যবস্খাপনা শুরু করা উচিত। এজন্য আগাম বীজ রোপণ, ফসল সংগ্রহ ও গুদামজাতকরণ। আলু হালকা রোদে বা ছায়ায় শুকিয়ে সংরক্ষণ করা উচিত।
শস্য বহুমুখীকরণ কর্মসূচির (সিডিপি) আওতায় আলু সংরক্ষণের ওই পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে যেকোনো পরামর্শের জন্য উপজেলা কৃষি অফিস এবং উপসহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
লেখক: ফরহাদ আহাম্মেদ কৃষিবিদ
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।