গবাদি পশুর ফ্যাসিওলিয়াসিস রোগ
গবাদি পশুর যকৃতে ফ্যাসিওলা জাইগানটিকা ও ফ্যাসিওলা হেপাটিকা নামক পাতাকৃমি দ্বারা সৃষ্ট পশুর রোগকে ফ্যাসিওলিওসিস বলে। রক্তসল্পতা, ম্যান্ডিবুলের নিচে পানি জমা, যা দেখতে বোতলের মত, ডায়রিয়া এবং ধীরে ধীরে কৃশকায় অবস্থায় পরিণত হওয়াই এ রোগের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
রোগের বিস্তার: সুনির্দিষ্ট প্রজাতির শামুক সুনির্দিষ্ট প্রজাতির পাতাকৃমির হিসেবে কাজ করে। তাই যে সব জায়গায় এই প্রজাতির শামুক রয়েছে সেখানে ফ্যাসিওলা প্রজাতির প্রাদুর্ভাব বেশি। বাংলাদেশে ফ্যাসিওলা জাইগানটিকা পাতাকৃমির মাধ্যমিক পোষক লিমনিয়া রুফেসেন্স ও লিমনিয়া একুমিনেটা রয়েছে। ফলে আমাদের দেশে ফ্যাসিওলা জাইগানটিকা পাতাকৃমি পশুর ফ্যাসিওলিওসিস রোগের কারণ।
গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ায় এ রোগ হয়ে থাকে। বেশি বয়স অপেক্ষা কম বয়সের পশুতে এ কৃমিতে আক্রান্তের হার বেশি। এতে পশুর যকৃত নষ্ট হয়, প্রজনন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, দুধ ও মাংস উৎপাদন কমে যায়। বাংলাদেশে প্রায় ২১ ভাগ গরুতে এবং সিলেট অঞ্চলে প্রায় ২১.৫৪ ভাগ ছাগলে ফ্যাসিওলা জাইগানটিকা পাতাকৃমিতে হয়।
রোগের লক্ষণ: ১. তীব্র যকৃত প্রদাহ এবং রক্তক্ষরণের ফলে লক্ষণ প্রকাশের আগেই পশুর হঠাৎ মৃতু্য ঘটে;
২. আক্রান্ত পশুর যকৃতে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক কৃমির মাইগ্রেশনের ফলে যকৃত কলা ধ্বংস হয় এবং যকৃতিতে প্রোটিন সংশেস্নষণ হ্রাস পায়। এতে পশুর হাইপোপ্রিটিনিমিয়া তথা বটল জ্বর হয়;
৩. প্রতিটি কৃমির দ্বারা যকৃত প্যারেনকাইমায় রক্ত শোষণ ও ক্ষরণের কারণে প্রতিদিন প্রতিটি আক্রান্ত পশুর দেহ হতে ০.৫ হতে ১০ মিলিলিটার রক্তনাশ হয় এবং রক্তসল্পতা দেখা দেয় ও
৪. প্রাপ্তবয়ষ্ক কৃমি পিত্তনালীর প্রদাহ ঘটিয়ে সেখানে ফাইব্রোসিস সৃষ্টি করে। ফলে পিত্ত অন্ত্রনালীতে যেতে পারে না। তাই বদহজম ও ডাইরিয়া দেখা দেয়। ক্ষুধামন্দা ও দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। চোখের কনজাংটিভা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
চিকিৎসা: ১. ট্রাইক্লেবেন্ডাজল বোলাস প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম করে আক্রান্ত পশুকে খাওয়ালে ৯০ থেকে ১০০ ভাগ সুফল পাওয়া যায়;
২. নাইট্রোক্সিলিন ইনজেকশন প্রতি ৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১.৫ মিলিলিটার হিসেবে গরু, মহিষ ও ছাগলের ত্বকের নিচে প্রয়োগ করে কার্যকরী ফল পাওয়া যায়;
৩. সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে দুর্বলতা ও রক্তসল্পতার জন্য ভিটামিন বি-কমপেস্নক্স ইনজেকশন দেয়া এবং মিনারেল মিকচার খাওয়ানো ভাল ও
৪. তীব্র পানি শূন্যতায় ইলেকট্রোলাইট সলুশন যেমন Dextrose-saline শিরায় ইনজেকশন করা যায়।
প্রতিরোধ: ১. এই কৃমির মাধ্যমিক পোষক শামুকের সংখ্যা হ্রাস করতে হবে। এক্ষেত্রে শামুক খেকো পাখি যেমন পাতিহাঁস পালন অথবা প্রতি হেক্টর জমিতে ২২.৫ কেজি করে ০.৫% কপার সালফেট অথবা হেক্টরপ্রতি জমিতে ১১.২ কেজি কপার পেন্টাক্লোরফেনেট ৪৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ছিটাতে হবে;
২. পশুকে সন্দেহজনক স্থান যেমন নিচু জায়গা বা ড্রেনের পাশে ঘাস খাওয়ানো থেকে বিরত রাখতে হবে ও
৩. পশুকে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ মত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
লেখক:ডা: সুমন তালুকদার (রুনু)
এগ্রোবাংলা ডটকম