মাছের সুদিন ফিরিয়ে আনতে চাই কৌশলগত পরিবর্তন
মাছের সুদিন ফিরিয়ে আনতে চাই কৌশলগত পরিবর্তন
দিন দিন জল ও জায়গা কমতে কমতে একেবারেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে আমাদের জলাশয়গুলো। মানুষ যেভাবে বাড়ছে সেভাবে বাড়ছে না মাছ চাষ। এ জন্য দরকার বিশাল চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন কৌশল পরিবর্তন করা। অল্প জলের আয়তনে কীভাবে বেশি মাছ চাষ করা যায় তার কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে আমাদের মৎস্য বিজ্ঞানীদের। প্রতি বছর যে ৮০ লক্ষ হেক্টর কৃষি জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে বেশ বড় অংশই রয়েছে জলাশয়। আবার নদীর নাব্যতা রোধ, মরে যাওয়া, লবণজল উপরে উঠে আসাসহ কীটনাশকের কারণে প্রাকৃতিক মৎস্যক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির জন্য সহজে পাওয়া আমিষের যোগান অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে। নানা বিপর্যয়ের কারণে আমাদের মৎস্য খাতকে উৎপাদনমুখী করে তুলতে হলে বেশ কয়েকটি বিষয়ের সমন্বয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। তারমধ্যে পরিবেশ, পানি, পুঁজি, পোনা, পুকুর, প্রতিষ্ঠান, পরিশ্রম ও আধুনিক পদ্ধতি অন্যতম।
পরিবেশ : রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে মাছ চাষে পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা খুবই দরকার। ক্ষমতা বদলের প্রেক্ষিতে আমাদের দেশের জলাশয়ের দখল মালিকানা পরিবর্তিত হয়ে যায়। যে জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে জলাশয়গুলো উৎপাদন বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে সরকারি মালিকায় পরিচালিত হাওড়-বাঁওর, মরা নদী, পুকুর উল্লেখযোগ্য। আবার অনেক সময় লোকাল পেশীশক্তির প্রভাব মাছ চাষে প্রতিবন্ধকতার আরেকটি কারণ। বিশেষ করে সন্ত্রাস প্রভাবিত এলাকায় এই সমস্যা বেশি। চুরি, রাতের আঁধারে জলাশয়ে বিষ ঢেলে মাছ নিধনের প্রবণতা এখন বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত ঘটছে। এর সাথে প্রাকৃতিক ঝুঁকিতো রয়েছেই।
সামগ্রিকভাবে ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করে মাছ চাষ করতে তাই পরিবেশকে বিবেচনায় আনতেই হবে। গত কয়েক বছর সরকারের মালিকানার বড় বড় জলাশয়গুলোর ব্যবস্থাপনায় বেশ সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন : মৎস্য চাষি নির্বাচনে বা তাদের সমিতি নির্ধারণে রয়েছে গলদ। একজনের কাজ আরেকজন
করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে বেশি। মাঠ পর্যায়ে আকাক্সক্ষা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থপনা নীতিমালা তৈরি করা দরকার। বা¯-বতার বিবেচনায় সমস্যা থাকে না।
পানি : পানিই মাছের আবাসিক অবকাঠামো। মাছের চলাফেরা, খাবার গ্রহণসহ সবকিছুই সম্পন্ন হয় পানিতে। এমনকি মলমূত্র ত্যাগ সংঘটিত হয় এখানেই। বর্তমানে পানির অভাবে মাছ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। খালে, বিলে, নদীতে পানি নেই। তাই মাছও নেই। কৃত্রিম ব্যবস্থায় মাছকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। স্বকীয়তা বিলিয়ে দিয়ে কৃত্রিম পরিবেশকে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। তারপরেও পানি নেই। মাছ চাষের পানির যোগান অপরিহার্য। তাই চাষের পূর্বে পানির উৎস নিশ্চিত করতে হবে। মিঠা এবং লোনা দুই পানিতেই মাছ হয়। মিঠা পানির মাছ চাষের সমস্যা এখন প্রকট। পানির মূল রিসোর্স বন্ধ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে অনেক প্রজাতির মিঠা পানির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পদ্মা, মধুমতি, মেঘনা, যমুনা, চলন বিলসহ ব্রহ্মপুত্র অববাহিকাসহ সব নদ-নদীতে পানির অভাব। জেলে পলীর দিকে তাকালে মনে হয় নীরব নিভৃত এক অচেনা পল্লী। পূজা পার্বণ, ঈদে আনন্দ নেই জেলে পরিবারগুলোতে। অনেকে পেশা বদলিয়ে নাম লিখিয়েছে অন্য পেশায়। বর্তমান পানির নিশ্চায়তার প্রধান উৎস হচ্ছে অতিবৃষ্টি এবং বন্যার পানির স্টক করে রাখা। এ সংগ্রহ থেকে শস্য ও মাছ চাষ করা হয়।
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।