বিষমুক্ত শাক-সবজি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা
সমস্ত পৃথিবীর মানুষ আজ দুটো বিষয়ে বেশ চিন্তিত। তার একটি হল পরিবেশ পরিবর্তন, অপরটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনে খাদ্যশস্য উৎপাদনেও প্রভাব পড়েছে। তারপর ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিযোগিতা ভিত্তিক কৃষিজ উৎপাদনের জন্য গুণগত মাত্রা যাচাই-বাছাই না করেই তার উৎপাদন করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি থেকে শুরু করে কৃষি ও পরিবেশবাদীরা আজ পরিবর্তিত ধারার সাথে খাপ খাইয়ে মানুষের স্বাস্থ্য অটুট রাখার মত খাদ্য উৎপাদনের বিষয়ে নজর দিয়েছেন। যে জন্য কৃষিজ উৎপাদনে কোনরূপ রাসায়ানিক সার, কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, গ্রোথ হরমোন, এন্টিবায়টিক এমনকি অন্য যে কোন কৃত্রিম উপকরণ ব্যবহার না করে প্রকৃতি প্রদত্ত উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করেছেন। সেই প্রয়োজনে বিকল্প খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে টিকে থাকার প্রয়াস নিচ্ছেন। এজন্য এখন সবখানে উচ্চারিত হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্যকে অটুট রেখে জৈবিক ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ বান্ধব ফসল তৈরিতে অর্গানিক ফার্মিং পদ্ধতির আমন্ত্রণ। এক পরিসংখ্যানে জানা যায় পৃথিবীতে ৩০.৬ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে জৈব কৃষি বা অর্গানিক ফার্মিং হয়। যা পৃথিবীর চলমান আবাদী জমির ২ শতাংশ। এই পদ্ধতিতে আগত খাদ্যদ্রব্য বিক্রি হয় বছরে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
হাইব্রিড বা উচ্চফলনশীল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন এবং ভোগ করে মানুষের শারীরিক ধরনটা “ব্রয়লার মুরগির বডি স্ট্রেন্থ” এর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। কেননা খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করতে গিয়ে যে কৃত্রিম সার, ওষুধ বা বিষাক্ত রাসায়ানিক দ্রব্যাদির ক্ষতিকর প্রভাব শুধু মাটি, জল, পরিবেশ পর্যন্তই পৌছেনি তা এখন মানব স্বাস্থ্যকেও স্পর্শ করেছে। যে জন্য মানুষের জন্য যেমন নিত্য নতুন রোগ জন্ম নিয়েছে আবার ফসলের জন্যও অদ্ভুদ সব রোগবালাই এসে হাজির হয়েছে। এতসবের পরেও আমাদের প্রতিদিনের ফেলে দেয়া শাক-সবজির উচ্ছিষ্টাংশ, গবাদি পশুর পরিত্যাক্ত মলমূত্র, সহজ উৎপাদনে সক্ষম গাছপালা, খৈল এমনকি প্রকৃতির লাঙ্গল কেঁচো দিয়ে আমরা পরিবেশ ভারসাম্য জৈব সারের ব্যবহার করতে পারি। যাতে একদিকে যেমন প্রয়োজনীয় পুষ্টির উপযুক্ত মাত্রা বিদ্যমান থাকবে, অপরদিকে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ওই সারে উপাদিত ফসলের কোন ঝুঁকিই থাকে না। পৃথিবীর উন্নত দেশেগুলো যেমন আমেরিকার দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, এখানে একসময় মাংসের তৈরি খাদ্য যে দামে বিক্রি হত, আজকে সবজির তৈরি খাদ্য দ্রব্য সেই দামে বিক্রি হয়। মাংসের সেই খাদ্য হতে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলা যায়। মানুষের মাঝে এই উপলদ্ধি এসেছে যে, কৃত্রিম কোনকিছু দিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য নয়, প্রকৃতির নিয়মে তা চললে মানুষ অনেকদিন বাঁচতে পারবে।
প্রতিনিয়ত কীটনাশক, রাসায়ানিক দ্রব্য বা পেষ্টিসাইড ব্যবহার করাতে আমাদের কৃষিজ রিসোর্সগুলো তার সাবলীল শক্তি হারিয়ে ফেলছে। মাটি, জল, বায়ু, আলো যে স্বকীয়তা নিয়ে কৃষি উৎপাদনে অবদান রাখার কথা, তা না হয়ে এ ক্ষেত্রগুলো আজ ধারাবাহিকভাবেই উর্বরতা বৃদ্ধির নামে শক্তির স্থায়ী শেলগুলো শুধুমাত্র রাসায়ানিক শক্তির কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের বিশাল জলজ সম্পদে সৃষ্ট প্রাণীজ প্রোটিন আমাদের প্রয়োজনের অনেকটাই পূরণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রেও যদি যে কোন জলাশয়, পুকুর বা হাওড়-বাওড়ে মাছ উৎপাদনে কৃত্রিম বা রাসায়ানিক উপযোগ ছাড়া প্রাকৃতিক খাদ্যের যোগানের মাধ্যমে তা করা যায়, তবে মনে হয় আমরা অল্প যোগানে পরিপূর্ণ ও অটুট প্রোটিন এখান থেকে পেতে পারি।
পুকুরে রাসায়নিক সারের ব্যবহারে সুবিধাগুলোর বিপরীত ফল পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রকৃতিগত শক্তি স্থায়ী এবং ভাল। আর কৃত্রিম শক্তির প্রভাবে ভাল ফলাফলের আশা ক্ষীণ। এখানে আরও মনে রাখার কথা হল, বছর বছর রাসায়নিক বা অজৈব সার ব্যবহারের ফলে পুকুরের মাটিতে ও পানিতে অম্লত্ব প্রচুর পরিমাণে বাড়ে। আর এই অম্লত্বকে চুন প্রয়োগ করেও রোধ করা সম্ভব হয় না। তবে জৈব সারের ব্যবহারের জন্য যে অম্লত্বের সৃষ্টি হয় তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। এছাড়া রাসায়নিক বা অজৈব সারের ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক কোন খাদ্য সৃষ্টি হয় না। তবে ক্ষুদ্র উদ্ভিদকণা সৃষ্টি হয় ব্যাপকভাবে। যে জন্য পুকুরের জল সবসময় সবুজ থেকে ঘন সবুজে পরিণত হয়। এই জলে ক্ষুদ্র প্রাণীকণার জন্ম হয় না। এক পর্যায়ে তলদেশে শ্যাওলার জন্ম হয় তা থেকে নিঃসৃত রসের জন্য মাছের জীবনধারণ করা সম্ভব হয় না। এভাবে ব্যাপক শ্যাওলা সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র উদ্ভিদকণার জন্ম নেবার ফলে তলদেশে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে না। যে জন্য এক পর্যায়ে তলদেশের ক্ষুদ্র উদ্ভিদকণা মরে পচে যায়। এভাবে তলদেশে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমতে কমতে শেষ হয়ে যায়। তখন মাছ অক্সিজেনের অভাবে মরে ভেসে ওঠে।
আমরা আমাদের কাঙ্খিত উৎপাদন না পেলেই পরিবেশের পরিবর্তিত ধারাকে দোষারোপ করে থাকি। অথচ রাসায়ানিক সারের ঝক্কিটা গিয়ে ঠেকেছে অনেক দূর পর্যন্ত। এতে আমাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ছাড়াও, এর প্রভাবে বিলুপ্ত বা অস্তিত্বের সংকটে অনেক স্থল ও জলজ প্রাণী, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গসহ বনের পাখিরাও অর্থাৎ এই উপকরণ ব্যবহারের ফলে জীববৈচিত্র ধরে রাখতে পারছি না।
যে বিষয়টি স্পষ্টত তা হল জৈব সার দিয়ে চাষ করে লাভবান হওয়া যেমন সহজ, তেমন চাষের ক্ষেত্রও ভাল থাকে। অপর দিকে রাসায়নিক বা অজৈব সারে পুকুরের মাটি, জলের উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়। পক্ষান্তরে ফলন কম আসে। কেননা মানবজাতির ঘূর্ণায়মাণ জীবনচক্রে রাসায়নিক সারের প্রভাব ক্ষতিকর। প্রতিদিনের আহারের প্রয়োজনের মাধ্যমে যে খাদ্যসামগ্রী আমরা শরীরে গ্রহণ করি, তার মাধ্যমে যদি রাসায়নিক সারে উৎপাদিত কোন সামগ্রী শরীরে প্রবেশ করে, তবে ঐ সারের ক্ষতিকর প্রভাবের আমরাও হয়ে যাই অংশীদার। আমাদের মনে রাখতে হবে মানুষের জীবন নিরাপত্তা এবং সুস্বাস্থ্য রক্ষার বলয় তৈরির জন্য অর্গানিক ফার্মিং এ জৈবসারের ব্যবহার যতটা না সহজ ও সাবলীল, রাসায়ানিক দ্রব্যের ব্যবহারে উৎপাদিত ফসল তার চেয়ে ঢের বেশি হুমকি স্বরূপ। তাই পৃথিবীতে এখন ভেজিট্যাবল ফুড গ্রহণের আন্দোলন ক্রমশ দানা বেঁধে উঠছে এবং তা হতে হচ্ছে যে কোন রাসায়ানিক দ্রব্যের মাধ্যমে উৎপাদনযোগ্য খাদ্য ছাড়া।
লেখক: গৌতম কুমার রায়
এগ্রোবাংলা ডটকম
বিষমুক্ত সবজি চাষ করে কৃষকের বাজিমাত
পদ্ধতিটা খুব একটা কঠিন কিংবা ব্যয়সাধ্য নয়। বিষমুক্ত সবজি চাষ করতে কৃষি বিভাগের বিষমুক্ত থেরাপির পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা ব্যবহার করছেন তাদের নিজস্ব পদ্ধতি। আর এতেই বাজিমাত। কৃষকের কীটনাশক ক্রয় করার টাকা যেমন বেঁচে যাচ্ছে, তেমনি ভোক্তারাও পাচ্ছেন বিষমুক্ত সবজি। প্রথম দিকে কীটনাশকের অপপ্রয়োগ সম্পর্কে উত্তরের কৃষক এতটা সচেতন না হলেও এখন এর ক্ষতিকারক দিক জেনে গেছেন তাঁরা। এ কারণে তাঁরা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে আগ্রহী। বাজারে বিষমুক্ত সবজির দাম বেশি, চাহিদাও বেশি। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা বিষমুক্ত সবজি চাষে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন। গ্রামগঞ্জে গেলে দিগন্তজোড়া মাঠের সবজি ক্ষেতে দেখা যায় এ আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার। মাঠপর্যায়ের কৃষকরাও জানান, এ পদ্ধতি ব্যবহার করে তাঁরা বেশি ফলন পাচ্ছেন।
সাধারণত পোকা দমনে কৃষক সবজি ক্ষেতে ইচ্ছামতো বিষ প্রয়োগ করেন। আর সেই বিষ খেয়ে পোকা মারা পড়ছে। এভাবে ক্ষেতের পোকা দমন হয়। এরপর বাজারে সেসব সবজি যায়। ব্যাপকভাবে বিক্রিও হয়। মানুষ সেসব বিষযুক্ত সবজি কিনে খায় কিন্তু মারা যাচ্ছে না। অথচ বিষ খেয়ে পোকা মরছে-প্রশ্নটি অন্য মানুষের মতো শিক্ষিত কৃষক মামুনের মনেও বার বার দোলা দেয়। কিন্তু তিনি উত্তর মেলাতে পারেন না। তখন মামুন অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে রকমারি সবজিও ফলান। তার সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে মামুন যান স্থানীয় কৃষি অফিসে। সেটা ২০০৫ সালের কথা। তখন সেখান থেকে তাঁকে জানানো হয় কীটনাশক প্রয়োগের কুফল সম্পর্কে। এরপর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীন তিনি বগুড়ার শেরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় বিষমুক্ত পদ্ধতিতে সবজি চাষের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। সেই থেকেই শুরু। মামুন ও তাঁর কৃষি পরিবার বিষমুক্ত পদ্ধতিতে সবজি চাষে নামে। এখনো তা সফলভাবে অব্যাহত রেখেছেন। এবারও এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে ৪৩ শতক জমিতে বেগুন, এক বিঘা করে হাইব্রিড জাতের লাউ ও করলা এবং ২৬ শতক জমিতে মরিচ লাগিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর দেখাদেখি শেরপুর ও ধুনট উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় অনেক কৃষক পরিবারই বিষমুক্ত পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছে। মামুন জানান, বসতভিটা ছাড়া তাঁদের প্রায় ২৪ বিঘা জমি রয়েছে। পুরো জমিতেই বাবা ধান ফলাতেন। এ আয়েই তাঁদের সংসার ও লেখাপড়া চলত। সেই ২০০১ সালের কথা। বাবা আর পারছিলেন না। ধান বিক্রির টাকায় সংসার চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এ অবস্থায় আমরা তিন ভাই বাবার পাশে দাঁড়িয়ে যাই। নেমে পড়ি সবজি চাষে। এর পর থেকে তাঁদের আর পিছু তাকাতে হয়নি। ২০০৫ সাল থেকে তাঁরা বিষমুক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে রকমারি সবজি চাষ করে আসছেন। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে বিঘাখানেক জমিতে হাইব্রিড জাতের করলা লাগিয়েছিলেন। ফলন হয়েছে প্রায় ৮০ মণ। বিক্রি করেছেন ৫০ হাজার টাকার মতো। ব্যয় হয়েছিল মাত্র ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা।
বিষমুক্ত পদ্ধতিতে সবজি চাষ সম্পর্কে মামুন জানান, প্রথমে বিষমুক্ত পদ্ধতি সেক্স ফেরোমন সম্পর্কে উপজেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিই। এরপর ইস্পাহানি বায়োটেক কম্পানির মাধ্যমে আবারও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেগুন ক্ষেতে সারিবদ্ধভাবে দুটি চিকন খুঁটি ব্যবহার করে একটি প্লাস্টিকের কৌটা বসানো হয়েছে। কৌটার এক পাশে একটি ছিদ্রও রাখা হয়েছে। এর নিচের অংশে পানি আর ওপরে সেক্স ফেরোমন ঝুলিয়ে রাখা। আর ওই পানিতে সামান্য হুইলের গুঁড়ো মিশিয়ে দেওয়া আছে। কৌটায় রাখা সেক্স ফেরোমন থেকে স্ত্রী পোকার সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগ মুহূর্তের বিশেষ গন্ধ নির্গত হচ্ছে। এতে পুরুষ পোকা কৌটার সেই ছিদ্র দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে আর কৌটায় রাখা পানিতে ডুবে মরছে। এভাবে পাতা জাদুর বাক্সে পোকা পড়ছে আর মরছে। একই সঙ্গে বিষ প্রয়োগ ছাড়াই ক্ষেতের ফসল তরতর করে বাড়ছে। প্রযুক্তি সম্পর্কে মামুন জানান, প্রতি বিঘায় মাত্র ১৫টির মতো সেক্স ফেরোমন টোপ বা জাদুর বাক্স প্রয়োজন হবে। মাত্র ৩৫ টাকায় একটি প্লাস্টিক কৌটা আর ২৫ টাকার সেক্স ফেরোমন হলেই একেকটি টোপ তৈরি হয়ে যায়। এতে সবজি ক্ষেতে বিষ প্রয়োগের কোনো প্রয়োজন হয় না। ফলে বিষমুক্ত সবজিও পাওয়া যাবে, কৃষকের উৎপাদন খরচও কম হবে। এ পদ্ধতি প্রয়োগে সবজি চাষ করলে উৎপাদন ব্যয় কমে প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফ আলী জানান, আধুনিক ও স্বল্প ব্যয়ের এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে কৃষকের সবজি বিষমুক্ত থাকে। স্বাদে ও গন্ধেও সবজি থাকে স্বাভাবিক। অথচ কীটনাশক ব্যবহারে সবজি বিষযুক্ত হয়ে পড়ে। আর এসব সবজি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। তিনি বিষমুক্ত পদ্ধতিতে সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ দিনদিন বাড়ছে বলে জানান। আর এ কারণেই বিষমুক্ত পদ্ধতিতে এ উপজেলার কৃষকদের সবজিসহ অন্য ফসল চাষের ব্যাপারে নানাভাবে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষকের নিজস্ব পদ্ধতিধুনটের মথুরাপুর ইউনিয়নের আলোয়া গ্রামের আদর্শ কৃষক কায়কোবাদ হোসেন জানান, কৃষি বিভাগের বিষমুক্ত থেরাপি ছাড়াও তাঁরা নিজস্ব কিছু থেরাপি ব্যবহার করেন। এর একটি নেট মশারি দেওয়া। এটা ব্যয়সাধ্য একটি পদ্ধতি হলেও শতভাগ নিরাপদ। এক বিঘা জমিতে মোট ৩০ হাজার টাকার নেট প্রয়োজন হয়। এটা ব্যবহার করা যায় তিনবার। ক্ষেতে মশারি টানানোর মতো করে এটা টানিয়ে দিলে পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে না। সঠিক নিয়মে চাষ করলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতি বিঘায় দেড় লাখ টাকার সবজি পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া অন্য পদ্ধতির মধ্যে তারা ব্যবহার করেন-এক বিঘা জমি সবজি চাষের জন্য যখন উপযোগী করা হয়, তখন মাটিতে দুই কেজি নেপথালিন গুঁড়া, আড়াই কেজি তুঁতে, ১৫ কেজি চুন দিতে হয়। এতে মাটি বিষমুক্ত হয়। সেই মাটিতে সবজি লাগালে গাছও বিষমুক্ত হয়ে বেড়ে ওঠে। কীট আক্রমণের পরিমাণ ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কমে যায়। এক বিঘা জমিতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে খরচ পড়ে দুই হাজার টাকা। তবে জমিতে একটু শ্রম বেশি দিতে হয়।
লেখক: লিমন বাসার, বগুড়া
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।