হরীতকীর ঔষধিগুন
হরীতকী বললেই ত্রিফলার কথা আসে। ত্রিফলা মানে তিনটি ফলের সমাহার। এই তিনটি ফল হলো- আমলকী, হরীতকী ও বহেড়া। তবে তিনটি ফলের মধ্যে হরীতকীর রয়েছে অসাধারণ গুণ। এ ফলটি Combretaceae গোত্রের এক ধরনের পাতাঝরা গাছ। বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia Chebula। আমাদের দেশের সর্বত্র হরীতকী কম-বেশি পাওয়া গেলেও সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকা ও টাঙ্গাইলের বনাঞ্চলে।
হরীতকীর গাছ সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। বৃক্ষটির ব্যাস পরিমাপ করলে দেখা যায়, তা ৫০ থেকে ৮০ সেন্টিমিটারের বেশি হয় না। গাছের ওপরের দিকটা ছাতার মতো এবং ডালপালা ছড়ানো। এর ছাল পুরু এবং অসংখ্য ফাটলযুক্ত। ছাল সাধারণত ধূসর বর্ণের কিংবা প্রায় কালো রঙের। পাতা হয় সাধারণত ডিম্বাকার এবং উপবৃত্তাকার। হরীতকীর ফল শাঁসালো এবং একবীজী। স্বাদ তিতা। এটি ট্যানিন, অ্যামাইনো এসিড, ফ্রুকটোজ ও বিটা সাইটোস্টেরল-সমৃদ্ধ। মজার ব্যাপার হলো, কাঁচা অবস্থায় হরীতকী চিবিয়ে পানি খেলে বেশ মিষ্টি লাগে এবং মুখে রুচি আসে। ফল শক্ত আবরণযুক্ত এমনকি পাকার পরও শক্ত আঁশযুক্ত। ফল সাধারণত ২.৫ থেকে ৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ লম্বাটে এবং দুই দিকে ক্রমাগত সরু। ফলে পাক ধরলে হলুদাভ সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং চিবুলে তিতকুটে লাগে। ফলের কোনো কিছু ফেলনা নয়। বীজের ভেতরের শাঁসও মজা করে খাওয়া যায়। হরীতকী ভেষজ গুণসমৃদ্ধ। আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে ত্রিফলা ব্যবহৃত হয়।
ব্যবহার: হরীতকী দেহের অন্ত্র পরিষ্কার করে এবং একই সঙ্গে দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে। এটা রক্তচাপ ও অন্ত্রের খিঁচুনি কমায়। হৃৎপিণ্ড ও অন্ত্রের অনিয়ম দূর করে। এটা রেচক, কষাকারক, পিচ্ছিলকারক,পরজীবীনাশক, পরিবর্তনসাধক, অন্ত্রের খিঁচুনি রোধক এবং স্নায়বিক শক্তিবর্ধক। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য, স্নায়বিক দুর্বলতা, অবসাদ এবং অধিক ওজনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। হরীতকীতে অ্যানথ্রাকুইনোন থাকার কারণে রেচক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হরীতকী। অ্যালার্জি দূর করতে হরীতকী বিশেষ উপকারী। হরীতকী ফুটিয়ে সেই পানি খেলে অ্যালার্জি কমে যাবে। হরীতকীর গুঁড়া নারিকেল তেলের সঙ্গে ফুটিয়ে মাথায় লাগালে চুল ভালো থাকবে। হরীতকীর গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। গলা ব্যথা বা মুখ ফুলে গেলে হরীতকী পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গার্গল করলে আরাম পাবেন। দাঁতে ব্যথা হলে হরীতকী গুঁড়া লাগান, ব্যথা দূর হবে। রাতে শোয়ার আগে অল্প বিট নুনের সঙ্গে ২ গ্রাম লবঙ্গ বা দারুচিনির সঙ্গে হরীতকীর গুঁড়া মিশিয়ে খান। পেট পরিষ্কার হবে। কলেরা ও আমাশয় নিরাময়ে এর যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে। হরীতকী চূর্ণ ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে পিত্তশূল দূর হয়। বিশেষভাবে পরিশোধনের মাধ্যমে পাইলস, হাঁপানি, চর্ম, ক্ষত, কনজাংটিভাইটিস রোগেও হরীতকী ব্যবহৃত হয়। হরীতকীর কাঠ খুবই শক্ত এবং টেকসই। গৃহনির্মাণ এমনকি সুদৃশ্য আসবাবপত্র তৈরিতে এ কাঠ ব্যবহৃত হয়।
সূত্র: এগ্রোবাংলা
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।