ব্যাঙের চাষ

লাভলজনক ব্যাঙের চাষ

সুবিধা:
» ব্যাঙ চাষে ঝুকি কম, লাভ বেশী
» বিদেশের বাজারে প্রচুর চাহিদা
» ব্যবসায় প্রতিযোগীতা কম
» স্বল্প পুঁজি, স্বল্প জায়গা, অধিক আয়

স্থান নির্বাচন:
হাজা-মজা পুকুর, ডোবা অথবা জলা জমি হলেই চলবে, যেখানে গরমের সময় অন্তত এক ফুট পানি রাখা যাবে। এক থেকে দেড় বিঘা জমি হলেই চলবে। তবে বাহিরের বন্যার জলের প্রকোপ থেকে চাষ এলাকা বাঁচিয়ে রাখতে হবে, যাতে ব্যাঙাচি বেরিয়ে না পড়ে।

পুকুর তৈরি:
আদর্শ খামারের জন্যে দেড়বিঘায় দুটো পুকুর এবং একটা ছোট ডোবা রাখতে হবে। পুকুরের গভীরতা ৩-০ ফুটের বেশী প্রয়োজন নেই। পুকুর দুটো ও ডোবার চারদিকে শুরু করে বাঁশের বেড়া অথবা লোহার নেট অথবা নাইলনের শক্ত জাল একগজ উচু করে ও আধাহাত মাটিতে পুঁতে আটকিয়ে দিতে হবে। মাটিতে পুঁতে দেয়ার আগে আলকাতরা মাখিয়ে দিলে ভালো হয়।

পরিবেশ সৃষ্টি:
পুকুরের চার পাড়েই ছায়া দরকার। কারন ব্যাঙ সব সময় জালে থাকেনা। বিশ্রামের জন্যে ডাঙ্গায় উঠে এসে ঝোপ-ঝাড়ের ছায়াতে বিশ্রাম করে। একারনে জংলা গাছ লাগানো বিশেষ প্রয়োজন। এ জন্যে অনেকে রেডী গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন। কারন রেডী গাছে ছায়া হওয়ার পাশাপাশি পোকামাকড় বেশী আসার প্রবনতা থাকায় ব্যাঙের খাদ্যের যোগান হবে।

সতর্কতা:
» কোন প্রকারেই সাপ ঢুকতে দেয়া যাবে না। সাপ ব্যাঙের প্রধান শত্রু। উপর থেকে চিল বাজপাখী যাতে ব্যাঙ ধরে নিতে অথবা উপদ্রব করতে না পারে।
» পুকুর পাড়ে বা নিকটে খুব বড় গাছ না থাকাই ভালো।
» সাবান পানি, নর্দমার নোংরা পানি ও বিষাক্ত পানি কোন মতেই পুকুরে ঢুকতে দেয়া যাবে না।

চাষ পদ্ধতি:
ব্যাঙ: শুধুমাত্র সবুজ কোলা ব্যাঙ বা সোনা ব্যাঙ চাষের জন্য উপযোগী। বর্ষা শুরু পূর্বেই ১০০টি স্ত্রী ব্যাঙ ও ৫০ টি পুরুষ ব্যাঙ দুটো পুকুরের ঘেরের ভিতর ছাড়তে হবে। এ সংখ্যা বেশীও হতে পারে। তবে স্ত্রী ব্যাঙের চেয়ে পুরুষ ব্যাঙ প্রায় অর্ধেক রাখতে হবে।

খাবার প্রদান:
» ব্যাঙ সাধারনত জীবিত বস্তু খেয়ে থাকে। পোকা-মাকড়, সাপের বাচ্চা, আলগী, কেচোঁ, সাপের ডিম খেয়ে থাকে। কৃত্রিম খাবার হিসাবে ফিশ মিল, চাউলের কুড়াঁ, টিউবিফকস, ময়দা, খৈল ইত্যাদি খেয়ে থাকে। ব্যাঙাচি অবস্থায় এরা উদ্ভিদ জাতীয় খাবার খেতে বেশী পছন্দ করে। ব্যাঙাচিকে ময়দা গুলে ছোট ছোট করে দিলেই খাবে।

» এছাড়া পুকুরে ডিমওয়ালা কিছু চিংড়িকাকঁড়া ছেড়ে দিতে হবে। এদের ডিম এবং বাচ্চা ব্যাঙের খাদ্য হিসাবে পাওয়া যাবে, সাথে সাথে কিছু মাছ ও কাকঁড়াও উৎপন্ন হবে পুকুর থেকে।

» পুকুর গুলোর উপর পানিতে একহাত উপরে ১২ হাত দুরে দুরে একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব অথবা কেরোসিনের হারিকেন জ্বালিয়ে রাখলে পোকা-মাকড় আকৃষ্ট হয়ে ছুটে আসবে।

» টিউবিফকস বা সরু সুতোরমত ফুল কেচোঁর চাষ করা যেতে পারে। এজন্যে পুকুর থেকে কিছুটা দুরে ত্রিশ চল্লিশ হাত লম্বা এবং দু’হাত চওড়া আর তিন হাত গভীর করে একটি নর্দমা কেটে পচাঁ পুকুর বা নর্দমার গাঢ় মাটি তুলে এনে রাখলে এবং সবসময় পানি দিয়ে স্যাতঁ-স্যাতেঁ করে রাখলে এমনিতেই ফুলকেচোঁ জন্ম নিবে। মাঝে মাঝে কিছু ময়লা এবং যাবতীয় পচাঁ জিনিস নর্দমায় দিয়ে পানি ঢেলে দিলেই চলবে। এ নর্দমার কেচোঁ ব্যাঙকে খেতে দেয়া যাবে, একোরিয়ামের দোকানদারদের কাছে এ ধরনের কেচোঁ কিনতে পাওয়া যায়।

প্রজনন:
বর্ষার সাথে সাথে গর্জন, বৃষ্টিপাত ও ২৭-৩০ সে: তাপমাত্রা পেলে স্ত্রী ব্যাঙকে পুরুষ ব্যাঙ আকড়িয়ে ধরে ২-৩ ঘন্টা পানিতে ভাসতে থাকে। এরপর স্ত্রী ব্যাঙ ডিম ছাড়ে এবং পুরুষ ব্যাঙ শুক্রানু ছাড়ে। ডিমগুলো ফিতারমত পানিতে ভাসতে থাকে। ২৪ ঘন্টা পর ডিম থেকে ফুটে ব্যাঙাচি বের হবে। প্রায় ৩৫-৪০ দিনের ভেতর ব্যাঙাচি পুনাঙ্গ ব্যাঙে রুপান্তরিত হয়। একটি স্ত্রী ব্যাঙ প্রাকৃতিক অবস্থায় একসাথে ৩-১০ হাজার এবং খামারে চাষাধীন স্ত্রী ব্যাঙ ১-২ হাজার ডিম দিয়ে থাকে।

পুরুষ ব্যাঙ আলাদা রাখা:
» প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী ব্যাঙের সংগ পেতে পুরুষ ব্যাঙের মধ্যে ভীষন মারামারি হয় তাই প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী ব্যাঙের তুলনায় অর্ধেক পুরুষ ব্যাঙ রাখাই ভাল।
» স্ত্রী ব্যাঙের প্রজননে ব্যাঘাত হয় পুরুষ ব্যাঙের প্রতিযোগীতার জন্য এবং একইসাথে পুরুষ ব্যাঙ মারাত্নকভাবে আহত হতে পারে।

বড় ব্যাঙ আলাদা করা:
স্ত্রী এবং পুরুষ দৈহিক মিলনের সময় দেয়া ডিম ও শুক্রানু ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন দায়িত্ব পালন করেনা। কিন্তু পরবর্তীতে এরাই ডিম ও ব্যাঙাচি ভক্ষন করে থাকে। এই ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ডিম ছাড়া হয়ে গেল সবগুলো ব্যাঙকে আলাদা কে নেয়া উচিত।

কেমন করে আলাদা করবেন:
নিকটে অবস্থিত ডোবায় স্ত্রী ও পুরুষ ব্যাঙ আলাদা ভাবে রাখতে হবে এবং ৪০-৪২ দিন পর পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

পুরুষ ও স্ত্রী ব্যাঙ কি করে চিনবেন:

পুরুষ ব্যাঙ চেরার উপায়:
» নীচের চোয়ালের দুধারে দুটি কাল বর্ণের স্বর থলি আছে।
» নীচের চোয়ালের সামনে দু’হাতের মাঝখানের জায়গা হলুদ রংয়ের থাকে।
» গায়ের পর্দা সাধারনভাবে ছোট হয় এবং আঙ্গুল মোটা হয়।
» গায়ের কব্জী বেশ মোটা হয়।
» প্রজনন ঋতুতে উজ্জল বর্ণ ধারন করে।
» সামনের পায়ের পেছন দিকে চাপ দিলে মুখ থেকে শব্দ করতে থাকে।
» আকারে বড় ও ওজন বেশী হয়।

স্ত্রী ব্যাঙ চেনার উপায়:
» স্বর থলি নেই।
» সব ঋতুতেই চোয়ালের সামনে দু’হাতের মাঝখানের জায়গার রং হালকা ধুসর থাকে।
» গায়ের পর্দা বড় দেখায় এবং আঙ্গুল সরু হয়।
» পায়ের কব্জী বেশ সরু হয়।
» প্রজনন ঋতুতে পেট ফুলে থাকে।
» সামনের পায়ের পেছন দিকে চাপ দিলে কোনরকম শব্দ করতে পারে না বরং পেট ফুলে উঠে এবং কিছু ক্ষেত্রে মলমুত্র ত্যাগ করে।
» আকারে ছোট ও ওজন কম হয়।

বাজারজাত করণ:
ব্যাঙ নয় মাস থেকে ১২ মাসের মধ্যেই বিক্রয় যোগ্য হয়। কিছু ব্যাঙ তুলে বিক্রি করার পর বাকী ব্যাঙ তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠবে। দু’বছর পার হয়ে গেলে সব ব্যাঙ ধরে বিক্রি করে দিতে হবে। কারন এ অবস্থায় ব্যাঙগুলো তিন বছরের বেশী বাচঁবেনা এবং তখন মাংস শক্ত হয়ে যাবে। এতে লোকসান হওয়ার ভয় থাকে।

ব্যাঙের খাওয়ার উপযোগী অংশ:
মানুষের খাবার উপযোগী শুধু ব্যাঙের দু’টো পা। অন্য অংশ মাছ ও পোল্ট্রি খাবার হিসাবে ব্যবহার হতে পারে। মাগুর, পাংগাস, চিতল ও আইড় মাছের উৎকৃষ্ট খাবার। এ ছাড়া ব্যাঙের মাথায় আবস্থিত ‘পিটুইটারী গ্রন্থি’ মাছের প্রজনন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
লেখক: মো: সিরাজুল ইসলাম
এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।