টমেটো চাষ

শীতকালীন টমেটো চাষ

টমেটো পুষ্টি গুণে ভরা এক ধরনের সালাদ সবজি। ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি-র অন্যতম উৎসও বটে। এছাড়া এতে আছে বেটা কেরোটিন নামক এক প্রকার ভিটামিন যা রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে। আরো আছে আমিষ, শর্করা, খনিজ পদার্থ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। ভেষজ গুণসমৃদ্ধ টমেটোতে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে। দৈনিক একটি করে টমেটো খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৬০ ভাগ কমে যায়।

বীজতলা তৈরির সময়: শীতকালীন টমেটো চাষের জন্য কার্তিকের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ (অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ ) পর্যন্ত বীজতলায় বপনের উপযুক্ত সময়।

রোপণের সময় ও চাষ পদ্ধতি: প্রায় সব ধরনের মাটিতেই টমেটো চাষ করা যায়। তবে বেলে দোঁ-আশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। কার্তিকের শেষ সপ্তাহ থেকে অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ (নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ) চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্যন্ত- ২০-২৫ দিনের চারা লাগানো যায়। জমি চাষ সম্পন্ন হলে ভূমি হতে ১০-১৫ সেমি উঁচু বেড তৈরি করে বেডের চারপাশে ড্রেনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। চারা লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে পানি দিতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৫০ সেমি এবং চারা হতে চারার দূরত্ব হবে ৫০ সেমি।

ভাল জাতের টমেটোর নাম: বাহার, বিনা টমেটো-৪, বিনা টমেটো-৫, বারি টে টো-২ বা রতন, বারি টমেটো-৩, ৪, হাইব্রিড এর মধ্যে সবল, মিন্টু, বারি টমেটো-৫ খুব ভাল ফলাফল দিচ্ছে।

জমি তৈরি এবং সার প্রয়োগ: জমিতে তিন চারটি চাষ ও মই দিয়ে সাধারণভাবে জমি তৈরি করতে হয়। শেষ চাষের আগে নির্ধারিত পরিমাণ গোবর সারের অর্ধেক এবং পুরো টিএসপি সার ছিটিয়ে দিয়ে পুনরায় চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর চারা লাগানোর সময় গোড়ায় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া ও পটাশ সমান দু’ভাগ করে চারা লাগানোর ১৫দিন এবং ৩৫দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। একর প্রতি ইউরিয়া ৮০-১০০ কেজি, টিএসপি ৬০-৮০ কেজি, এমপি ৬৮-৯২ কেজি, জিপসাম ২০-৩০ কেজি, বোরন ১-২ কেজি এবং ৪ টন গোবর প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ দেয়া : শুষ্ক মওসুমে চাষ করলে পানি সেচ দেয়া প্রয়োজন। ফসল ও মাটির অবস্থা বিবেচনা করে তিনবার সেচ দেয়া যেতে পারে।

পরিচর্যা: জমির অবস্থা বুঝে হাল্কাভাবে ঝরনা দিয়ে গাছে পানি দিতে হবে। চারা লাগানোর পর আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুর করে দিতে হবে এবং হাল্কাভাবে আগাছাগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। ভালো ফলন ও নিখুঁত ফল পেতে টমেটো গাছে ঠেকনা দেয় প্রয়োজন। পাশাপাশি দুইটি সারির মধ্যে ‘অ’ আকৃতির বাঁশের ফ্রেম তৈরি করে দিলে টমোটোর ফলন বৃদ্ধি পায়। গাছ যাতে অত্যধিক ঝোপালো না হয় সে জন্য প্রয়োজনে অতিরিক্ত ডালপালা ছাঁটাই করা উচিত। প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির সার প্রয়োগের আগে পার্শ্বকুশি ছাঁটাই করে দিতে হয়। এতে পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ কম হয় এবং ফলের আকার ও ওজন বৃদ্ধি পায়। নিড়ানি দিয়ে জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

রোগ ও পোকা-মাকড় দমন: টমেটোর ফল ছিদ্রকারী পোকার জন্য ৫ শতাংশ জমিতে সবিক্রন ৪২৫ ইসি ২০ মিলি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। কোন কোন ক্ষেতে কৃমি রোগ, গোড়া পচা রোগ দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে জমিতে চারা লাগানোর আগে ফুরাডন-৩ জি দিয়ে মাটি শোধন করে নিলে এ সব রোগের প্রকোপ কমে যায়। ঠিকমত পরিচর্যা করলে হেক্টরপ্রতি প্রায় ৭০- ৯০ টন পর্যš- ফলন হতে পারে।

টমেটোর বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ: জমি থেকে পাকা ফল তুলে ঘরে ২-৩ দিন রাখতে হবে যাতে ফলগুলো নরম হয়। নরম হওয়ার পর দু’ভাগে কেটে বীজগুলো একটি শুকনো কাচের অথবা প্লাস্টিকের পাত্রে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এর পর বীজগুলো পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে কাচ বা প্লাস্টিকের পাত্রে মুখ ভালভাবে বন্ধ করে সংরক্ষণ করতে হবে।

ফসল তোলা ও ফলন : জাতভেদে চারা লাগানোর ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে পাকা টমেটো সংগ্রহ আরম্ভ করা যায়। টমেটো পাকা ও কাঁচা উভয় অবস্থাতেই সংগ্রহ করা যায়। প্রতি গাছ থেকে সাত থেকে আটবার টমেটো সংগ্রহ করা যায়। ফলের নিচের দিকে একটু লালচে ভাব দেখা দিলে ফসল সংগ্রহের উপযোগী হয়। জাতভেদে টমেটোর ফলন শতাংশে ৮০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
লেখক: ড. নিয়াজ পাশা, সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার, সার্ক কৃষি কেন্দ্র, ফার্মগেট, ঢাকা

এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।