কাঁঠাল

কাঁঠালের মুকুল ঝরা সমস্যা ও সমাধান

গরীবের আমিষ ও জাতীয় ফল কাঁঠালের মুকুলঝরা সমস্যাটি বড় সমস্যা। এর কারণে কাঁঠাল ঝরে পড়ায় ফলন মারাতক কমে। মুকুল আসার সময় একটু সচেতন হলেই মুকুল ঝরা কমানো যায়। এজন্য যে বিষয় গুলো জানতে হবে-

পুষ্টিহীনতাঃরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিদের ১৭টি পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন। এর যেকোনো একটির অভাব কিংবা পরিমান বেশী হলে কাঁঠালগাছ পুষ্টিহীনতায় ভোগে। কাঁঠাল গাছের পুষ্টি নিশ্চত করতে বর্ষার আগে একবার, বর্ষার পরে একবার এবং মুকুল আসার সময় আরেকবার সার দিতে হয়। এজন্য ঠিক দুপুরে গাছের ছায়া যতটুকু স্থান দখল করে ততটুকু স্থান কুপিয়ে সার ছিটিয়ে সেচ দিতে হয়। এছাড়া সেচ দিতে হয় নিয়মিত।

সারঃ বর্ষার আগে ও পরে প্রতিবারে ষোল বছরের বেশী বয়সের কাঁঠাল গাছের জন্য নব্বই থেকে ১০০ কেজি গোবর, দেড় থেকে দুই কেজি ইউরিয়া, এক থেকে দেড় কেজি করে টিএসপি ও এমপি সার দিতে হয়। মুকুল আসার সময় যেকোনো বয়সের গাছের জন্য ২০০ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সার দিতে হয়। এতে মুকুলঝরা কমে যায়।

সেচঃপ্রত্যেকবার সার ছিটানোর পর সেচ দিতে হয়। শুস্ক মৌসুমে প্রতিদিন নিয়মিত সেচ দিলে গাছের মুকুলঝরা কমে, কাঁঠালের বোঁটা শক্ত হয়, ফল রসালো হয়, রোগবালাইও হয় কম।  ফলন হয় বেশি।
প্রতিদিন সেচ দেওয়ার জন্য কাঁঠাল গাছের গোড়ার চারপাশে মাটি দিয়ে আইল তৈরি করে গোলাকার আইলের মধ্যে পানি ঢেলে সেচ দিতে হয়।

কাঁঠালের পোকামাকড়ঃ কাঠাঁল গাছের বাকলের মাজরা পোকা ও মুকুলের মাজরা পোকা প্রধান। মুকুলের মাজরা পোকা কচি কাগু, ফুলের কুড়ি ও বেড়ে ওঠা ফলের গায়ে গর্ত করে ভেতরে ঢুকে,সেখান থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। এতে আক্রান্ত কান্ড দুর্বল হয়ে পড়ে ও কুঁিড়গুলো শুকিয়ে মরে যেতে থাকে।
বাকলের মাজরা পোকা রাতে গাছের বাকল বা ছাল খায়। খাওয়া অংশ নরম আশেঁর মতো দেখায়।। আশেঁর ভেতর দিয়ে পোকাগুলো কাগেু ছোট ছোট সুড়ঙ্গ তৈরি করে ভেতরে ঢুকে। এতে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। কাঁঠালের উৎপাদনও কম হয়।

পোকামাকড় দমনঃ মুকুলের মাজরা পোকা দমনের জন্য ১০ লিটার পানিতে ৩০ মিলি এবং  বাকলের মাজরা পোকার জন্য ৩৫ মিলি ডায়াজিনন-৬০ ইসি মিশিয়ে ২১ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।

কাঁঠালের রোগঃ ছত্রাকের কারণে কাঁঠালের মুকুল পচাঁ রোগটিই মুকুল ঝরার প্রধান সমস্যা।  আক্রান্ত মুকুল প্রথম দিকে ধূসর দেখায়, পরে মুকুলের গায়ে সরু ও লম্বা সাদা ছত্রাক দেখা যায। আক্রান্ত মুকুল  শেষে মাটিতে ঝরে পড়ে।
গাছে মুকুল আসার পর মুকুল পচাঁ রোগ দেখার সাথে সাথে ডায়থেন এম-৪৫ ওষুধটির চার গ্রাম এক লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

হরমোন প্রয়োগঃ নিয়মিত সেচ, মুকুল আসার পর সার দেওয়া, রোগ ও পোকামাকড় দমনে ওষুধ প্রয়োগের পরও যদি মুকুল ঝরে পড়ে তাহলে গাছে ষ্টিমুলেট নামের হরমোন দিতে  হবে। এতে স্ত্রী মুকুল বেশি টিকে থাকায় মুকুল ঝরে পড়ে না। কাঁঠালের মুকুলঝরা রোধের জন্য ষ্টিমুলেট হরমোনটি প্রতি লিটার পানিতে তিন মিলি মিশিয়ে মুকুলে স্প্রে করে দিতে হবে দুই থেকে তিনবার।
লেখক: সিদ্দিকুর রহমান শাহীন

আমের মুকুল ঝরা রোধে করণীয়

সাধারণত মাঘ-ফাল্গুনে আম গাছে মুকুল-ফুল-গুটি আসে। আমের এ অবস্থায় ছত্রাকজনিত নানা রোগের আক্রমণে উত্পাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এসব ছত্রাকজনিত রোগের একটির নাম শুকনা ক্ষত বা অ্যানথ্রাকনোজ রোগ। মুকুল বা ফুল এ রোগে আক্রান্ত হলে তা কালো হয়ে ঝরে পড়ে। গুটি বা ছোট অবস্থায় আক্রান্ত হলে আমের গায়ে ধূসর বাদামি বা কালো দাগ পড়ে। বেশি আক্রান্ত হলে এগুলোও ঝরে পড়ে। আমের মুকুলে এ রোগের আক্রমণ হলে গাছের সব মুকুল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এ সময় ছত্রাকনাশক স্প্রে করে রোগ দমন করতে হয়। এক্ষেত্রে গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে সিমবুশ ও ০.৫ মিলি লিটার হারে টিল্ট ২৫০ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। আবার আম গুটি বা মটর দানার আকৃতি ধারণ করলে একই মাত্রায় এ বালাই নাশক দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে।

পাউডারি মিলডিউ নামক এক প্রকার ছত্রাকজনিত রোগেও আমের মুকুল-ফুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত অংশে পাউডারের গুঁড়ার মতো এক প্রকার জিনিস দেখা যায়। রোগের ব্যাপক অবস্থায় আক্রান্ত অংশ সাদা পাউডারে ঢেকে যায় এবং ঝরে পড়ে। এ রোগ প্রতিরোধেও গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে থিওভিট ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে একইভাবে স্প্রে করতে হয়। আবার গুটি হলে একই মাত্রায় একইভাবে দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে।

আমের মুকুলের ক্ষতিকারক পোকার মধ্যে মিলিবাগ বা হপার একটি মারাত্মক পোকা। হপার দেখতে সবুজ-বাদামি রঙের হয়ে থাকে। নিমম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় এরা ক্ষতি করে। এ পোকার আক্রমণে ২০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত আমের উত্পাদন কমে যেতে পারে। আম গাছে মুকুল আসার সময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিমম্ফ দেখা যেতে পারে। এরা মুকুলের রস চুষে খায়। এতে মুকুল বিবর্ণ হয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে। এ পোকা যখন মুকুলের রস চুষতে থাকে তখন এদের মলদ্বার দিয়ে প্রচুর আঠালো রস নিঃসরণ হয়। এ রস মুকুলের ফুল ও পাতায় আটকে যায়। এতে শুটি মোল্ড নামক এক প্রকার ছত্রাক জন্মে এবং দ্রুত বংশবিস্তার করে পাতার উপরিভাগ ছেয়ে ফেলে। ফলে পাতা কালো দেখায়।

সবুজ পাতা কালো আস্তরণে ঢাকা থাকে বিধায় সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য উত্পাদন ব্যাহত হয়। ফলে গাছ দুর্বল হয় এবং ফলন কমে যায়।
মারাত্মক এ হপার পোকা দমনে আমের বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আগাছামুক্ত ও খোলামেলা অবস্থায় রাখতে হবে। এছাড়া প্রতি লিটার পানিতে ১.০ মিলি হারে বাসাথ্রিন বা রিপকর্ড বা সিমবুশ ১০ ইসি মিশিয়ে গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। আবার গুটি অবস্থায় ওই ওষুধ আরও একবার স্প্রে করতে হবে। এ পোকার সৃষ্ট ছত্রাক দমনের জন্যও মুকুল আসার পর এবং ফুল ফোটার আগে থিওভিট ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে একইভাবে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া আমের গুটি অবস্থায় পুনরায় স্প্রে করতে হবে।

আম পূর্ণাঙ্গ ফলে রূপ নেয় কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করে। প্রথমে মুকুল, মুকুল থেকে ফুল, ফুল থেকে গুটি এবং গুটি বড় হয়ে আম ফলে রূপ নেয়। প্রতিটি পর্যায়েই আম গাছের বালাই ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। তবে মুকুল আসার আগে এবং পরে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কেননা, মুকুল ঝরে পড়েই আমের উত্পাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়।

এগ্রোবাংলা ডটকম
সুলভে কৃষি পন্য ক্রয়ে আস্থা রাখুন বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ভিত্তিক ইকমার্স ‘এগ্রোবাংলা শপ’ এ।